‘বিদ্রোহী’ কবিতা মজলুমের পক্ষে অনিন্দ্য, অদ্বিতীয় ও দুর্বিনীত উচ্চারণ। দুঃশাসক ও অত্যাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অনবদ্য সাহসের জ¦লন্ত বারুদবিষ্ফোরণ। নির্যাতন, নিপীড়ন, শাসনের নামে শোষণ, দখলতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানবতন্ত্র ও মানবিকতার সমুজ্জ্বল চেতনার রাজধানী বিদ্রোহী কবিতার প্রতিটি শব্দ। এই কবিতাটির শব্দচয়ন মার মার কাট কাট হলেও মূলত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য ও সততার উচ্চারণই এখানে মূল বিষয়। মানুষ ও মানবতা ছিল নজরুলীয় আদর্শের কেন্দ্র। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিতরণ তার ‘বিদ্রোহী’কবিতার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
‘শেষের কবিতা’ উপন্যাস যেমন রবীন্দ্রনাথের সমগ্র সাহিত্য জীবনের সারাংশ তেমনি ‘বিদ্রোহী’ কবিতা নজরুল সাহিত্যের সারাংশ। এই কবিতায় নজরুলের বিশ্বাসের সত্ত্বা সৎ সাহসে উদ্ভাসিত। বর্তমান বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত। শাসক ও শোষিত। সাম্প্রদায়িকতা, অহষ্ণিুতা, মিথ্যা, কপটতা, ভণ্ডামি, ফেরেববাজি, অত্যাচার, অনাচার, খুন, গুম, হত্যা, লুন্ঠন, রাহাজানি, সৎ ও উত্তম মানুষকে একা করে ফেলা, দলগতভাবে অপপ্রচার চালানো, উত্তম চরিত্রের মানুষকে ভিকটিমাইজ করা, কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং সর্বোপরি ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি, এসবই দুঃশাসকদেরই সৃষ্টি। নজরুলের যুগেও এগুলো ছিল। এখনও বিশ্বব্যাপী ভিন্ন প্রযুক্তিতে বিদ্যমান। নজরুলের জীবদ্দশাতে তারই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে জুলুমের অবসান হয়। এখন নজরুল বেঁচে নেই। তাকে নিয়ে অগ্নিগর্ভ আলোচনা ও অন্যায়ের প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার মানুষও নেই। তাই বিশ্বব্যাপী ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
বিজ্ঞাপন
ক. ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় নজরুল সত্ত্বা
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় নজরুল সত্ত্বা মানবতার জয়গানের নামান্তর। এই কবিতায় কবি নজরুল মানুষের মহত্ত্ব উচ্চারণে নির্ভিক, সততায় আপোষহীন, অন্যায়ের প্রতিবাদে দুঃসাহসী, অবিসংবাদিত অসাম্প্রদায়িক, শাশ্বত মানবপ্রেমে সমুজ্জ্বল এবং সত্য প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অঙ্গীকারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অপশাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বমানবের শক্তিশালী অভিব্যক্তি বিদ্রোহী কবিতা। যুদ্ধের তেজোদীপ্ত ভাষার অসাধারণ প্রকাশ এই কবিতাটি। শীলিত শব্দের অনন্য প্রয়োগ পরিদৃশ্যমান। মূলত নজরুলের মন ও মননের, বিশ্বাস ও আস্থার যুথবদ্ধ প্রামাণ্য দলিল এই কবিতার প্রতিটি চরণ, যা নজরুল সত্ত্বার প্রমত্ত পরিচয়জ্ঞাপক।
আহমদ রফিকের মতে, ‘বাস্তবিক পরিশীলিত ও পরিমার্জিত রাবীন্দ্রিক-বিদ্রোহের সুচারু সূক্ষ্মতায় এবং সার্বিক বিচারে সমকালীন বাংলা সাহিত্যে বিরাজমান পরিমিত ও গীতধর্মী হার্দ্য উচ্চারণের পটভূমিতে নজরুলই প্রথম সংযোজন ঘটালেন দামামার ক্রুদ্ধ ধ্বনির, তেজোদৃপ্ত আগ্নেয় উচ্চারণের।’
আবার ধ্রুবকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ট কবিতা ‘বিদ্রোহী’তে কবিচিত্তের প্রবল জাগরণের সুর শত তরঙ্গ ভঙ্গে বিপুল উচ্ছ্বাসে ও আবেগে প্রকাশিত হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
বস্তুত এটাই নজরুলীয় সত্তা, যেখানে সুরের প্রমত্ত উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত হৃদয় দখলদার অসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রতিনিয়ত।
১. মানুষের মহত্ত্ব উচ্চারণে নির্ভীকতা: মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। পৃথিবীর জাগতিক কোনো কিছুর কাছে কুর্নিশ করা মানুষের স্বভাব হতে পারে না। মানুষের চিন্তা, চেতনা, বুদ্ধি বিবেক সীমাহীন। তাই সসীমের কাছে আত্মসমর্পণ সম্মানজনক নয়। শত প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষকে দাঁড়াতে হবে মহীরুহের ন্যায়। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ তমাসাচ্ছন্ন রাত কিংবা জলোচ্ছ্বাসে জাগরিত ভয়ংকর সমুদ্রেও মানুষকে মানুষ হয়েই থাকতে হয় অটল, অবিচল। মানুষ সবার ঊর্ধ্বে। তাই মানুষের পরিচয় দিতে গিয়ে ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় নজরুল লিখলেন,
‘বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি’ আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর-
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!’
২. অন্যায়ের প্রতিবাদে দুঃসাহসী: অন্যায় অনাচার ও অসততার বিরুদ্ধে নজরুল সর্বত-সোচ্চার। সত্য-সততায় আপোষহীন। সততা ও সত্যের নিত্যসঙ্গী ছিলেন নজরুল। অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-শাসন, স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে তিনি মহাবীর। এক্ষেত্রে নজরুল মৃন্ময়, চিন্ময়, অজর, অমর, অক্ষয়, অব্যয়, চির-দুর্জয় এবং পুরুষোত্তম সত্য। এই চির-দুর্জয় কবির পুরুষোত্তম সত্য সাধনাই হলো অন্যায়বিলুপ্ত বিশ্ব বিনির্মাণ। আহমদ রফিকের মতে, ‘তাঁর বিদ্রোহ সাধারণভাবে সামাজিক বৈষম্য, শোষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনার প্রকাশ।’ নজরুলের অর্গলহারা উচ্চারণ তাই এমন,
আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়, আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়।
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মাথিয়া ফিরি স্বর্গ-পাতাল মর্ত্য!’
৩. অসাম্প্রদায়িকতায় অনবদ্য: নজরুল বিদ্রোহী কবিতায় হিন্দু পুরাণ, মুসলিম ধর্মীয় বিশ্বাসের উপমা ও গ্রীক পুরাণ ব্যবহার করে মূলত তার পাণ্ডিত্য প্রকাশ করেননি; বরং এসব ব্যবহার অত্যন্ত সুচিন্তিত ও অসাম্প্রদায়িকতার বাস্তব প্রকাশ। তাছাড়া ‘বিদ্রোহী’কবিতায় বারবার আমি ব্যবহার করে এক অসাম্প্রদায়িক প্রতিবাদী মানুষের প্রতিচ্ছবি নির্মাণ করেছেন, যে অসাম্প্রদায়িক মানুষ ধর্ম-বর্ণ, দেশ-কালের ঊর্ধ্বে উঠে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলবে। মানুষের জয়গানই হবে সেখানে মুখ্য। একটি কল্যাণমূলক বিশ্বের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন কবি। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার পরতে পরতে সেই চিন্তারই প্রতিফলন দৃশ্যমান।
৪. শাশ্বত প্রেমে সমুজ্জ্বল: বিদ্রোহী কবিতায় নজরুল সত্ত্বার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রেমের প্রকাশ। মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক তিনি স্বল্পশব্দের এক পংক্তিতে তুলে এনেছেন। ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর রণ-তূর্য;’ এক হাতে বাঁশি। সুরসংগীতের অপার শান্তি। আর হাতে রণতূর্য। অন্যায়ের প্রতিবাদ। জুলুমবাজের সঙ্গে মহাসংগ্রামের প্রতীকী প্রকাশ। অর্থাৎ শুধু সংগীতের নরম সুরেই নির্বিবাদী জীবন কাটাতে চাননি কবি। বরং ভালোবাসা ও যুদ্ধের এক অসামান্য মেলবন্ধন করেছেন।
কবির চৌধুরীর মতে, ‘তাঁর বিদ্রোহের মধ্যে কি একইসঙ্গে একটি রোমান্টিক চেতনা ও আধ্যাত্মিক ভাব সুস্পষ্ট রূপ পরিগ্রহ করে না? স্বাধীনতা, বিদ্রোহ এবং আত্ম-উপলব্ধির অবিচ্ছেদ্য পারস্পারিক সম্পর্কের কথা দ্বিধাহীন ভাষায় রূপ পেয়েছে।’
৫. সত্য প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অঙ্গীকার: সত্যসাধক নজরুল মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন শক্ত-পোক্ত ও প্রবল দুর্জয়। অন্যায় অবিচার, দুঃশাসন ও অপশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে তিনি ক্লান্ত। কিন্তু তবুও তিনি অবিচল। তিনি হাজার বাধার বিন্ধ্যাচলকে ভাঙবেই। যতদিন পৃথিবীতে অন্যায় অবিচার রয়েছে ততদিন তার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ চলবে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় তিনি সপ্রাঞ্জলে অব্যঞ্জনায় লিখলেন,
‘মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না-
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।’
খ. বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট
বর্তমান বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদিদের অত্যাচারে অস্থির। সাধারণ মানুষের জীবন নিদারুণভাবে বিপন্ন। প্রতিদিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দখলতন্ত্রের বলি হচ্ছে লক্ষ কোটি মানুষ। ফিলিস্তিন, ইউক্রেন, ইরাক, মিশর, সিরিয়া, জর্ডান, ইয়েমেন, কাশ্মির, উইঘুর, আরাকান একেকটা মানুষ নিধন অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। যে শিশুটি পৃথিবীকে বোঝে না, মায়ের পেটে অলস বসে থাকে, সেও নিরাপদ নয় এতোটুকু। নারী-শিশু অসহায়ের কান্না এদের শ্রবণ-ইন্দ্রিয়কে ভেদ করতে পারে না। কারণ আর্থিক স্বার্থ যেখানে মুখ্য মানব জীবনের মূল্য সেখানে গৌণ।
১. সাম্রারাজ্যবাদী যুদ্ধবাজের মারণাস্ত্রের শিকার মানুষ: যুদ্ধবাজের নির্মম আক্রমণে মানুষ ও মানব সভ্যতা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পারমাণবিক বোমার সুইচে মিলি সেকেন্ডের চাপেই শেষ হয়ে যেতে পারে বিশ্ব এক মুহূর্তেই। এক সময় যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল মিথ্যা ধ্বংস করে সত্য প্রতিষ্ঠা। অমানবিক সমাজ নিঃশেষ করে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার। আর এখন যুদ্ধ মানে অসত্য অন্যায় প্রতিষ্ঠা। নিরাপরাধ নিরীহ মানুষ হত্যা। এসব দেখে নজরুল খেপে যান। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লিখেছেন, ‘নজরুলও দুনিয়ার চারিদিকে জালেমের জোরজুলুমে নর-নারীর আর্তনাদ শুনে ক্ষেপে গিয়েছিলেন।’
নজরুল ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় লেখেন, ‘আমি উপড়ি’ ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব-সৃষ্টির মহানন্দে।’অধীন বিশ্ব বলতে তিনি পৃথিবীর জিম্মি অবস্থাকে নির্দেশ করেছেন। বিশ্ব মোড়লেরা বিশ্বকে নিজেদের পিতৃসম্পত্তি মনে করেন। মানবতাবিরোধী মোড়লদের হাত থেকে তিনি বিশ্বকে মুক্ত করার সুতীব্র আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ক্ষমতা সাংঘাতিক নেশা সৃষ্টি করে। ক্ষমতাসক্তরা কখনও ন্যায়বিচার করেন না। বস্তুত ন্যায়বিচার করার সৎ সাহসও তাদের থাকে না। অবৈধভাবে দেশ ও বিশ্বকে শাসন ও শোষণ করার জন্যই স্বৈরাচাররা অস্ত্রের আঘাত হানে নিরীহ জনপদে। বিশ্ব সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রতিবাদী মানুষকে জিম্মি করে রাখে। কাজী নজরুল এসবের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করতেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লেখেন।
গ. অন্যায় নিরসনের উপায়: পৃথিবীর এই যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ করার জন্য প্রয়োজন শান্তি আন্দোলন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নজরুলীয় বিদ্রোহ ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন সমগ্র বিশ্বে, যে বিদ্রোহে মানুষ পাবে তার ন্যায্য অধিকার। ধনী-গরিব, চাষী-তাঁতি, কুলি-মজুর, সাদা-কালো, মালিক-শ্রমিক সবাই একই শান্তির পতাকা তলে খুঁজে পাবে জীবনের সত্যিকার বোধ।
একটি অসাম্প্রদায়িক শাসনব্যবস্থাই একটি অসাম্প্রদায়িক পৃথিবী উপহার দিতে পারে। একটি সাম্রাজ্যবাদমুক্ত সমাজই সত্যিকার মানবিক সমাজ। এর বাইরের সমাজের নাম কপট-সমাজ, যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কপটতার জয়জয়কার। এই ধরনের কপট-সমাজের নেতারা মুখে মুখে যতই শান্তির বাণী প্রচার করুক না কেনো, অন্তরে তাদের এটম বোমার বসবাস।
এসব কপটতা থেকে বাঁচতে হলে নজরুল চর্চা বাড়াতে হবে। কারণ নজরুলের ‘বিদ্রোহ’ শুধু ব্যক্তিবিরোধের বিদ্রোহ নয়। বরং তার বিদ্রোহ ব্যাপক ও বিস্তৃত। সমগ্র বিশ্বের কুশাসনের বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহ। সমগ্র বিশে^র নিপীড়িত ও পরাধীন জাতির মুক্তির জন্য তার বিদ্রোহ। এই ব্যাপারে প্রয়াত সাহিত্যিক কবির চৌধুরীর মতও প্রণীধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘পরাধীনতার জ্বালা নিঃসন্দেহে নজরুলের বিদ্রোহ-বহ্নি বহুলাংশে প্রজ¦লিত করেছে, কিন্তু শুধু দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভের তাঁর বিদ্রোহী-চিত্তের তৃপ্তি হত না। তাঁর বিদ্রোহের রূপ ছিল আরও ব্যাপক।’
নজরুলের বিদ্রোহ তাই দেশ কালের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ববিদ্রোহ। সর্বজনীন এই দ্রোহের মাধ্যমে মানবাধিকার অনুপুংখভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে এটাই ছিলো তার পরম প্রত্যাশা। তাই সোজা কথায় তিনি ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় লিখলেন,
‘আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!’
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার উপযোগিতা সীমাহীন। নজরুলের অসাম্প্রদায়িক সত্ত্বার শান্তিযুদ্ধের প্রবল প্রয়োজন; যে যুদ্ধে সৃষ্টি হবে একটি মানবিক বিশ্ব। মানুষ মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে।
লেখক: নজরুল গবেষক

