রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বায়ুদূষণের হটস্পট দক্ষিণ এশিয়া!

বোরহানুল আশেকীন
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩৬ এএম

শেয়ার করুন:

বায়ুদূষণের হটস্পট দক্ষিণ এশিয়া!
বোরহানুল আশেকীন (ফাইল ছবি)

আইকিউ এয়ার, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা। যারা বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বায়ুমান পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এই সংস্থার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ১৪ নভেম্বর, সকাল ৯.১৫ মিনিটে বিশ্বে বায়ুদূষিত শহরের তালিকায় এক নম্বরে ছিলো পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে যথাক্রমে ভারতের রাজধানী দিল্লি ও কলকাতা। চতুর্থ অবস্থানে ইরাকের বাগদাদ আর পঞ্চম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। 

কিন্তু প্রশ্ন বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোতে কেন এতো বায়ুদূষণ। এরজন্য দায়ী করা হচ্ছে শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং নিম্নমানের যানবাহন ও জ্বালানী ব্যবহার। ভারতে মোট বায়ুদূষণের ৫০ ভাগ হয় শিল্পকারখানা থেকে। ২৭ ভাগ হয় যানবাহন থেকে, ১৭ ভাগ বায়ুদূষণ হয় শস্য পোড়ানোর কারণে। আর ৭ ভাগ হয় বাসাবাড়ির রান্না থেকে। বায়ুদূষণের কারণে বিভিন্ন জটিল রোগে ২০১৯ সালে ১৬ লাখের মতো মানুষ মারা গেছেন।


বিজ্ঞাপন


পাকিস্তানেও বায়ুদূষণ হয়ে থাকে যানবাহন এবং শিল্প কারখানা থেকে। এছাড়া শীতকালে খড় পোড়ানোর কারণেও হয় বায়ুদূষণ। একটা সময় লাহোরকে বাগানের শহর বলা হতো, কিন্তু যানবাহনের কারণে এই শহর এখন ধোঁয়ার নগরে পরিণত হয়েছে। যানবাহনে ব্যবহার করা হয় অতি নিম্নমানের জীবাশ্ম জ্বালানি। একইসঙ্গে বায়দূষণ হচ্ছে ইটের ভাটা থেকে। এছাড়া শিল্প কারখানায় মানা হচ্ছে না বিধি বিধান, যে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে মানা হচ্ছে না আইন কানুন। ফলে পাকিস্তানে বাড়ছে বায়ুবাহিত রোগীর সংখ্যা। সিওপিডি, ব্রঙ্কাইটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন দেশটির নাগরিকরা। এছাড়া দূষিত বায়ুর অতিক্ষুদ্রকণা প্রবেশ করছে রক্তে। ফলে হার্ট অ্যাটাকসহ অন্যান্য জটিল রোগের প্রকোপ বাড়ছে দেশটিতে।

বাংলাদেশের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ শিল্প কারখানার কালো ধোঁয়া, যানবাহন, ইটের ভাটা ও নির্মাণ কাজ। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র বলছে গেল ৭ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে বায়দূষণ বেড়েছে প্রায় ১৭ ভাগ। ২০২১ সালে অতিমাত্রার দূষণের তালিকার ছিল গাজীপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ ১৮টি জেলা। আর মধ্যম মাত্রার দূষণ ছিল ৩৬ জেলায়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ঢাকায় ২০ দিন বায়ুমান ছিল অস্বাস্থ্যকর, একদিন ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। আর নয় দিন ছিল মোটামুটি মানের। ফলে এই সময়ে ঢাকায় বেড়েছে বায়ুবাহিত রোগ। প্রতিদিন হাসপাতালে আসছেন রোগীরা।

ঢাকার ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, হাসপাতালটির অ্যাজম সেন্টারের তথ্য বলছে, গেল সেপ্টেম্বরে হাপানির চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৪২ জন, অক্টোবরে যা বেড়ে হয় ৭৩৪ জনে। অথচ ২০২২ সালে একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ২২৩ ও ৫১৪ জন।


বিজ্ঞাপন


তবে শুধু নিজেদের দোষে নয়, দেশে বায়ূদূষণের দায় বর্তায় প্রতিবেশি দেশের ওপরেও। পাকিস্তানের কারণে ভারতের পাঞ্জাবে বায়ুদুষণ হয় ৩০ ভাগ, আর ভারতের কারণে বাংলাদেশের বৃহৎ শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা শহরে বায়ুদূষণ হয় ৩০ ভাগ।

আর এসব কারণে বলা হয়ে থাকে বিশ্বে বায়ুদূষণের হটস্পট দক্ষিণ এশিয়া। দক্ষিণ এশিয়ার ৬০ ভাগ মানুষ বায়ুদূষণের নগরে বসবাস করছে। বায়ুদূষণের কারণে এই অঞ্চলে বিরুপ প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে। বায়ুদূষণের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, ২০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী এই বায়ুদূষণ। 

বায়দূষণ রোধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং নীতিমালা তৈরি করেছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে সামান্যই। কারণ বায়ূদূষণ সীমানা মানে না, মানে না কাঁটাতারের বেড়া। তাই সমাধানে এশিয়ার দেশগুলোকে কাজ করতে হবে এক সঙ্গে। যদি একটি দেশ বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়, তবুও কমবে না বায়ুদূষণ। কারণ, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকেও একই রকম পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।  তাই সমস্যা সমাধানে ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে এক অভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে এবং সেইসব নীতিমালা বাস্তবায়নে নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, চ্যানেল 24

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর