আড়াই বছর বাকি থাকতেই এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে বিদায় নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্যান্য কমিশনাররা। শেষ কর্মদিবসের এই সংবাদ সম্মেলনকে সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘সৌজন্য বিনিময়’ হিসেবে অভিহিত করেন সিইসি। সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে কিছু ‘মান-কি-বাত’ করেন। একই সঙ্গে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ নিয়ে জাতিকে দেন লিখিত নির্দেশনা। তার অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে একদলীয় হয়েছে- সেটিও স্বীকার করেন। তবে দায় না নিয়ে এটিকে আমাদের নির্বাচনিক সংস্কৃতির চিরাচরিত সিলসিলা বলে নিজেদের কৃতকর্মকে ‘জাস্টিফাই’ করেন বা নিজেদের রেহায় দেওয়ার প্রচেষ্টা চালান। অবস্থাদৃষ্টে মনে হলো তিনি মনে হয় বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি সম্পর্কে আগে থেকে অবগত ছিলেন না। কমিশনে বসেই বিষয়টি বুঝেছেন। যা বিশ্বাস করা শুধু কঠিনই না, হাস্যকরও বটে। বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের সুযোগ না দিয়েই অবশ্য চলে যান কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে আগেই থেকেই বাইরে অবস্থান করা বিক্ষুব্ধ মানুষ কয়েকজন কমিশনারের গাড়ি উদ্দেশ্য করে ধাওয়া দেন। করেন জুতা নিক্ষেপও (কালের কণ্ঠ, ৫ সেপ্টেম্বর)। এই ধাওয়া খাওয়া এবং জুতা নিক্ষেপের ঘটনা দুঃখজনক হলেও অনিবার্য ছিল এই কমিশনের কপালে। অনেকটা যেমন কর্ম, তেমন ফলের মতো!
বিদায়ের আগে হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যমান ব্যবস্থায়, আমাদের বিশ্বাস, কেবল কমিশনের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ, কালো টাকা ও পেশিশক্তি-বিবর্জিত এবং প্রশাসন-পুলিশের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। নির্বাচন পদ্ধতিতে দুর্ভেদ্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আচরণে এবং বিশেষত প্রার্থীদের আচরণে পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।’ একই সঙ্গে তিনি জাতিকে পরামর্শ দেন, ‘বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সমরূপতার কারণে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (দলীয় ভিত্তিক) নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ ক্ষেত্র হতে পারে। সেই সঙ্গে নির্বাচন চার বা আটটি পর্বে, প্রতিটি পর্বের মধ্যে ৩/৫ দিনের বিরতি রেখে, অনুষ্ঠান করা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে সহজ ও সহায়ক হতে পারে। আমাদের প্রবর্তিত অনলাইনে নমিনেশন দাখিল অব্যাহত রেখে নির্বাচন প্রতিক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার অপটিমাইজ করতে পারলে উত্তম হবে। অধিকন্তু প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলে উদ্দেশ্য অর্জন আরও সুনিশ্চিত হতে পারে।’ বিদায় বেলায় সিইসির এই পরামর্শমূলক নীতিকথা শুনে সেই পুরনো প্রবাদ ‘চুরের মার বড় গলা’ কথাটি মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন জাগে, শুধু পদত্যাগ আর ধাওয়া-জুতা খাওয়াতেই এই কমিশনের ‘আদি’ পাপ মিটবে? আমি-ডামি নির্বাচন আয়োজনের দায়ে আউয়াল সাহেবসহ গোটা কমিশনের বিচার হবে না?
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের নির্বাচন পরিচালনায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন আউয়াল কমিশন। তারপর দেশের নির্বাচনের পরিণতি কী হয়েছিল, তার বৃত্তান্ত দেশবাসীর জানা। সবচেয়ে হতাশার কথা, নির্বাচনী ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে আউয়াল সাহেব এখন নির্বাচন নিয়ে দেশবাসীকে উপদেশ দিচ্ছেন। এ যেন ভূতের মুখে রাম রাম! সিইসি পদে থাকা অবস্থায় তিনি এই সদুপদেশগুলো মনে রাখলে আজকের বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারতো। অথচ তখন একতরফা ওই নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রধান সহযোগী হয়েছিলেন আউয়াল সাহেবেরা।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে এখন একতরফা বললেও তখন কিন্তু এই আউয়াল সাহেবই জাতির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘সরকারের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে’ (বাংলানিউজ২৪.কম, ৭ জানুয়ারি ২০২৪)। কিন্তু সেটাই শেষ নয়। এখন তিনি প্রতিটি নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলে উদ্দেশ্য অর্জন আরও সুনিশ্চিত হতে পারে বলছেন। অথচ ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের চাপ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব, সেটা আমরা আগেও বলেছি। কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা দেখেছি দলীয় সরকারের অধীনে, সরকারের যে পলিটিকাল উইল অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার, সেটা ছিল। সেই সাথে সরকারের তরফ থেকে আন্তরিকতা ছিল। নিশ্চয়তা বিধান করার কথা ছিল, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যে সহযোগিতা করার কথা ছিল, সে সহযোগিতা পেয়েছিলাম বলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সহজ হয়েছে, আমরা করতে পেরেছি।’ নীতিহীন আউয়াল সাহেবের মুনাফেকির স্তর এখান থেকেও কিছুটা অনুমান করা যায়।
জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা এই আউয়াল সাহেব বার বার আহ্বান জানাচ্ছিল বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে। ভাগ্যিস, দলটি সাড়া দেয়নি। কমিশনসহ কথিত বুদ্ধিজীবীদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নিলে আজকে দলটির ভাগ্যে এমন সুদিন আসতো না। নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে সেই আউয়াল সাহেবই এখন জাতিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ দেখাচ্ছেন। পত্রিকায় কলাম লিখছেন। আইন শেখাচ্ছেন। সংবিধানের ধারাবাহিকতা বুঝাচ্ছেন। কিন্তু নিজে দায়িত্বে থাকতে এই সদুপদেশগুলোর একটিও মানেননি। মানার প্রয়াসও ছিল না।
বস্তুত এই কমিশন নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধিত বেশির ভাগ দল তাদের প্রথম থেকেই মেনে নেয়নি। ইসির সংলাপের আহ্বানও বিএনপিসহ সমমনারা প্রত্যাখ্যান করে। তারা নির্বাচনও বর্জন করে। এ বিতর্ক ছাড়াও আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট গুরুতর কিছু অভিযোগ আছে।
বিজ্ঞাপন
একটি অভিযোগ হচ্ছে আউয়াল সাহেবদের নিয়োগ নিয়ে। বিশ্লেষকদের মতে, আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়, যা ছিল স্পষ্টতই কারসাজিমূলক অপকর্ম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ অনুযায়ী রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের সুপারিশে ওই আইনের অধীনে গঠিত তৎকালীন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (পরে প্রধান বিচারপতি) ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি স্বচ্ছতার সঙ্গে বাছাই করে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য ১০ জন ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার কথা। কিন্তু বাছাই কমিটি তার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেয়, যার ফলে যে কোনো ব্যক্তি নিজের নামসহ যে কোনো ব্যক্তির নাম কমিশনে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা ছিল আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কতজন আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তা জানতে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সর্বত প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। মন্ত্রিপরিষদের কাছে তথ্য অধিকার আইনের অধীনে দরখাস্ত করেও কে কার নাম প্রস্তাব করেছে, গোপনীয়তার অজুহাতে তা জানানো হয়নি। পরবর্তীতে দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য কমিশনে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। কমিশন অজুহাত দিয়েছে যে, তথ্য দিলে ব্যক্তির গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হবে। কিন্তু যারা নাম প্রস্তাব করেছে, তারা রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন, ব্যক্তি নয়। শেষ পর্যন্ত কে কার নাম প্রস্তাব করেছে, তা জানার জন্য আদালতের আশ্রয় নিয়ে এখনও প্রতিকারের অপেক্ষায় রয়েছেন ড. মজুমদার। প্রশ্ন হচ্ছে, সাবেক আইন সচিব হাবিবুল আউয়াল কি তাদের নিয়োগটি যে আইনানুগ হয়নি, তা অনুধাবন করতে পারেননি? এ ছাড়া সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেনের সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তিও ছিল চোখে পড়ার মতো। কারণ তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
দ্বিতীয় অভিযোগটি হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের আগে নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলসমূহকে নিবন্ধন দেয়া, যেসব দলের নাম কেউ আগে শুনেনি। নিবন্ধন পেতে ৯৩টি দল আবেদন করেছিল আউয়াল কমিশনে। তাদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১২টি দলকে বাছাই করেছিল নির্বাচন কমিশন। এসব দলের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামের দুটি নামসর্বস্ব দলকে নিবন্ধন দেয়। বিপরীতে নিয়মানুযায়ী সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মাঠের সক্রিয় দলসমূহ নিবন্ধন পায়নি (বিবিসি বাংলা, ১৮ জুলাই ২০২৩)। যারা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলের পর একই কমিশন থেকে নিবন্ধন পেয়েছে। এমন কাণ্ডের কী ব্যাখ্যা আছে আউয়াল কমিশনের কাছে?
আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হচ্ছে বিতর্কিত বিভিন্ন সংস্থাকে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে অনুমোদন দেয়া। কোনো কার্যক্রম নেই, এমন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন দেয় ইসি। নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত মোট ৬৮টি সংস্থার মধ্যে কয়েকটির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। নির্বাচিত বেশির ভাগ সংস্থারই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যাপ্ত লোকবল ছিল না (প্রথম আলো, ১১ আগস্ট, ২০২৩)।
কমিশনের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি হয় আইনে নিজেদের ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব দেয়া নিয়ে। আগের আরপিওর ৯১ (ক) ধারা অনুযায়ী নির্বাচনে অনিয়ম হলে ইসি যে কোনো ভোটকেন্দ্রের বা পুরো নির্বাচন এলাকার ভোট গ্রহণ এবং সকল নির্বাচনী কার্যক্রম যে কোনো পর্যায়ে বন্ধ করতে পারে। এ ধারার ক্ষমতাবলে ইসি নির্বাচন এবং ফল বাতিল করতে পারে। ভোট গ্রহণের আগে নির্বাচন বন্ধ করতে পারে। এখন এ ধারাই যদি না থাকে তাহলে ইসির কথা কে শুনবে? কিন্তু ইসি নিজে উপযাচক হয়ে আগ বাড়িয়ে সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞই তখন এটিকে অভিহিত করেছিলেন সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের লঙ্ঘন হিসেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯৯ সালে নূর হোসেন বনাম নজরুল ইসলাম মামলায় আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন, অনিয়ম হলে ফলাফল বাতিল করে পুনঃভোটের আদেশ দিতে পারবে নির্বাচন কমিশন। সংশোধিত আরপিওতে এ ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এটি সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের মূল ধারণা ও চেতনারও পরিপন্থী (সমকাল, ৫ জুলাই ২০২৩)।
আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে ২৮ অক্টোবর বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা উস্কানিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংস আক্রমণ এবং তার পরের ঘটনাবলি নিয়ে কমিশনের নীরবতা। ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর অনেক গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বসহ প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে অতীতের গায়েবি মামলার শুনানি করে ১৫০০’র মত বিএনপি নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া হয় যেন তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে। সেই সময়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাদের কিছুই করার নেই, যদিও নির্বাচন কমিশনেরই দায়িত্ব নির্বাচনের আগে সমতল ক্ষেত্র তৈরি করা।
আউয়াল কমিশনের আরেকটি গর্হিত অপরাধ ছিল ইভিএম ব্যবহার নিয়ে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া মত পাল্টানো। ইসির সঙ্গে ২০২২ সালের জুলাই মাসে সংলাপে অংশ নেওয়া ২৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সরাসরি ইভিএমের পক্ষে বলেছিল মাত্র চারটি দল। কিন্তু কর্মপরিকল্পনায় ইসি বলেছে, পক্ষে ১৭টি দল। যে ১৭টি দলকে ইভিএমের পক্ষে বলছে ইসি, তার মধ্যে তিনটি দল সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে। একটি দল ইভিএম নিয়ে মতামত দেয়নি। ৯টি দল ইভিএম নিয়ে বিভিন্ন শর্তের কথা বলেছে (প্রথম আলো, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২)।
এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তনেরও অভিযোগ উঠে এই কমিশনের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের দিন সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে কম ভোটারের উপস্থিতি থাকার পরেও ফলাফলে ৪১ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়ার তথ্য অনেক নির্বাচন বিশ্লেষককে অবাক করেছে। তারা তখনই প্রশ্ন তুলেছেন, প্রথম সাত ঘণ্টায় যেখানে ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে, সেখানে শেষ ঘণ্টায় কীভাবে আরও ১৪ শতাংশের মতো ভোট পড়লো (বিবিসি বাংলা, ১০ জানুয়ারি ২০২৪)? কিন্তু ভোটের এই হারকে অস্বাভাবিক মনে করেনি আউয়াল কমিশন।
বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এতসব হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটিয়ে সাংবাদিক ডেকে জাতিকে নির্বাচন নিয়ে নসিহত করা শুধু ঔদ্ধত্যমূলকই নয়, একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিগত দিনগুলোতে সক্রিয় থাকা ব্যক্তিদের গালে চপেটাঘাতেরও সামিল। একতরফা নির্বাচন আয়োজনের দায়ে যাদের জেলে থাকার কথা, তাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকার নেই। এই আউয়াল সাহেব কীভাবে এই ধৃষ্টতা দেখাতে সাহস করলেন, এবং তার দেয়া পরামর্শসমূহের নেপথ্যের উদ্দেশ্যও বের করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ২০১৮ সালের নৈশ নির্বাচন আয়োজনের দায়ে কে এম নূরুল হুদার কমিশন এবং ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ১৫৩ প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করার দায়ে রকিবুদ্দিন কমিশনের লোকদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই জরুরি ভিত্তিতে তাদের দায়বদ্ধ করা দরকার। কেননা, এদের দৃশ্যমান বিচার না হলে আমাদের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সম্ভাবনা থেকেই যাবে।
লেখক: মো. অলিউল ইসলাম, সাংবাদিক ও কেন্দ্রীয় সহযোগী সমন্বয়কারী, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
এমএইচটি

