রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

খুব কাছ থেকে দেখা বদল

উম্মুল ওয়ারা সুইটি
প্রকাশিত: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

খুব কাছ থেকে দেখা বদল

সাংবাদিকতার শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ বিট করার কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেকভাবে দেখার সুযোগ হয়েছে। একজন সাদামাটা স্বচ্ছ রাজনীতিক এবং সবার ভালোবাসার আস্থার একজন মানুষ কিভাবে বদলে গেল তা খুব কাছ থেকে দেখেছি।

সরকারে না থাকা এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত পর্যায়ে খুব যে বদলেছেন তা আমি মনে করি না। এক মোহ আর সব কিছুই সঠিক হচ্ছে— এই বার্তা দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সবাই দিয়েছে।


বিজ্ঞাপন


এত সময় ধরে দেশের প্রধান থাকা আর সব ঠিক আছে সব ঠিক আছে, এটা কোনো ব্যাপার না, ওটা কোনো ব্যাপার না। সব সামলে নেব, নিজেদের মতো করে খবরের সেন্সর— এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি খুব বেশি জড়িত ছিলেন না।

একজন প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন যখন শুধুই তার জন্মদিন কিংবা কোনো বড় পুরস্কার পাওয়া কারও স্মৃতিচারণের মতো হয় তখন কি বার্তা পান একজন সরকার প্রধান? প্রশাসনিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক এবং দল— সবই যখন একজন মানুষের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকে তখন সবকিছু ভেঙে পড়ারই কথা।

একবার, দুবার, তিনবার— না তাতেও হয়নি, টানা চতুর্থবার কিংবা টানা আরও আরও বার থাকতেই হবে। কারণ শেখ হাসিনা সামনে থাকলে আমাদের সকলের লুটপাট করতে সুবিধা।

আর একটু ভিন্নভাবে যারা সরকারের সমালোচনা করে এবং দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করে তাদের তুলোধুনো করে এবং বিষোদগার করে সংকট তৈরি করার দায় আজ সবাই নিচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন সারা পৃথিবীতেই একটা গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। সাংবাদিকদের সঙ্গে এদিন সরকার প্রধানের বড় রকমের বিনিময় হয়।

দেশের কোনো বিষয়ে ভালো কিংবা মন্দের চুলচেরা বিশ্লেষণ মাঠের মানুষের পক্ষ থেকে সাংবাদিকরা সরকার প্রধানের কাছ থেকে তুলে আনার চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশের রাজনীতির পট পরিবর্তন সবসময়ই চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। এটি নিয়তি না আমাদের চারিত্রিক ধারাবাহিকতার ফল!

টানা চতুর্থবারের মধ্যে প্রথমবার যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন, তার প্রথম সংবাদ সম্মেলন কেমন ছিল? সামনের সারিতে সম্পাদকদের তো দেখা যেত না। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কথা বলার এই সংস্কৃতি মূলত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকেই।

গত ৫৩ বছরে অনেক রকমের সরকার এসেছে। সংবাদ সম্মেলনের চর্চা ছিল। তবে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে।

যে কথা বলছিলাম, ২০১২ সালের পর থেকেই শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের আঙ্গিক পরিবর্তন হতে শুরু করে। আরও একটি বলে কথা বলে রাখা প্রয়োজন, অনেকেই মনে করেন সাংবাদিকরা কেন কোনো দলের পক্ষে থাকবেন বা কোনো সরকার প্রধানের পক্ষে থাকবেন?

আমি এই কথাটির তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সাংবাদিকদের দেখা, লেখা এবং বলা— এ বিষয়গুলো একদম আলাদা। আদর্শিক বা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের বাইরে এই পৃথিবীতে খুব কম মানুষ আছে। আর সাংবাদিকতার একটি বড় পক্ষপাতিত্ব আছে। এর এক জটিল সমীকরণ আছে। কখনও কখনও জাতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাকে চরম পক্ষপাতিত্বের জায়গায় যেতে হয়। সেটা ১৯৭১ থেকে শুরু করে এখনও চলমান।

তাই পক্ষপাতিত্ব দিয়ে আমাদের বিরোধে জড়ানোর সুযোগ নাই। আরেকটি সংবাদ সম্মেলনকে ধীরে ধীরে প্রশংসা এবং স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে রূপ দেওয়ার যে রূপরেখা তার জন্য শুধু সাংবাদিকদের দায়ী করলে চলবে না। এটাও রাজনৈতিক খারাপ চিন্তার ফসল বলে আমি মনে করি।

আর টানা চতুর্থবারের আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকেই অতি বাচালতা আর অহংকারী মনোভাব দেখিয়েছি। সেই সুযোগটা নিয়েছে একেবারেই বোধ বুদ্ধিহীন কয়েকজন মানুষ। সবকিছু ঠিকঠাক করে সংবাদ সম্মেলন সাজানো একটা মিডিয়া ট্রায়ালের মতো।

সাংবাদিকতার বাইরে একজন সচেতন এবং নিরপেক্ষ নাগরিক হিসেবে আমি বলব, বাংলাদেশের যেসব সরকার এসেছে তার মধ্যে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং আন্তর্জাতিক মহলে দেশটাকে যে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার বেশিরভাগ ভাগীদার শেখ হাসিনা এবং তার সরকার।

কিন্তু সমালোচনার ঊর্ধ্বে অবস্থান করতে যেয়ে তাকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে হয়েছে।

Sweety_Op_Ed--01

যাই হোক, সংবাদ সম্মেলনের কথায় ফিরে আসি। আমরা যারা অফিস আদেশের কারণে বা পেশাগত কারণে এই বিট করেছি বা করছি তাদের ছিল করুণ দশা।

হাত উচিয়ে রাখতে রাখতে আর মাইকের সন্ধানে পাওয়া যেত না। কোথা থেকে যেন গণভবনের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে তারারা এসে জুড়ে বসত। উত্তরের ইঙ্গিতসহ তারা প্রশ্ন করত।

শেষের দিকে এমন হয়েছে গত পাঁচটা বছর, প্রতিটি সংবাদ সম্মেলনে ড. মুহম্মদ ইউনূস, তারেক রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া প্রশ্নই আসত না।

মাঠের সাংবাদিকরা পেছনের সারিতে বসে অপেক্ষা করতো যদি একটু মাইকটা পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে শেখ হাসিনা নিজেই বলতেন, এবার পেছন থেকে কিছু প্রশ্ন শুনতে চাই কিংবা বলতেন নারীদের মধ্যে কাউকে দেন। প্রতিবারই রিপোর্টাররা নানা ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করতে প্রস্তুত থাকতেন। গত ১৫ বছরে কয়েক হাজার প্রশ্ন জমেছে। সেগুলোর উত্তর যদি পাওয়া যেত আজ বোধহয় দেশটা অন্যরকম থাকতো।

কত যে আবদার ছিল সরকার মহলের পক্ষ থেকে, এ বিষয় বারণ, ওটা বলা যাবে না। ওই পক্ষ, এই পক্ষ।

ফাইনালি আমার দেখা মতে, কতিপয় সাংবাদিক যাদের সংখ্যা খুবই কম, তাদের মধ্যেও শুধুই সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত থাকা নিঃস্বার্থ সাংবাদিকের সংখ্যা পাওয়া যাবে কি, যতটা পাওয়া যাবে সরকার প্রধানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, আমলাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সুযোগ ও লুটপাট সন্ধানীদের।

উম্মুল ওয়ারা সুইটি, সিনিয়র সাংবাদিক

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর