সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রাষ্ট্রের কাছে একজন শিক্ষার্থীর ১০০ দাবি

রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

রাষ্ট্রের কাছে একজন শিক্ষার্থীর ১০০ দাবি

নতুন প্রজন্ম শুধু রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়ে বা জীবন দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, তারা কলম ধরেছে, মনের কথা প্রকাশ করেছে। কিন্তু কীভাবে তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা যায়, সেটাই এখন প্রশ্ন। একইসাথে, বিভিন্ন দাবির ঢেউ সারা দেশের জাতির মধ্যে উঠেছে। হিন্দু সম্প্রদায় রাস্তায় নেমেছে, আনসার বাহিনীর আর্তনাদও শোনা যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, ৩৫০ জন সংসদ সদস্য কী করেছে? রাজনীতিবিদরা কী করেছে? শেখ হাসিনার সরকার, এমনকি শেখ হাসিনা নিজে কী করেছেন? জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে ব্যর্থ হলেও, আয়নাঘর, দুর্নীতি, খুন, গুম এবং স্বৈরশাসনের মতো কর্মকাণ্ডে তারা পারদর্শী হয়েছেন— এ বিষয়ে জাতি এখন সচেতন।

যাই হোক, নতুন প্রজন্মের একজন শিক্ষার্থী আমাকে একটি দাবির তালিকা পাঠিয়েছে। এই লেখা যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং সঠিক পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ নেয়, সেই প্রত্যাশায় লিখাটি তুলে ধরলাম।


বিজ্ঞাপন


বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাইমুম দেশের প্রতি তার মনের কথা তুলে ধরেছে—

এসব আমার দেশকে নিয়ে আমার স্বপ্ন, যদি এর ১টাও বাস্তবায়ন হয় তাহলে অনেক অনেক ভালো লাগবে, মনের মধ্যে শান্তি পাবো। (কিছু ক্ষেত্রে মতের অমিলও হতেও পারে অথবা আমি ভুলও বলতে পারি, তবে সেটা আমাকে জানাবেন। আমি ইনশা-আল্লাহ স্বাধীন মানুষ, নিজের ভুল বোঝার চেষ্টা করবো এবং নিজের ভুল নিজেই ঠিক করার চেষ্টা করব ইনশা-আল্লাহ্।)

তো আমার ১০০ দফা দাবি, পরিকল্পনা বা স্বপ্ন, যেটা ইচ্ছা বলতে পারেন—

১. ব্যাংকের চূড়ান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো প্রয়োজন, বিশেষ করে সাইবার অ্যাটাক থেকে নিরাপত্তার জন্যে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংকের কার্যক্রম (দেশের অভ্যন্তরীণ) পরিচালনা না করে ইনক্রিপ্টেডভাবে নিজস্ব ব্যবস্থার মধ্যে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত পরিবেশে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে। অনলাইনভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে (দেশের বাইরে) সরাসরি সরকারি মনিটরিং থাকবে যেন দেশের সম্পদ পাচারের সুযোগ না থাকে।


বিজ্ঞাপন


২. অর্থপাচার রোধে কার্যকর মনিটরিং এবং কন্ট্রোলিং সিস্টেম দরকার। প্রয়োজন হলে আলাদা করে একটা সরকারি বিভাগ খুলতে হবে এর জন্যে। আগে থেকে থাকলে সেটার জবাবদিহিতা দিতে হবে যে মনিটরিং করে কি করছে বা পেয়েছে বা আদৌ কাজ করছে কিনা।

৩. সরকারি ওয়েবসাইটগুলো আরও সুন্দর ও সুসজ্জিত করে তৈরি করা, এসবের নিরাপত্তা বাড়ানো।

৪. সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে সরকারের সাথে যোগাযোগ এবং দ্রুত সাড়া পাওয়ার জন্যে আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৫. সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের আবেদনের জন্যে বিশেষ ওয়েবসাইট থাকবে যা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দ্বারা মূল্যায়ন হবে এবং বাস্তবায়ন হোক বা না হোক আবেদনের সাড়া দিতে হবে।

৬. কোনো একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালনে সরকারি ওয়েবপোর্টাল থাকবে, স্বাক্ষর বেশি হলে সরকার সেগুলো বিবেচনা করবে।

৭. সরকারি সব কাজ অনলাইন এবং অফলাইন— দুটো সেবার মাধ্যমেই পরিচালিত হবে। তবে কাজ দ্রুততম সময়ে এবং হয়রানি ছাড়া করতে হবে এবং সঠিক সেবা প্রদান করতে হবে। ইতিমধ্যে যারা দীর্ঘদিন হয়রানির শিকার হয়েছেন, তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান করতে হবে এবং হয়রানি লাঘব করতে হবে।

৮. দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের একইরকম ওয়েবসাইট থাকতে হবে, সবক্ষেত্রে একই কথা— সেবা ভালোভাবে দিতে হবে এবং দ্রুত সাড়া দিতে হবে।

৯. সরকারি যে ওয়েবসাইটই হোক না কেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগের জন্যে প্রয়োজনীয় তথ্য শুধু থাকলেই হবে না, কেউ যোগাযোগ করলে সাড়া দিতে হবে।

(এত সাড়া কেন? যাতে জনগণ সরকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে সে জন্য নয়, বরং সরকার যাতে সেই জনগণের সাথে সমন্বয় করে চলতে পারে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য।)

১০. একটা সাধারণ ব্যাংক ব্যবস্থা থাকতে হবে সকলের জন্যে, ভোটার আইডি কার্ড হওয়ার সাথে সাথে যেন এটা অটোমেটিক চালু হয়ে যায়। ধীরে ধীরে উন্নয়ন ঘটলে এটা জন্মনিবন্ধন করার সময়েই যাতে হয়ে যায়। এই ব্যাংক একাউন্ট উক্ত ব্যক্তি যেকোনো সময় বন্ধ করতে পারবে, টাকা তুলতে পারবে এবং অন্য বেসরকারি ব্যাংকে একাউন্ট ট্রান্সফার করতে পারবে। ব্যাংক এই একাউন্টের কার্ড প্রদান করবে।

১১. সরকার থেকে উক্ত ব্যক্তি যত ধরনের ভাতা পাবে সব সোজাসুজি এই একাউন্টের মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে যাবে এবং কার্ড ব্যবহার করে তা উত্তোলন করতে পারবে।

১২. প্রত্যেকটা দেশের সাথে সুসম্পর্ক এবং প্রতিনিয়ত যোগাযোগের জন্যে যোগ্য রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করতে হবে যাতে তারা সবসময় এটা খোঁজ রাখতে পারে যে ওইসব দেশ-বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেবে কিনা এবং যদি দেয় তাহলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৩. গ্রাজুয়েশন শেষ করা প্রতিটি ছাত্রের সিভি এবং প্রোফাইল মনিটরিং সিস্টেম রাখতে হবে, এমন না যে সরকার সব করবে, একটা ওয়েবসাইট রাখলে তারা নিজেরাই তাদের তথ্য হালনাগাদ করবে, এতে বেকারদের সংখ্যা, তাদের যোগ্যতা উল্লেখ থাকবে এবং সুযোগ আসলে সরকার থেকেই তারা যেন ডাক পায়। এখন চাকরির বাজার দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক হয়ে গেছে। এসব ছিল পূর্ববর্তী প্রজন্মের জন্য এবং আমাদের প্রজন্মের জন্য যারা সঠিক শিক্ষা এবং শিক্ষা পদ্ধতি কোনোটাই পায়নি।

১৪. শিক্ষা পদ্ধতিতে পরে আসি, এবার আসি ভূমি ব্যবস্থাপনায়। গ্রামে ১০০ বাড়িতে ৫০০ জন বাস করে, আশপাশে জায়গা প্রয়োজন, রাস্তা, পরিত্যক্ত জমিসহ ১০ একর। সহজ সমাধান হলো সবাইকে একটা বিল্ডিংয়ে বা কয়েকটা বিল্ডিংয়ে ভাগ করে উঠায় দেওয়া, এখানে জমি লাগবে মাত্র ১ একর।

১৫. এভাবে ভূমি ব্যবস্থাপনায় যখন ভূমির সঠিক ব্যবহার হবে তখন বাকি জমিতে কৃষিকাজ সুন্দর করে করা যাবে এবং ওই গ্রামের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে খাদ্য বাইরেও রফতানি করা যেতে পারে। পশুপালন, মাছ চাষ, সব হবে। এভাবে পুরো দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে আর সঠিক ভূমি ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

১৬. আরেকটি মৌলিক চাহিদা বস্ত্র, যেটাতে আমরা এগিয়ে কিন্তু এই শ্রমিকদের জীবনব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে, তারা যেন কাজের বাইরেও জীবনের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে।

১৭. ভূমি ব্যবস্থাপনায় বাসস্থানের চাহিদা পূরণ হয়ে গেছে, কিন্তু ভূমিহীন মানুষদের জন্যে সরকারিভাবে এরকম কয়েকটি সুন্দর গ্রাম তৈরি করে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, কেউ যাতে রাস্তায়, ফ্লাইওভারের নিচে না ঘুমায়। ‘একটি চূড়ান্ত লিপ ফ্রগ’ নামের একটা লেখা লিখেছিলাম যেটা পাবলিশ করেছিলেন রহমান মৃধা স্যার, সেখানে বিস্তারিত দেখতে পারেন।

১৮. তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজে সম্মান বাড়াতে হবে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে তাদেরকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দিতে হবে এবং সকলকে শিক্ষা দিতে হবে যে তাদের মতো তৃতীয় লিঙ্গও এদেশের নাগরিক, সমঅধিকার প্রাপ্ত এবং তারাও আমাদের মতো মানুষ। সবার উপরে মানুষ সত্য।

১৯. এবার আসি শিক্ষায়, সবকিছু প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। তো একদল গবেষক রাখতে হবে যারা সবসময় শুধু শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের দিকে নিয়ে যেতে পারে সেই গবেষণায় লিপ্ত থাকবে। আগেও ছিল হয়তো, তাদের কাছে থেকে কাজ বুঝে নিতে হবে যে তারা আসলে কি করছেন।

২০. প্রতিটি দেশ যারা উন্নত তারা কোনো না কোনো একটা প্রযুক্তিগত দিকে সবার থেকে এগিয়ে। আমাদের গবেষণার ক্ষেত্রে এরকম প্রতিটি এগিয়ে যাওয়া দেশের সাথে সুসম্পর্ক রেখে তাদের সাহায্য নিতে হবে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

২১. গবেষক, ছাত্ররা যাতে নিজেদের আইডিয়া উপস্থাপন করতে পারে এরকম একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। শিশু, কিশোর বা বয়সভিত্তিক কন্টেন্ট বিভাজন করা থাকবে। এসব ওয়েবসাইটে বিজ্ঞান শিক্ষা বাড়ানোর জন্যে প্রয়োজনীয় সবকিছু থাকবে।

২২. প্রতি অর্থবছরে গবেষণার জন্য আলাদা বাজেট থাকবে। তরুণদের গবেষণার জন্য অনুপ্রাণিত করতে হবে। এমন কতগুলো মানুষ নিয়োজিত থাকবে যারা সব আইডিয়া যাচাই-বাছাই করে দেখবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে।

২৩. শিশুদের পড়াশুনায় মনোযোগ বাড়ানোর জন্যে প্রতিটি শিশুকে হাইলাইট করতে হবে। শিশু নিয়ে গবেষণা করার জন্যে মানুষ নিয়োজিত থাকবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রতিটি শিশু নিজ নিজ প্রতিভা, মেধা অনুযায়ী যাতে বেড়ে উঠতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

২৪. অকৃতকার্য বলতে কিছু থাকবে না শিক্ষা ব্যবস্থায়। এই ছোট্ট জীবনে অকৃতকার্য হয়ে সময় নষ্ট করা মানে পরিবারের, সমাজের এমনকি দেশেরও সময় নষ্ট করা। যদি নিজে থেকে চেতনা জাগে তাহলে কোনো না কোনো এক সময় এসে আবার মনোযোগী হতে পারবে। আর নিজের ইচ্ছায় একই শ্রেণিতে ২ বার থাকার উপায় তো থাকছেই।

২৫. প্রাথমিক শিক্ষা সবার জন্য একই। এতে প্রধান লক্ষ্যই হওয়া উচিত যাতে প্রতিটি শিশু নীতি নৈতিকতার শিক্ষা লাভ করে। পরবর্তীতে নীতি নৈতিকতার শিক্ষা থাকবে তবে অপ্রয়োজনীয় বিষয় বাদ দিতে হবে। যদিওবা অপ্রয়োজনীয় কিছুই না, তবে মুখে মুখে যাতে ধান চাষ, মুরগি পালন করতে না হয়, তার বদলে পাশের কোনো খামার পরিদর্শন করা যেতে পারে।

২৬. সরকারি চাকরিতে প্রলোভন দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে শুধু একটি একমুখী প্রজন্ম তৈরি হয়ে উঠেছে যার ফলে দেশের কোনো গবেষণায় উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই, যে এখানে আমরা সবার থেকে এগিয়ে।

২৭. শিক্ষা গবেষণায় আগ্রহ বাড়াতে, প্রয়োজনীয় বেতন ভাতা বা যাই প্রয়োজন হোক না কেন ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষায় আরও পরে আসব, এবার আসি চিকিৎসায়।

২৮. চিকিৎসায় চূড়ান্ত লিপ ফ্রগ দিতে হলে এখন আমাদের নিজস্ব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তৈরি করতে হবে, যাতে এটা কমপক্ষে রোগ নির্ণয় করতে পারে এবং বাজারে বিদ্যমান ওষুধের মধ্যে সেরাটা বেছে দিতে পারে।

২৯. প্রতিটি রোগীর রোগ নির্ণয়ে করা পরীক্ষার ফলাফল, রোগীর প্রোফাইল অনলাইনে সংরক্ষণ করা থাকবে। কোন পরীক্ষা, কী রোগ, কী লক্ষণ সব। কারণ ভবিষ্যতে বড় আকারের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তৈরিতে এসব ডাটাই কাজে লাগবে। তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

৩০. প্রাথমিক বা মাধ্যমিক কোনো এক স্তরে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাস্তবিক শিক্ষা দিতে হবে, মুখস্ত বিদ্যায় যাতে পরিণত না হয় সেটা। পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা থাকতে হবে এই বিষয়ে। আমাদের আন্দোলনের সময় দেখেছি এই শিক্ষার কত অভাব ছিল, যদিওবা না দেওয়া ছিল কোনো অ্যাম্বুলেন্স, না কিছু। কি নৃশংসতা! যেন ইসরায়েল গাজায় হামলা করে অ্যাম্বুলেন্স আটকিয়ে রাখার দৃশ্য।

৩১. দেশকে কয়েক হাজার এলাকায় ভাগ করতে হবে এবং প্রতি এলাকায় যেসব সরকারি বা বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের জরুরি রোগী ট্রান্সফার সেবা বা অ্যাম্বুলেন্স থাকা বাধ্যতামুলক করতে হবে।

৩২. প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই যেহেতু উত্তম, সেজন্য প্রাথমিক চিকিৎসা শিক্ষা দিতে হবে যাতে করে সবাই সচেতন হয়। এবং আরও সচেতন করার জন্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা যেকোনো জায়গায় সরকারি পেজ খুলতে হবে এবং সচেতন করার জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আগের মতো বাসায় বাসায় গিয়ে মাইকিং না করে এটা সহজ পদ্ধতি, কারণ এখন সবার যাতে মোবাইল। অল্পেই যাতে ওষুধ না খায় এটা রোধ করা, কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অনেকবার সাবধান করছেন এটা নিয়ে।

৩৩. টাকা থাকুক বা না থাকুক, সরকারি মেডিকেল গেলে টাকার অভাবে মানুষের জীবন বাঁচাতে চিকিৎসার একটা চেষ্টাও যাতে বাদ না যায়। সরকারি ফান্ড থাকবে। ধনী ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রেই দান করতে আগ্রহী, তারা সেসব ফান্ডে টাকা দেবেন বা কোনো রোগীর প্রোফাইল দেখে নিজেরা চিকিৎসার জন্যে এগিয়ে আসতে পারেন, প্রয়োজনীয় ওয়েবপেজ থাকবে এটারও।

৩৪. প্রতিটি জটিল, দূরারোগ্য রোগ, প্রতিটি রোগীর তথ্য এবং তাদের নিয়ে গবেষণার জন্যে আলাদা কেন্দ্র থাকবে। কারণ এসব পরবর্তীতে কাজে লাগবে, সেসব গবেষণা বা চিকিৎসার জন্যও আলাদা ফান্ড থাকবে।

৩৫. প্রতিটি জেলা বা বিভাগে এমন বড় একটি সরকারি হাসপাতাল থাকবে যেটা হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, যেটার এক গেট দিয়ে ঢুকলে যাতে অন্য গেট দিয়ে সুস্থ হয়ে বের হয়ে যেতে পারে— এই ব্যবস্থা থাকবে, অন্য কোথাও যাতে যাওয়া না লাগে।

৩৬. অনুমোদনহীন, অপ্রয়োজনীয়, বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ করতে হবে, সরকারি ডাক্তারের বেসরকারি প্র্যাকটিস বন্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে তাদের বেতন বহুগুণ বৃদ্ধি করতে হবে বা সরকারি হাসপাতালের সেবার মান এত ভালো করুন যাতে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে না গিয়ে সরকারিতেই যায়।

৩৭. বাজারের প্রতিটি ওষুধ পুনঃনিরীক্ষণ করতে হবে। একটি ওষুধও যাতে বের না হয় যেটা ভালোমতো পরীক্ষা করা হয়নি, নকল ওষুধ যাতে না ছড়ায়। নির্দিষ্ট ওষুধ কেনার জন্য, নির্দিষ্ট কোনো ক্লিনিকে পরীক্ষা করতে যাওয়ার জন্য রোগীকে প্রভাবিত করতে ডাক্তারকে অর্থ প্রদান করা হলে সেটাকে ঘুষ হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং সেই ডাক্তারকে ঘুষখোর হিসেবে গণ্য করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে সেই ওষুধ কোম্পানি, সেই হাসপাতাল, সেই পরীক্ষাগার বন্ধ করে দিতে হবে।

৩৮. সর্বোপরি চিকিৎসা ব্যবস্থায় ওষুধ উৎপাদনেও এগিয়ে যেতে হবে এবং ওষুধের বাজার, মূল্য থেকে সবকিছু এমনভাবে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে মানুষ নিঃসন্দেহে এবং যুক্তিযুক্ত দামে ওষুধ কিনতে ও খেতে পারে।

৩৯. এবার আসি নিত্যপণ্যের বাজারে। ভারতীয় মসলায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পাওয়ায় আমদানি বন্ধ করছে অনেক দেশ, আমাদের দেশের কাউকে দেখিনি সে রকম কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে। বাজারের প্রতিটি জিনিস প্রতি ৩ মাস বা তারও কম সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আলাদা বিভাগ থাকবে। তারা প্রতিবেদন বের করবে, দরকার হলে নিষিদ্ধ করবে। এসব কিছু প্রকাশ্যে হবে।

৪০. পুলিশ যেমন জরুরি কলে সাড়া দিয়ে আসে তেমনি বাজারের কোনো জিনিসের দাম বাড়লে তৎক্ষণাৎ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্যে আলাদা কার্যকর বাহিনী থাকবে। এমন কমিটি হাজার বার গঠন হয়েছে দেশে যে কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারে না বা জবাবদিহিতা নেই। দুর্নীতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছুটিবিহীন কাজ করতে হবে।

৪১. দামাদামি যাতে করতে না হয়, যেহেতু পরিবহন খরচ পার্থক্যের কারণে দামের পার্থক্য হয় তাই একটা ওয়েবসাইট রাখা যেতে পারে যেটা প্রতিটি এলাকা-ভিত্তিক সম্ভাব্য দাম নির্ধারণ করে দেবে। যার আশপাশে দাম হবে, তবে মাত্রাতিরিক্ত বেশি না।

৪২. দেশের বাজার তো যেন নকল পণ্য তৈরির কারখানা দিয়ে ভরা, দামী জিনিসের প্যাকেট কিনে কমদামী জিনিস দিয়ে ভরে ফেলা হয়। এসব প্রতিরোধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রতিনিয়ত মনিটরিং করতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তরের কল সেন্টারের কার্য ক্ষমতা বাড়ানো এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রয়োজনীয় যা করার দরকার সেসব করা।

৪৩. বাংলা একাডেমির প্রতিস্থাপক হিসেবে একটি নতুন প্রজন্মের কর্মঠ দল প্রয়োজন যারা বিভিন্ন সরাসরি বেসরকারি ওয়েবসাইট, বই— এসব সঠিক বাংলায় ভাষান্তর করবে। তাদের কাজের পরিধি সময়ের সাথে সাথে বাড়বে। নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করতে হবে যেখানে বাংলারও ব্যবহার হবে ভালোভাবে, নিঃসন্দেহে এসব সম্ভাবনাময়।

৪৪. দেশের প্রতিটি জরুরি সেবা, সরকারি সেবা, প্রতিটি কল সেন্টারের কর্মদক্ষতা বাড়ানো, দুর্নীতির অভিযোগে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। কেউ যাতে অপারগতা প্রকাশ না করে, নিজে সেবা না দিতে পারলে অন্য কোথাও সংযুক্ত করায় দিতে পারে— এমন সমন্বয় থাকা।

কোনো অভিযোগের তথ্য যেন মুছে না যায়, ডাটা সংরক্ষণ করা এবং একটি অভিযোগের সমাধান হয়েছে কিনা এবং কতদিনে হয়েছে বা কেন হয়নি এসব জবাবদিহিতা রাখা। ১০ বছর পর হলেও যেন খোঁজ নেওয়া হয়।

৪৫. যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে আমি অনেক আগে লিখেছিলাম একটা লেখা, ভাসমান ট্রেন নিয়ে, চীনে যেটার পরীক্ষামূলক গতি ৬০০ কিলোমিটার। কেউ যদি উন্নয়নের গান গাইতে চায় যাতে এরকম কিছু করে দেখায়।

৪৬. পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন যাতে এটা এত উন্নত হয় যে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারে। এত বেশি জনসংখ্যার দেশে রেল ছাড়া বাস বা অন্যান্য যানবাহন দিয়ে সারাজীবন যানজট লেগেই থাকবে। তো রেলের আধুনিকায়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, গতিবৃদ্ধি এবং ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। তাছাড়া কিছুদিন পর দেখবেন মেট্রোরেলও চোখের সামনে ভাসমান বিশাল বড় আবর্জনা মনে হবে এক শ্রেণির কাছে। আর আরেক শ্রেণির কাছে, এত কষ্ট করে যাওয়া যায় নাকি! অথবা ওটাতে ওঠার সামর্থ্য নেই!

৪৭. খেলাধুলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সবরকম সাহায্য করতে হবে ক্রীড়াবিদদের। অনেকের মধ্যে একজনকে অন্যতম বলা হয় কিন্তু ১৭ কোটি মানুষের মাঝে থেকে এই অন্যতমকে খুঁজে বের করার জন্য বিশেষজ্ঞ দল থাকবে। তবে সেটাও যদি দুর্নীতির হয় তাহলে আবার দেশ আগের মতোই হবে।

৪৮. প্রত্যেকটা খেলার মধ্যে সেরা খেলোয়াড়কে বাছাই করতে হবে এবং লক্ষ্য নিয়ে আরও প্রশিক্ষণ দিতে হবে যেন আমরা ক্রিকেটে, ফুটবলে বিশ্বকাপ বা অলিম্পিক গেমসে পদক জিততে পারি।

৪৯. গাড়ি কেনার থেকে গাড়ি তৈরির কারখানা নিজের দেশে দেওয়া, বিমান কেনার থেকে ছাত্ররা যাতে বিমান তৈরি করতে পারে, সেটা হোক যুদ্ধবিমান বা সাধারণ বিমান, এই ধরনের ট্যালেন্ট খুঁজে বের করা এবং তারা যাতে বেড়ে উঠতে পারে সেই ব্যবস্থা করা।

৫০. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দামী গাড়ি ডোনেটের ব্যবস্থা করা, তারা যাতে প্রত্যেকটা স্ক্রু খুলে খুলে কোথায় কি আছে, কোন উপাদানে আছে, কোন পদার্থ কত পরিমাণে কোন অংশে ব্যবহার করা হয়েছে সেসবের ব্যবস্থা করা, যাতে কমপক্ষে একটি কপি তৈরি করার মতো জ্ঞান অর্জন হয়। তারপর না সেটার থেকে উন্নত কিছু আশা করা যেতে পারে তাদের কাছে থেকে।

৫১. তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া বা অন্য কোনো যুদ্ধ হোক না কেন। আমাদের আশপাশে বিভিন্ন ধরনের হুমকি রয়েছে, সেসব বিবেচনা করে প্রস্তুতি বাড়ানো। শান্তির সংলাপে বসতে গেলেও ন্যূনতম কিছু শক্তির দরকার হয়, সেটা ধীরে ধীরে বাড়ানো।

৫২. সুন্দরবন রক্ষায় আলাদা বাহিনী, সুন্দরবনের সৌন্দর্য ভিডিও করে বাইরের দেশের পর্যটককে আকর্ষণ করার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। হতে পারে টেলিভিশন চ্যানেল বা ইউটিউব অনেক মাধ্যম আছে, এবং সেই থেকে আয় করা, পর্যটকদের থেকে আয় করা অর্থ সুন্দরবনের উন্নয়নে ব্যয় করা।

৫৩. জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, প্রচলিত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে, এখন পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে খাপ খেতে হবে। আর জনসংখ্যা সমস্যা না, তার চেয়ে জনসংখ্যা আরও ব্যাপক বাড়িয়ে পুরো পৃথিবীতে বাংলাদেশিরা যাতে পরিবারসহ ছড়িয়ে যেতে পারে এসব নিয়ে পদক্ষেপ বাড়াতে হবে এবং সহজ করতে হবে।

৫৪. যারা বাংলাদেশি তবে অন্য দেশের নাগরিক বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিক তাদের সাথে যোগাযোগ করা এবং সঠিক তথ্য রাখতে হবে যে কে কোথায় আছেন, কতজন আছেন। এটার কারণ এই যে তারা যেন নিজের শিকড়কে মনে রাখে।

৫৫. রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জন্যে সুযোগ-সুবিধা শতগুণ বাড়ানো, তারা যাতে কোথাও কোনো দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। যাতায়াতের সময় বিমানবন্দরের হয়রানি দূর করতে হবে।

৫৬. রেমিটেন্স যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা অনেক সময়েই ডাকাতির কবলে পড়ে বা অপরাধের শিকার হয়। হুমকি থাকে অনেক ক্ষেত্রে, তারা যাতে সহজে নিরাপত্তা পেতে পারে সে ব্যবস্থা করা। তারাও যুদ্ধ করছে আমাদের দেশের জন্য, টিকিয়ে রাখছে আমাদের দেশকে। সুতরাং তাদের সেভাবেই সম্মান করতে হবে, তাদের কষ্টের কথা মাথায় রাখতে হবে।

৫৭. যেমন বলেছিলাম একটি হাসপাতালে ঢুকে টাকা থাকুক আর না থাকুক যেন সবাই সুস্থ হয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। একইভাবে এমন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার দরকার যেখানে যে শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, তবে সেটা আগ্রহের সাথে।

৫৮. আমাদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের সঠিক বণ্টন করতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন যাতে নিজেরাই করতে পারি, বিদ্যুৎ অন্য দেশ থেকে নিয়ে আসার নামে যেন কোটি কোটি টাকা অপচয় বা পাচার না হয় সেটার দিকে দেখতে হবে।

৫৯. এটা সোজাসুজি বলতে চাই, ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ, এটা রফতানি একেবারেই কমাতে হবে অথবা নিষিদ্ধ করতে হবে।

৬০. প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার শুধু না, অনেক অনেক বাড়াতে হবে, আশপাশে থেকে কোনো হুমকিতেই যেন মাথা নোয়াতে না হয়।

৬১. অপরাধ দমনে অপরাধীদের ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। বারবার অপরাধ করে সাজা খেটে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, এদের বিরুদ্ধে বিশেষ শাস্তি বা ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন কেউ একদিন হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানোর সময় ধরা পড়লে ওয়ার্নিং, দ্বিতীয় দিন আরেকটা শাস্তি, তৃতীয় দিন আরেকটা। এসব মনিটরিং করতে হবে।

৬২. ক্ষমতাশীল ব্যক্তিরা অপরাধ করলে সেটা সবাই দেখে, তেমনি শাস্তি না হলেও সাধারণ মানুষ দেখে থাকে এবং কষ্ট পায়। তার সাথে ওসব ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় থাকা ব্যক্তিরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাই এসব বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ বিশেষ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং অপরাধ যেমন ছড়িয়েছে অপরাধের শাস্তি নিশ্চিতের বার্তাও ছড়াতে হবে।

৬৩. পুলিশ সদস্য যারা বিভিন্ন আন্দোলন দমন করে এবং এসব কাজে জড়িত থাকে তাদের আলাদা প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বুলেটপ্রুফ, ফায়ারপ্রুফ বা যত উন্নত পোশাক বা জিনিসপত্র প্রয়োজন হোক না কেন পুলিশের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে এবং সেই পুলিশ সদস্যরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন, কোনো অবস্থাতেই আর কোনো আন্দোলনেই যাতে একজন সাধারণ মানুষও মারা না যায়, সেটাও আবার জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে।

৬৪. এবার আসি গণতন্ত্রে। নির্বাচন ব্যবস্থা যাতে এমন না হয় যে অধিকাংশের ভোটের ভিত্তিতে একটি চোর, একটি ডাকাত বা চাঁদাবাজের মধ্য থেকে নির্বাচন করা।

৬৫. যোগ্য ব্যক্তিরা অধিকাংশ সময় সাহস পায় না নির্বাচনে আসার, সামান্য টাকাওয়ালা, সন্ত্রাসী পালন করে এমন ব্যক্তিরাই তাদের ভয়ের এবং সামনে এগিয়ে না আসার মূল কারণ। এনাদেরকে মোটিভেট, সাহস দিতে হবে। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।

৬৬. যেকোনো সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যেমন ব্যাকগ্রাউন্ড চেক হয়, তেমনি নির্বাচনে ভালোমতো ব্যাকগ্রাউন্ড চেক এবং প্রার্থিতা যাচাই করতে হবে। যেন কেউ পূর্বশত্রুতার ক্ষোভ, প্রতিশোধের আগুন নিয়ে ক্ষমতায় না আসতে পারে। এতে শুধু প্রতিহিংসার নোংরা রাজনীতি সৃষ্টি হবে। অতীতের দুর্নীতির ইতিহাস, সব চেক করতে হবে। শক্তিশালী প্রার্থী নির্বাচক থাকবে এবং তাদেরও নিরাপত্তা থাকবে যাতে তারা সঠিক বিচার তদন্ত করে প্রার্থিতা যাচাই বাছাই করতে পারে।

৬৭. কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে সাধারণ জনগণ স্যার বলবে না, বরং সরকারি কর্মকর্তা জনগণকে জনাব/স্যার বলবেন। একজন সাধারণ মানুষও অফিসে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে না, সরকারি কর্মকর্তা ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন যতক্ষণ সবার বসার ব্যবস্থা না হয়। (জনৈক সরকারি কর্মকর্তাকে আপা বলার কারণে একজন সাধারণ মানুষকে পেটানো হয়।)

৬৮. সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সুপরিচিত মুখ। তারা অপরাধ করে যদি সামান্য শাস্তিতেই পার পেয়ে যায় এতে জনগণের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যেমন দুর্নীতিতে বা অন্যকিছুতে শুধু পদাবনতি বা বদলি। তাই আরও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে বা পুরোপুরি চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।

৬৯. সেনাবাহিনী কয়েকদিন শুধু গাড়ি চালকদের পিছনে বাড়ি মারলো, ছাত্ররা সুন্দর করে পরিচালনা করলো আর যানজট কমে গেলো। এটা সবসময়ই যাতে থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে, দরকার হলে রাস্তায় কিছু সামরিক গাড়ি রাখতে হবে যারা শুধু টহল দিবে বাড়ি মারার জন্য।

৭০. যতদিন দুর্নীতি দূর না হয়, একটি আধা সামরিক শ্রমিকদের বাহিনী তৈরি করা যেতে পারে, যারা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হবে। যারা হবে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। ক্যান্টনমেন্টের ভিতর ঢুকলেই বোঝা যায় যে বাংলাদেশকেও সুন্দর করা সম্ভব। তো একই টাকা ব্যয়ে কেন শুধু ক্যান্টনমেন্ট সুন্দর হবে আর দেশের অন্য সব রাস্তাঘাট হবে ভাঙ্গাচুরা, কারণ দুর্নীতি। তো যদি সেনাবাহিনী এসব কাজ পায় তাহলে কেন সুন্দর হবে না বাংলাদেশ।

৭১. কোনো রাস্তাঘাট, বিল্ডিং বা মেগা প্রজেক্ট হতে হবে পরবর্তী ১০০ বছরের কথা চিন্তা করে, এমন কাজ করবেন যেন দুদিন পর খুঁড়তে না হয় রাস্তা। এই দুর্নীতিবাজ অযোগ্য ব্যবস্থাপনা থেকে মুক্তি চাই।

৭২. আমাদের বৈশ্বিক অবস্থা ততটা ভালো যাচ্ছে না, এক দেশ আরেক দেশের জমির ওপর নজর দিচ্ছে, তাই যুবকদের বা ছাত্রদের ৩ মাসের সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৭৩. প্রতিটি প্রজেক্ট বা কাজের শেষে বা শুরু থেকেই দুর্নীতি নজরদারির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু গুপ্তচর থাকবে যারা দুর্নীতি হলে জানিয়ে দেবে। এই গুপ্তচর আর কেউ না, এই গুপ্তচর আমরা জনগণ। বড় বড় দুর্নীতি দূর করার জন্য খুবই শক্তিশালী এবং কার্যকরী বাহিনী থাকবে, যারা অভিযোগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৭৪. সব দুর্নীতির খবর যে সরকার প্রধানদের দিতে হবে এমন না, প্রতিটি জেলায় জেলায় দুর্নীতি দমনের ব্যবস্থা থাকবে এবং সেগুলো হতে হবে স্বচ্ছ এবং দ্রুত কার্যকরী। র‌্যাপিড অ্যাকশন দুর্নীতি দমন কমিশন, তবে সেই কমিশন যাতে দুর্নীতি থেকে কমিশন না খায় সেটার জন্য নজরদারি রাখবে মূল সরকার।

৭৫. পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে গেলে বডি ক্যাম লাগিয়ে যাবে, যাতে করে পূর্বের মতো মিথ্যা মামলায় সাধারণ মানুষকে ফাঁসাতে এবং অর্থ আদায় করতে না পারে। প্রতিটি অভিযানের ভিডিও ফুটেজ থাকবে, না থাকলে সেই পুলিশের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭৬. জাতিগত দ্বন্দ্ব হলে পাশের দেশ থেকে আওয়াজ আসে এবং পাশের দেশের টেলিভিশন চ্যানেলেও গুজব ছড়ানো হয়। এসব নিরসনে আগে জাতিগত দ্বন্দ্বে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। আর শাস্তি নিশ্চিত করে সেটা ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের দেশে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে বাস করবে এটাই চাই।

৭৭. রাজনৈতিক কারণে জাতিগত দ্বন্দ্ব লাগানোর চেষ্টা অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাজার চেষ্টা হলে সেসবের জন্যও কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৭৮. সংখ্যালঘু যদি অপরাধী হয় যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধর্ম নিয়ে কটুক্তি, আগে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে, আর দ্রুত তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করে দেখাতে হবে।

৭৯. যে কেউ মিথ্যা মামলা করলো, আর সাথে সাথে কোনো প্রমাণ ছাড়াই তাকে তুলে নিয়ে যেতে হবে, টাকা দাবি করতে হবে, তার প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ করতে হবে— এই ধরনের বিষয়গুলো যাতে আর না ঘটে সে জন্য প্রয়োজনে আইনের সংশোধন করতে হবে।

৮০. বড় বড় শপিংমল, দোকানপাট, যেখানে পণ্য পরিবহনের জন্যে গাড়ি দাঁড় করাতে হয়, তাদের রাস্তার পাশে গাড়ি যাতে দাড় করিয়ে জ্যাম বাঁধানো না লাগে সেজন্যে এসব বিল্ডিং তৈরি আগে রাস্তা থেকে প্রয়োজনীয় দুরত্ব বজায় রেখে বিল্ডিং তৈরির অনুমোদন দিতে হবে।

৮১. ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত— এমন শিরোনাম শুনতে শুনতে ভীত হয়ে পড়েছি। এসবের সঠিক বিচার কখনো দেখিনি বা শুনিনি। এদের ধরতে আলাদা টিম গঠন করতে হবে এবং দেশি-বিদেশি পর্যটক দেশের যেকোনো জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে, কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে।

৮২. পাবলিক বাসের প্রত্যেকটি ড্রাইভার, হেলপার যাই হোক না কেন, এদের জন্যে আলাদা ডাটাবেজ রাখতে হবে। এদের ৩ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে কমপক্ষে ব্যবহার, সুন্দর আচরণ শেখাতে হবে, যে বাস মালিকের কাছেই চাকরি করুক না কেন প্রত্যেকের আইডি কার্ড থাকবে যার তথ্য আইডি নাম্বার সবকিছু সরকারের কাছে থেকে ট্রেইনিং সম্পূর্ণ করে নিতে হবে। সুন্দর পোশাক নিশ্চিত করলে আরও ভালো।

৮৩. মাদক তো যুব সমাজকে শেষ করে দিচ্ছে। এটির সমাধানে যেখানে সেখানে যাকে সন্দেহ ডোপ টেস্ট করানোর জন্যে আলাদা বিভাগ থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা একজন ধরতে পারলে শিকড় পর্যন্ত পৌঁছায়ে এসব নির্মূল করবে।

৮৪. যেখানে সেখানে ধূমপান বন্ধে আইন করতে হবে, যেমন বাসে উঠে ধূমপান করে। দোকানদারেরা ছোট ছোট বাচ্চাদের মাদক অফার করে, এসব দিকে নজর দিতে হবে। বড়রা যারা করছে তাদের নিয়ে কি করবেন সেটা আপনাদের ব্যাপার কিন্তু ওরা যাতে এসব আবার ছোটদের না শেখাতে পারে সেজন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ধূমপান সম্পূর্ণ লুকিয়ে করতে হবে বা তাদের জন্যে আলাদা জায়গা করে দিতে পারেন, মূল কথা এটা দেখে অন্য কেউ যাতে শিখতে না পারে।

৮৫. সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের সচেতন করতে হবে, কারণ তাদের মানুষ ফলো করে, তারা যদি ভুল কিছু মানুষকে শিক্ষা দেয়, তাদের মাধ্যমে যদি ভুল কোনো শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সমাজ অধঃপতনের দিকে যাবে। হ্যাঁ, মনে হতেই পারে তারা মজা করছে, কিন্তু এতে অবচেতন মনের পরিবর্তন ঘটে যেটা আমরা লক্ষ্য বা নিয়ন্ত্রণ করি না।

৮৬. দুশ্চরিত্র নায়ক-নায়িকারা বারবার কেন সামনে আসে? তাদের কুকীর্তি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরও কেন তারা আবার জনগণের সামনে আসার সুযোগ পায় কোনোরকম শাস্তি ছাড়া? এসব কোনো মনোবিজ্ঞানী বা সমাজবিজ্ঞানী দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং এরপর যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

৮৭. বাংলাদেশ যাতে দেশের ভিতরের নোংরা রাজনীতি বাদ দিয়ে একটু বিশ্বের দিকে নজর দেয়। দেখুন চারদিকে, সবাই দলবিভক্ত হয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশের সবাই যাতে নোংরা রাজনীতির খবর দিয়ে দেশের উন্নয়নে এক হয়। যদি কেউ রাজনীতি করতে আসে, ক্ষমতাবান কিন্তু দূরদৃষ্টির বড়ই অভাব তাহলে তার সাথে বসেন, আলোচনা করেন, দরকার হলে ট্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সবার আগে এই চিন্তা থাকতে হবে।

৮৮. দুর্নীতিবাজদের জন্যে ভিন্নরকম শাস্তির ব্যবস্থা করানো হয় এবং জনসম্মুখে প্রদর্শন করা হয়। যাতে করে এতদিনের বিচারহীনতার পর মানুষ দেখতে পারে যে বিচার হয়। এতে শুধু মানুষের মনে আশা ফিরবে না, সাথে সাথে অপরাধীরাও সাবধান হয়ে যাবে। যেমন সেদিন চাঁদাবাজকে বেঁধে রাখলো বা রাস্তা বন্ধ করে বাস দাড় করানো ড্রাইভারকে জনসম্মুখে পিছনে কয়েকটা আঘাত করা হলো।

৮৯. বৈদেশিক অনেক সাহায্য আসে, যেমন ছোট্ট ছোট্ট ঘর, টিউবঅয়েল ইত্যাদি, এসব ক্ষেত্রেও দুর্নীতি দেখেছি, শুনেছি ৩০-৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঘর নিয়েছে অনেকে। এসব প্রকাশিত হলে দেশের ভাবমূর্তি আরো নষ্ট হবে। এসব দিকে সঠিক তদারক করতে হবে, যাচাই বাছাই করার জন্য লোক রাখতে হবে।

৯০. রাস্তাঘাট, ব্রিজ নির্মাণ করার জন্যে ঠিকাদারদের নিয়োগ দেওয়া হয় তবে এখন থেকে সেসবের উদ্বোধনে যে ফলকগুলো থাকে, সেখানে ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার, নকশা যে করেছে তার, মূল মূল ব্যক্তিদের নাম লিখবেন। যে মূলত আর্কিটেকচার সে অনুপ্রেরণা পাবে, ইঞ্জিনিয়ার অনুপ্রেরণা পাবে, ঠিকাদার অনুপ্রেরণা পাবে, যাতে প্রত্যেকে তাদের কাজগুলো ভালো করেন তারা। সেটা না হলে তারাও বুঝবেন যে মানুষ গালি দেবে এবং মানুষ তাদের পরিচয় জানে। দরকার হলে বাবার নাম পর্যন্ত লিখবেন।

৯১. এবার আসি সাংবাদিকদের কাছে, সংবাদমাধ্যম হচ্ছে সেটা যেখানে সাধারণ মানুষ সারাদিন পর গিয়ে একটু বসে থাকে সঠিক তথ্য বা খবর পাওয়ার জন্যে। অতীতে কোন টেলিভিশন চ্যানেল কি করেছে, কোন সাংবাদিক কি করেছে সেসবের বিচার বিশ্লেষণ করবেন কিনা জানি না। তবে সাংবাদিকদের রক্ষায় যেমন আইন প্রয়োজন তেমনি তাদেরও কঠোর শাস্তি প্রয়োজন যদি তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে। এসব হবে কিনা জানি না তবে কমপক্ষে তারা যাতে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকে সেটা নিশ্চিত করুন। আর কিছু সৃজনশীল সংবাদ প্রচার করতে না পারলে যাতে দুশ্চরিত্রা নর্তকী, নায়িকা বা চরিত্রহীন নায়কদের খবর প্রকাশ করে যাতে মানুষকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করা বন্ধ করে। এতে কি ক্ষতি সেগুলো মনোবিজ্ঞানী বা সমাজবিজ্ঞানী বলবেন।

৯২. আমাদের নদীগুলো পুনঃখনন করা দরকার এবং এমনভাবে যাতে বর্ষা হোক বা শীত সব সময়ই পানি থাকে আর বর্ষার সময় যাতে বন্যা না হয় সে ব্যবস্থা থাকে। পানি ধারণের জন্যে কৃত্রিম লেক তৈরি করা যেতে পারে। এই সমস্ত কাজের জন্যে একটা দীর্ঘমেয়াদি, সুন্দর পরিকল্পনা প্রয়োজন যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এসব দেখে গর্ব করতে পারে যে না আমরা তাদের জন্যে অনেক কিছু রেখে গিয়েছি।

৯৩. সুন্দরবন রক্ষায় আরও গুরুত্ব দিতে হবে। দরকার হলে নতুন করে গাছ লাগাতে হবে, এসব অনেক শুনেছি কিন্তু কাজ দেখতে পাইনি, এবার কাজ দেখতে চাই। কৃত্রিম বনায়ন চাই। পশুপাখিদের অভয়ারণ্যের আয়তন বৃদ্ধি চাই। আর সারা দেশে গাছ লাগানোর জন্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক ঘণ্টায় ১০ লক্ষ গাছ লাগিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়লাম কিন্তু একটা গাছও টিকলো না— এমন চাই না।

৯৪. মহাকাশ গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, স্যাটেলাইট যাতে নিজেরাই বানাতে পারি সেই উদ্যোগ নিতে হবে। সম্ভব কিনা জানি না তবে রকেটের বিকল্প খুঁজতে হবে।

৯৫. আমি নিজেই একজনকে চিনি যে খুব ভালো ড্রোন বানায়, আর আরেকজন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হয়েছে, এসব প্রতিভাকে কাজে লাগাতে হবে, এত ছোট বয়সে এসব করছে আরও ট্রেনিং দিলে অন্যকিছু করবে। এদের জন্যে আলাদা রকম ল্যাব, যন্ত্রপাতি, সামরিক সহায়তা যা কিছু দরকার সব দিতে হবে। তারা আগে থেকেই অনুপ্রাণিত আপনাদের কাজ তাদের চিহ্নিত করা এবং সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া। তারপর তারা নিজের স্বপ্নের পিছনে নিজেই দৌড়াবে। এটা শুধু ড্রোনের ক্ষেত্রে বললাম, এটা যেকোনো কিছুই হতে পারে। আপনাদের সাহায্য তাদের আটকে থাকা কাজগুলো থেকে তাদেরকে ছাড়িয়ে দিবে আর নতুন কাজের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

৯৬. সামরিক খাতে অস্ত্র গবেষণা এবং তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সবদিকে তো এখনই সম্ভব না, তবে যেসব করা সম্ভব সেসবে দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে।

৯৭. রাষ্ট্রের ইতিহাস সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এখানে থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। এটা তো আগে থেকেই করে, তবে এই ইতিহাস যাতে নিরপেক্ষ বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মাধ্যমে লেখানো এবং সংরক্ষণ করা হয়, যারা চলমান বিষয় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা রাখে। কোনো স্বৈরাচার এসবের পরির্বতন যেন করতে না পারে। আর এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমাদের এই স্মার্টফোনের যুগের প্রথম আন্দোলন। অনেক কিছুই মোবাইলে এখনো ধারণ করা আছে হয়তো অনেকের, এসব একত্রিত করে সংরক্ষণ করতে হবে ডিজিটাল মাধ্যমে এবং সাথে ইতিহাসও লিখে রাখতে হবে।

৯৮. এবার আসি পুলিশের পোশাকে, আমার মা বলেছে বাবা তুমি তো লেখালেখি করো তো একটা লেখা লিখো পুলিশের পোশাক নিয়ে। যে পোশাক পরে পুলিশ আবু সাঈদকে হত্যা করছে সেই পোশাকের পরিবর্তন করতে হবে।

৯৯. পুলিশ জনগণের আস্থা হারিয়েছে, বিশাল আকারের দুর্নীতি, গুম খুন, হত্যাযজ্ঞ সবকিছুতেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ— এসবের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে এবং ট্রেনিংয়ের সময় তাদের পূর্ববর্তীদের অপকর্ম সর্ম্পকে জানতে হবে এবং এসব যাতে আর না ঘটে সেসবের জন্যে যা করা দরকার, সেসব ট্রেনিং দিতে হবে।

১০০. পুরো দেশে যা যা ঘটছে, সবকিছুর জন্যে একটি ডাটাবেজ এবং আরেকটি ব্যাকআপ ডাটাবেজ রাখতে হবে যেটা হবে বিলিয়ন ডলারের চেয়েও বড় সম্পদ। যে যখন যা কিছু করছে সব রাখতে হবে সেখানে। পশ্চিমা দেশগুলোতে ২০-৩০ বছর পরও হত্যাকাণ্ডের কারণ, খুনিসহ, সব খুঁজে বের করতে পারার খবর পাওয়া যায়। এই ডাটাবেজ হবে সেটারই সহায়ক। কোন সরকার আসে আসুক সকলের কর্মকাণ্ড সেখানে থাকবে। বিচার তো হবেই ইনশাআল্লাহ জীবিত হোক বা মৃত বা মৃত্যুর পরে।

এসব আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, এখন একসাথে হয়তো সব মনে নেই। আরও আসবে ইনশাআল্লাহ যদি আপনারা চান।

শেষে বলতে চাই, আমরা পরিবারের জন্য যেমন কঠোর পরিশ্রম করি, রাষ্ট্রের উচিত পরিবারকে নিয়ে যাতে আমাদের আর কোনো দুশ্চিন্তা করতে না হয় সেই ধরনের ব্যবস্থা করা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এসব মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করুক, আমরা রাষ্ট্রের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করব ইনশাআল্লাহ। এতেই দুর্নীতি কমবে আর বাড়বে দেশপ্রেম। ‘বাংলাদেশ আগে’— এই নীতি নিয়ে আসুন।

আমার বাবা-মা সাধারণ মানুষ, এখানে উল্লেখিত সমস্যাগুলোর অনেকগুলোই তাদের ভুগিয়েছে। এরকম শত শত বাবা মা এসব থেকে কষ্ট পেয়েছেন। তারা যেহেতু আমাকে কয়েকটা আইডিয়া দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে বলেছিলেন আর আমি বাকিগুলো লিখে ফেললাম অতীতের স্মৃতি থেকে।

গোলাম সারোয়ার সাইমুম, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগেরশিক্ষার্থী
সহকারী প্রেস সেক্রেটারি, কম্পিউটার অ্যান্ড প্রোগ্রামিং ক্লাব, Email: [email protected]

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর