বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয় শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানাতে এবং তাদের অমূল্য অবদানের স্বীকৃতি দিতে। ১৯৯৪ সাল থেকে ইউনেস্কোর উদ্যোগে ৫ অক্টোবর তারিখটি শিক্ষকদের জন্য বিশেষভাবে সংরক্ষিত। শিক্ষকরা হলেন একটি জাতির মেরুদণ্ড; তাদের প্রচেষ্টাই শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও নৈতিকতার ভিত্তি গড়ে দেয়। শিক্ষকতা পেশার মধ্যে সৃজনশীলতা, নৈতিকতা এবং দক্ষতা না থাকলে কোনো সমাজ বা জাতি তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। আজকের শিক্ষার্থী আগামী দিনের নেতা এবং তারা কেমনভাবে গড়ে উঠছে, সেটি শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব ও শিক্ষাদানের মানের ওপর নির্ভর করে।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকদের সম্মানিত করার পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার মানোন্নয়ন। শিক্ষাব্যবস্থা যদি মানসম্পন্ন না হয়, তবে সেই সমাজের সার্বিক উন্নতি সম্ভব নয়। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, এবং পাঠদানের গুণগত মান বৃদ্ধি। বিশ্বজুড়ে যে দেশগুলো শিক্ষার গুণগত মানে সেরা অবস্থানে রয়েছে, তাদের থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। বিশেষ করে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের মতো দেশগুলোর উদাহরণ উল্লেখযোগ্য, যেখানে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা অনেক বেশি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
বর্তমান বিশ্বে শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এই আলোচনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, বিশেষ করে যখন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয়টি সামনে আসে। একটি সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ হলেন শিক্ষক। শিক্ষকেরা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান দান করেন না, বরং নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার শিক্ষা দেন। কিন্তু আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষকদের নৈতিক অবনতি এবং শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার অবক্ষয় একটি মারাত্মক সংকট তৈরি করেছে।
শিক্ষকদের ভূমিকা কেবল শিক্ষাদানে সীমাবদ্ধ নয়; তারা শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও চারিত্রিক গঠনের জন্যও দায়িত্বশীল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষকের মধ্যে এই নৈতিক দায়িত্ববোধের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা শুধুমাত্র পাঠ্যক্রমের সীমিত জ্ঞানের মধ্যে আবদ্ধ। নিয়মিত পেশাগত উন্নয়নে মনোনিবেশ না করায় শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। উপরন্তু, কিছু শিক্ষকের রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। এতে শিক্ষাক্ষেত্রে শৃঙ্খলার অভাব এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের কর্তব্য পালনের ত্রুটি দেখা দেয়।
শিক্ষকগণ যদি নৈতিকতার প্রতি উদাসীন হন, তবে শিক্ষার্থীরা কীভাবে সঠিক দিকনির্দেশনা পাবে? শিক্ষকদের এই নৈতিক অবক্ষয়ের ফলে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান প্রদানই যথেষ্ট নয়; শিক্ষার্থীদের জীবনের সত্যিকারের শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের মধ্যে থাকা উচিত সৎ, দায়িত্বশীল, এবং নৈতিক মানসিকতা।
শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার অবক্ষয় সমাজের জন্য একটি ভয়ংকর চিত্র। সামাজিক দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতা, শৃঙ্খলা এবং ন্যায়বিচারের মতো গুণাবলী আজকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কমে যাচ্ছে। সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয়, মিডিয়া ও প্রযুক্তির অযৌক্তিক ব্যবহার, এবং শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। বিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা ও আচরণগত শৃঙ্খলা ক্রমশ নিম্নগামী হয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এই সংকট থেকে মুক্তির জন্য শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন অপরিহার্য। শিক্ষকদের নৈতিক প্রশিক্ষণ এবং নিয়মিত পেশাগত উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য নৈতিক ও মূল্যবোধের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। নৈতিক শিক্ষা ছাড়া কেবল সনদপ্রাপ্তি জাতিকে গড়ে তুলতে পারে না। প্রযুক্তি ও আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের পাশাপাশি তাদের নৈতিক উন্নয়নের দিকেও নজর দিতে হবে।
শিক্ষকদের নৈতিক ও পেশাগত উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের জন্য নৈতিক শিক্ষার বাধ্যবাধকতা, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলার পুনঃপ্রতিষ্ঠা—এসবই শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নের প্রধান উপায়। এর পাশাপাশি, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
মায়ের চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ নেই, কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানকারীদেরও আমাদের মনে রাখতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের শুরু হতে পারে পুঁথিগত বিদ্যার ধরন ও পদ্ধতির পরিবর্তন, বিদ্যাকে বইয়ের মধ্যে বন্দী না করে ডিজিটালাইজেশন করা, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লার্নিং বাই ডুয়িং কনসেপ্টের আওতায় আনা, এবং পড়ালেখাকে আনন্দময় করে গড়ে তোলা। শিক্ষার্থীরা যদি তাদের পছন্দের বিষয়ে শেখার সুযোগ পায়, তবে সাফল্য আসবেই। বর্তমান সময়ে, শিল্প ও কলকারখানাগুলো প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যথাযথ শিক্ষার অভাব অনুভব করছে, কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পুরোনো পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করছে।
শিক্ষকদের স্লো মোশনের লাইফস্টাইল সমাজে অস্থিরতার সৃষ্টি করছে। আমরা অনেক সময় বলি, শিক্ষকেরা জাতির কারিগর, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের শিক্ষাদান মানসম্মত নয়, যা দুর্নীতি, অন্যায়, ও অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরছে।
উন্নত মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকেরা শিক্ষা প্রদানের সঙ্গে গবেষণা করছেন, নতুন চিন্তাধারার আবির্ভাব ঘটিয়ে মানসম্মত শিক্ষাদান করছেন।
অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী, ডিমান্ড, সাপ্লাই ও ডেলিভারি যদি ঠিকমত না হয়, তাহলে শিক্ষাঙ্গনের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে জাতির অধঃপতন ঘটে। যে দেশে সব সেক্টর দুর্নীতিতে ভরা, সেখানকার শিক্ষকদের অবস্থান কী হবে? আমরা কি ভাবছি? নাকি শুধু পুলিশের ওপর সব দোষ চাপিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছি?
এখন প্রশ্ন হলো, জাতির প্রশিক্ষণের জন্য দায়ী কে? শিশুদের প্রথমে মা-বাবা, পরে শিক্ষকদের উপর দায়িত্ব বর্তায়। ভালো মা-বাবা এবং ভালো শিক্ষক না হলে সুশিক্ষা পাওয়া যায় না। আমরা এখনো জানি না, শিক্ষা এবং সুশিক্ষা কী? আমাদের কী পড়ানো হচ্ছে? কেন পড়ানো হচ্ছে? শিক্ষার উদ্দেশ্য কী? এসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
শিশুদের ১ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যকার সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মানসম্পন্ন পরিবেশে শিক্ষাদান করা প্রয়োজন। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যায়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষকের সার্বিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যেখানে শিখন ও শেখার প্রক্রিয়া চলবে। দুর্নীতি বা অনিয়ম যেন শিক্ষা প্রশাসন ও শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত না করতে পারে। শিক্ষকদের কড়া নজরদারি প্রয়োজন, যাতে তাঁরা গণতান্ত্রিক ও সৃজনশীল নাগরিক হিসেবে নিরাপদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
এ বিষয়ে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন—বাংলাদেশের শিশুবিদ্যালয়ে এমন শিক্ষক বা শিক্ষাপদ্ধতি কি আছে, যেখানে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে? এমন শিক্ষক কি তৈরি হচ্ছে, যিনি ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থাকে মোকাবিলা করতে পারবেন? আমরা যেভাবে আছি, ঠিক সেভাবেই থাকব? নাকি নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষার মাধ্যমে কেবল বাংলাদেশি নয়, গোটা বিশ্বের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলব? শিক্ষার্থীদের অভিযাত্রা কি নির্বিঘ্নে শিক্ষা নামক বৈতরণি পাড়ি দিতে পারবে?
আমরা জানি, শিক্ষকদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দরকার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশে সুশিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের পরবর্তী ফলোআপ খুবই জরুরি।
1. শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা: শিক্ষক দিবসের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকদের অবদানের গুরুত্ব তুলে ধরা। যেমন: এই বিশেষ দিনে, আমরা আমাদের সকল শিক্ষকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, যারা আমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ার জন্য নিরলস পরিশ্রম করেন।
2. প্রেরণা ও উদ্দীপনা: শিক্ষকদের কাজকে একটি প্রেরণাদায়ক ও উদ্দীপনাময় পেশা হিসেবে উল্লেখ করা। যেমন: শিক্ষকরা শুধু জ্ঞান দেন না, বরং সমাজের ভবিষ্যৎকে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রেরণা দেন।
3. সংহতি ও একতা: এই শিক্ষক দিবসে, আমরা সবাই মিলে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করি এবং তাদের কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি, কারণ তারা আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
4. আশা ও প্রত্যাশা: আশা করি, আগামী দিনে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে এবং আমাদের শিক্ষকরা আরও সমর্থন পাবেন, যাতে তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেন।
শিক্ষকদের ওপর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক চাপ না দিয়ে তাদের শিক্ষাদানে মনোনিবেশ করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। এর ফলে তারা সৃজনশীলভাবে শিক্ষাদানের কাজে যুক্ত হতে পারবেন এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের স্থান দিতে পারবেন।
শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য পাঠ্যক্রমের আধুনিকীকরণ, দক্ষ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এবং শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এর সঙ্গে, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং সুযোগ প্রদান করা জরুরি। দেশের সকল স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে।
একই সঙ্গে, অভিভাবক ও সমাজের সকল স্তরের মানুষেরও উচিত শিক্ষার উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা। শিক্ষকদের উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ—এই তিনটি স্তম্ভে যদি আমরা সমন্বয় সাধন করতে পারি, তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নতির পথে নিতে হলে সবার অংশগ্রহণ, সদিচ্ছা এবং উদ্যোগ প্রয়োজন। আমাদের উচিত নতুন প্রজন্মকে একটি সুশিক্ষিত, সৃজনশীল, ও নৈতিক সমাজের জন্য গড়ে তোলা, যাতে তারা আগামী দিনের নেতৃত্ব দিতে পারে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এবং সমাজের প্রতিটি সদস্য যদি একত্রে কাজ করে, তবে কেবল তখনই আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাবো এবং একটি উন্নত ও সুশিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তোলা, যা বিশ্বমানের এবং প্রযুক্তিগত ও নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। সুশিক্ষিত জাতি গড়তে হলে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও প্রশিক্ষণের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, আর সেই মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজন দক্ষ, নিবেদিতপ্রাণ এবং মানসম্পন্ন শিক্ষকদের। বিশ্ব শিক্ষক দিবসের এই প্রেক্ষাপটে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষকদের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, যা আমাদের দেশকে সুশিক্ষিত ও সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবে গড়ে তুলবে।
অবশেষে, আমার বড় ভাই অধ্যাপক মান্নান মৃধা সুইডেনের কে টি এইচ রয়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন শিক্ষক। বাংলাদেশে তাঁর মতো অনেক শিক্ষক রয়েছেন, তাই তো মনেপ্রাণে দোলা দিয়েছে, একজন আদর্শ এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত সুশিক্ষকই করতে পারে বাংলাকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে। এই স্বপ্নকে সত্য করতে হলে সব গুণসম্পন্ন শিক্ষকের সমন্বয় ঘটাতে হবে, সেই সঙ্গে দেশের পরিকাঠামোকে মজবুত করতে হবে। এ অবস্থায় শিশুশিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত নিবিড় নজরদারি চালু রাখতে হবে। আমার বড় ভাই আজীবন বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর শিক্ষাজীবন শেষ, এখন তাঁর অবসরের সময়। জীবনের এ সময় আর দশজনের মতো নাতি-নাতনির সঙ্গে খেলা বা ঘোরাফেরা করে সময় কাটাবেন। অথচ তিনি তা না করে করছেন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা।
ইট তৈরি করতে যেমন ডাইস দরকার, ঠিক প্রকৃত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা পেতে দরকার এই ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সের ছেলেমেয়ের মধ্যে শেখার জন্য শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া। শিক্ষার মধ্যেও যে চমৎকার মজা রয়েছে, সেটি ধরিয়ে দেওয়া তাদের মনপ্রাণ, চিন্তাভাবনা ও ধ্যানে। তিনি চেষ্টা করছেন, মুকুলেই যেন তরুণ প্রজন্ম ঝরে না যায়। তিনি শেখাচ্ছেন কীভাবে শিখতে হয়। যদি ড. মান্নান মৃধার প্রজেক্ট কৃতকার্য হয়, তবে ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষাধারী শিক্ষক খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয় নয়, যেতে হবে প্রাইমারি স্কুল লেভেলে।
কারণ, শিক্ষার শুরুটা ওখানেই। ভিত্তি যদি ভালো না হয়, তাহলে বিল্ডিং যত তলারই হোক না কেন, তা যেমন ভেঙে পড়বে; ঠিক যত উঁচু স্তরের শিক্ষিত শিক্ষক পরবর্তী স্তরে নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন, ভালো প্রোডাক্ট কখনো পাওয়া সম্ভব হয়নি, হবেও না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জেলহাজত না বানিয়ে বরং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলুন, যেখানে পরস্পর জানবে, শিখবে ও শেখাবে। আমি মনেপ্রাণে লাখো তরুণ ও সৃজনশীল আদর্শ শিক্ষক দেখতে চাই সারা বাংলাদেশে, সেই সঙ্গে হাজার সালাম জানাই বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সব শিক্ষককে।
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]