নেতৃত্বের গুণ অর্জিত হয় ত্যাগ, সংগ্রাম ও অটুট দৃঢ়তার মাধ্যমে। ভিন্স লোম্বার্ডির উক্তি যেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের এক চিত্রনাট্য। তিনি বলেছিলেন, ‘নেতারা জন্মায় না; কঠোর চেষ্টা ও ত্যাগের মাধ্যমে একজন মানুষ নেতায় পরিণত হয়। জীবনে যেকোনো বড় অর্জনের জন্যই এগুলো প্রয়োজন।’
ইতিহাসের পাতায় তাঁর নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে একজন সংগ্রামী ও আপসহীন নেত্রীর প্রতীক হয়ে। দীর্ঘকালের গহীন আঁধার, বন্দিত্ব ও ষড়যন্ত্রের পর তাঁর প্রত্যাবর্তন নতুন দিনের সূর্যের মতোই উদ্ভাসিত। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার যে প্রতিজ্ঞা তিনি নিয়েছিলেন, তা পূরণে তিনি যেন আজ আরও অধিক দৃঢ় ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বিজ্ঞাপন
দেশের মানুষের হৃদয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উত্তরাধিকারী হিসেবে খালেদা জিয়া আজও সমান শ্রদ্ধার জায়গা ধরে রেখেছেন। ফ্যাসিবাদের চাপে দমিয়ে রাখা জাতি আজ তাঁর আগমনে যেন মুক্তির এক নতুন আলো দেখছে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ একচেটিয়া শাসনের লজ্জাজনক বিদায়ে বাংলাদেশে যেন নতুন করে গণতন্ত্রের শ্বাস-প্রশ্বাস বইতে শুরু করেছে। এ পরিবর্তন শুধু ক্ষমতার নয়, এটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। দেশের মানুষ আজ আবার তাদের ভালোবাসার নেত্রীকে ফিরে পেয়েছে, যিনি একসময় তাদের আশ্রয়স্থল হয়েছিলেন। বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার মনে করেছিল প্রিয় নেত্রীকে জেলে বন্দী করে রাখলে, অন্ধকারে লুকিয়ে রাখলেই বুঝি মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যাবে। বিন্দু সে জানতো না যে চাঁদকে কখনোই লুকিয়ে রাখা যায় না, চাঁদ ঠিকই তার সময় করে উঠে যায়, জ্যোৎস্না রাতে আলো দেয়!
স্বৈরাচার এরশাদ থেকে শুরু, হাসিনায় এসে থেমেছে। এর মাঝে বহু বেলা পার হয়ে গেছে। যখন যেখানে এসেছে মুক্তির ডাক সেখানেই নিজেকে সপে দিয়েছেন দেশনেত্রী। ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ শব্দটা এমনিই আসেনি তাঁর নামের সাথে। বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুদীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি, চেয়ে গেছেন মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশে এনেছেন বহুদলীয় গণতন্ত্র আর দেশনেত্রী এনেছেন সংসদীয় গণতন্ত্র। এটাই সেই গণতন্ত্র যার স্বাদ থেকে মানুষ বঞ্চিত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। সেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে দীর্ঘকাল জেলখানার অন্ধকারে বন্দী ছিলেন দেশনেত্রী। নেত্রীকে বন্দী করায় মানুষের ক্ষমতায় বিন্দুমাত্র কমতি ঘটায়নি বরং এই শোককে মানুষ শক্তিতে পরিণত করেছে, মানুষকে এনে দিয়েছে বিজয়ের স্বাদ। যেই বিজয়ের পথে যাওয়ার অদম্য যাত্রার সাহসী যোদ্ধা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি যেন ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য বিনিময়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অপলক তাকিয়ে থাকা, সবকিছুই এক নতুন ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। প্রিয় নেত্রীকে ফিরে পেয়ে মানুষের চোখে-মুখে আনন্দের যে প্রকাশ, তা যেন বহুদিনের জমানো ব্যথার অবসান। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে তাঁর প্রতি যে ভালোবাসা, তা সময়ের চেয়ে প্রবল, অবিনশ্বর। প্রফেসর ড. ইউনূস যখন বলছিলেন, আমরা সৌভাগ্যবান যে, তাঁকে আমরা সম্মান দিতে পেরেছি, তখন যেন চোখ ছলছল করে উঠেছে পুরো দেশের। ঘোর লাগা এক অনুরণনে হারিয়ে গেছে সবাই, হারিয়ে গেছে হৃদয়ের মুর্ছনায়। ভেতর থেকে ডাক দিচ্ছে সবার, তিনি তো আমাদেরই নেত্রী, আমাদের আত্মার একদম কাছের একজন মানুষ!
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার আশ্রয়স্থল হয়ে কাজ করেছেন সর্বদা। তাঁর সবচেয়ে দারুণ গুণ হচ্ছে নিজস্বতা। নিজের মাঝে নিজেকে আলোকিত করার এক অবিকল্প নাম বেগম খালেদা জিয়া। মানুষের ইচ্ছা, স্বপ্নগুলো প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর চোখে। জীবন তাঁর কখনোই পুষ্পসজ্জিত ছিল না। বরং বহু কণ্টক বিছানো পথেই সদর্পে হেঁটেছেন তিনি। বারবার হয়েছেন কারাবন্দী, ভয় দেখানো হয়েছে, হুমকি দেওয়া হয়েছে, বলা হয়েছে বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি জমালেই মুক্তি মিলবে সকল অত্যাচারের। কিন্তু নিজের বুকে সকল কষ্ট তো সহ্য করেছেনই, আরও সহ্য করেছেন নিজের স্নেহধন্য দুই সন্তানের কষ্টও। দেশের মানুষের জন্য নিজের সাথে উৎসর্গ করেছেন সন্তানদের জীবনও। স্বামীকে হারিয়েছেন ঠিক দেশের জন্যই, মানুষের জন্যই। ছোট সন্তানকে হারিয়েছেন, বড় সন্তানের থেকে সহস্র ক্রোশ দূরে জীবন কাটিয়েছেন। শত বিপদেও কাছে পাননি সন্তানকে। কাছে যে চাইলেই যেতে পারতেন, হয়তো ছাড়তে হতো দেশের মায়া। কোটি সন্তানের জননী হয়ে ছাড়তে পারেননি দেশ মাতৃকাকে। শত সংগ্রামের কণ্টক পথ মাড়িয়ে এগিয়ে গেছেন সদর্পে।
ইতিহাস দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম বারবার স্মরণ করবে একজন সংগ্রামী নেত্রী হিসেবে। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নন; তিনি এক আলোকবর্তিকা, যাঁর আলোয় বাংলাদেশ খুঁজে পেয়েছে গণতন্ত্রের সঠিক পথ। তাঁর প্রত্যাবর্তন শুধু একটি ঘটনা নয়, এটি একটি জাতির জেগে ওঠা, স্বাধীনতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আজকের এই পুনরুত্থান মানুষের জন্য এক নতুন প্রভাত, যেখানে তারা আবার প্রাণ খুলে হাসতে চায়, বাঁচতে চায়, স্বপ্ন দেখতে চায়।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক