বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশন ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত, যার ভূমিকা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে পূর্ণতা দান এবং দেশের উন্নতি ও অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে অপরিসীম, আজ তা হয়ে উঠেছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের ক্রীড়নক। এই খাতে ভারতের আগ্রাসী নীতি এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দালালদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) তিনটি বেসরকারি কোম্পানিকে ভারতের সুপারিশে এবং ভারতীয় ঠিকাদার কোম্পানিগুলোকে সার্বিক সহযোগিতা দানের স্বার্থে সাবমেরিন ক্যাবল পরিচালনার লাইসেন্স প্রদান করেছে, যার পেছনে রয়েছে চরম দুর্নীতি ও দলীয় স্বজনপ্রীতির ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র।
লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানির মালিকদের পরিচয় ও প্রভাব
বিজ্ঞাপন
১. সামিট কমিউনিকেশন: এই কোম্পানির মালিক আজিজ খান এবং ফরিদ খান ভ্রাতৃদয়। ফরিদ খান, যিনি হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতিবেশী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করেন। কথিত আছে, ফরিদ খানের সঙ্গে প্রতিবেশীর সম্পর্কের সূত্র ধরে তারই ভাতিজি আজিজ খানের মেয়ে আয়েশা আজিজ খানের সঙ্গে জয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এমনও গুঞ্জন শোনা যায় যে আয়েশা আজিজের সঙ্গে হাসিনা পুত্র জয় গোপনে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ। এই পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা কোম্পানিটিকে লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
২. সিডিনেট: সিডিনেট কোম্পানির মূল মালিক নাফিজ শারাফাত এবং মোহাম্মদ এ আরাফাত, যিনি পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আরাফাত, হাসিনা পুত্র ও হাসিনার সরকারের তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত। জয়ের সঙ্গে আরাফাতের এই ঘনিষ্ঠতা আরাফাতের সংসদ সদস্য হওয়া, তথ্য প্রতিমন্ত্রী হওয়া এবং এই কোম্পানির লাইসেন্স পেতে সাহায্য করেছে। নাফিজ শারাফাত আর্থিক বিনিয়োগ করে কোম্পানির ছোট একটি অংশ আরাফাতকে দালালি করার জন্য দিয়েছেন।
৩. মেটাকোর: মেটাকোরের মালিক প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ছেলে এবং সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মাদ শফিউল হক। এই কোম্পানিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের ছেলে রেজোয়ান আহমেদ এমপি’র শেয়ার ছিল, যা লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়ায় সহায়ক হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার অনুগত সেনাপ্রধানকে পুরস্কৃত করতে এই কোম্পানির মাধ্যমে দুর্নীতির পথ সুগম করেছেন।
সাবমেরিন ক্যাবল লাইসেন্স প্রদানের প্রকৃত উদ্দেশ্য
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি, যা একটি লাভজনক এবং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি, বর্তমানে SEA-ME-WE-4 এবং SEA-ME-WE-5 সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যথেষ্ট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে এবং SEA-ME-WE-6 এর সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে আরও ৬০০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের জন্য প্রস্তুত। এই পরিমাণ ব্যান্ডউইথের মাধ্যমে আগামী ১০ বছর বাংলাদেশের নতুন কোনো সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির প্রয়োজন নেই।
তাহলে কেন এই তিনটি নতুন প্রাইভেট কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান করা হলো? মূলতঃ ভারতের প্রভাব এবং আওয়ামী লীগের চরম দুর্নীতিগ্রস্থ লুটেরাদের আর্থিক স্বার্থ পূরণ করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে ভারতের আরও প্রবেশ ঘটানো হয়েছে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা হয়েছে। লুটেরা আরাফাত গংরা বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হয়ে এই খাতটিকে সম্পূর্ণ ভারতের করায়ত্বে তুলে দিয়েছে।
নিরাপত্তা ইস্যু এবং মিয়ানমার সংযোগের ঝুঁকি
এই তিনটি কোম্পানি সিঙ্গাপুরভিত্তিক কাম্পানা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে ক্যাবল লাইন বিস্তারের জন্য। অথচ কাম্পানা কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত ক্যাবল লাইন অলরেডী মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত।
কাম্পানা ক্যাবল রুট
এই কাম্পানা কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায় কোম্পানিটির মালিকানায় রয়েছে মিয়ানমারের নাগরিক। এখন মিয়ানমারের থেকে ব্রাঞ্চ আকারে ১১০০ কি. মি. নতুন ক্যাবল বসিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে ল্যান্ডিং স্টেশনে কানেক্ট করা হবে। মিয়ানমার, যা বাংলাদেশের জন্য একটি আঞ্চলিক শত্রু মনোভাবাপন্ন জাতি, এই সংযোগ মনিটর করতে পারবে এবং প্রয়োজন হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে আমাদের দেশের কমিউনিকেশন সিস্টেমকে ব্ল্যাকআউট করে দিতে পারবে।
উপসংহার
এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি এই তিনটি বেসরকারি সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির কার্যক্রম চলতে দেবে? শহীদ আবু সাঈদ ও তার সঙ্গীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। ভারতের প্রভাব থেকে টেলিকমিউনিকেশন খাতকে মুক্ত করে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম খাত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ভারতের সঙ্গে করা সমস্ত চুক্তি বাতিল করে এবং এই খাতে জড়িত সকল দুর্নীতিবাজকে শাস্তির আওতায় এনে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এই লড়াই শুধু বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশন খাতের স্বাধীনতার জন্য নয়, বরং দেশের সার্বিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য। এই খাতকে রক্ষা না করতে পারলে দেশের সার্বিক অগ্রগতি ব্যাহত হবে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের আত্মত্যাগীদের প্রতি অবিচার করা হবে।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, অ্যাটর্নি

