রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মায়ের ডাকে সাড়া দিতে নদী সাঁতরেছিলেন বিদ্যাসাগর

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

মায়ের ডাকে সাড়া দিতে নদী সাঁতরালেন বিদ্যাসাগর

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। তার আসল নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদ্যাসাগর উপাধি। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন তিনি। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তার। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। 

১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির বীরসিংহ গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এই গ্রামটি অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত হলেও সেই যুগে ছিল হুগলি জেলার অন্তর্ভুক্ত। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আদি নিবাস ছিল অধুনা হুগলি জেলার বনমালীপুর গ্রামে। 


বিজ্ঞাপন


ঈশ্বরচন্দ্রের পিতার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতার নাম ছিল ভগবতী দেবী। মায়ের প্রতি ঈশ্বরচন্দ্রের ঐকান্তিক ভক্তি ও বজ্রকঠিন চরিত্রবল বাংলায় প্রবাদপ্রতিম। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মোদ্যম ও বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি।

মনে করা হয়, বিদ্যাসাগরের সংস্কার আন্দোলন ও মুক্তচেতনার নেপথ্যে তার মা ভগবতী দেবীর বিশেষ প্রেরণা ছিল। বীরসিংহ গ্রামে তিনি মায়ের নির্দেশে বিদ্যালয়, অবৈতনিক ছাত্রাবাস ইত্যাদি গড়েছিলেন। তার বিধবা বিবাহ প্রবর্তনেও ভগবতী দেবীর বিশেষ অবদান ছিল। তিনিই পুত্রকে আদেশ করেছিলেন, বিধবাদের দুঃখনিবৃত্তির বন্দোবস্ত করতে। 

এই মায়ের ডাকে একবার তিনি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ দামোদর নদ সাঁতরেও পার হয়েছিলেন বলে একটি গল্প খুব প্রসিদ্ধ। গল্পটির নাম ‘মায়ের ডাক’। গল্পের মূলকথা হলো- ঈশ্বরচন্দ্রের মা অসুস্থ, সন্তানকে বাড়ি যেতে পত্র লিখেছেন। এখন মায়ের ডাকে সাড়া দিতেই হবে। অফিসের বড় কর্তার কাছে ছুটি চেয়ে বিফল হলেন। ছুটি মঞ্জুর হলো না। তাই চাকরি ছেড়ে দিতে হলো ঈশ্বরচন্দ্রকে।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে। শুরু হয়েছে ভীষণ ঝড়-বাদল। দামোদরের তীরে পৌঁছে দেখলেন নদী পার হওয়া মতো একটি খেয়া নৌকাও ঘাটে নেই। কিন্তু তাকে যে মায়ের কাছে যেতেই হবে! ঝড়ের রাতে খরস্রোতা দামোদার নদী সাঁতরে পাড়ি দিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। শরীর খুব ক্লান্ত। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালেন মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে মা ভগবতী দেবীর কাছে। মা ছেলেকে দেখে খুব খুশি। বললেন, আমি জানতাম, তুই আসবি।


বিজ্ঞাপন


মায়ের ডাকে এভাবেই সাড়া দিয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। মা ভগবতী দেবী ভাগ্যবতীই ছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ছেলে কোলে ফিরে এসেছিল। কিন্তু হায়, বর্তমান সমাজে এমন কিছু অভাগা মা আছেন, যাদের দিনাতিপাত হয় চোখের পানিতে, প্রতীক্ষায়। তাদের ডাক পৌঁছায় না স্বজনদের কাছে।

মায়ের দোয়া কতবড় বিষয় জানলে কেউ মাকে অবজ্ঞা, অসম্মান করত না। মায়ের প্রার্থনার কারণে সন্তান অনেক বড় হয়, সম্মানিত হয়। তারই প্রমাণ ঈশ্বরচন্দ্র। বিদ্যাসাগর আজও এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে তার স্মৃতিরক্ষায় স্থাপিত হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী কলকাতার আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বিদ্যাসাগর সেতু তারই নামে উৎসর্গিত। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি বাংলা কর্তৃক পরিচালিত জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০ জন বাঙালির মধ্যে অষ্টম তিনি।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে আছে ‘বর্ণপরিচয়’, ‘সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা’, ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’ ইত্যাদি। অনুবাদ : ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’। সম্পাদনা : ‘অন্নদামঙ্গল’, ‘শিশুপালবধ’, ‘বাল্মীকি রামায়ণ’, ‘রঘুবংশম’, ‘মেঘদূতম’, ‘উত্তরচরিতম’। তিনি ১৮৯১ সালে ২৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর