বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

কোটি টাকার ফুটপাত বনাম ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ

হাসান আল-মাহমুদ
প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

কোটি টাকার ফুটপাত বনাম ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা নিউমার্কেট। ঢাকা কলেজ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রায়ই ছোটখাটো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার রাত ১২টার পরে তেমনি কথা কাটাকাটির জেরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার হয়। যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত তেমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে নিউমার্কেট এলাকায়। শিক্ষার্থীরা সেখানকার দোকানে কমদামে কেনাকাটা করবে, হোটেলে খেয়ে অর্ধেক বিল দিয়ে বের হয়ে আসবে, কিছু শিক্ষার্থী এমনটা তাদের অধিকার বলেই মনে করে। তবে ঝামেলা বাঁধে কিছু ছাত্র নামধারী সুবিধাভোগীর কারণে। অনেক সময় সেখানকার ব্যবসায়ীরা অনেকটা অসহায় হয়ে যান। যেমন অসহায় তারা সাধারণ ক্রেতাদের করেন।

নিউমার্কেট এলাকার কোনো দোকানের সামনে দিয়ে একজন ভদ্র মানুষ হেঁটে যেতে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায়। চারদিক থেকে দোকানের কর্মচারীরা ডাকাডাকিতে আপনাকে অতিষ্ট করে তুলবে। সেখানে কোনো দোকানে একটা জিনিস দাম করলে পণ্যের দাম দশগুণ পর্যন্ত বেশি চাইবে। আপনি চাওয়া দামের অন্তত অর্ধেক না বললে লজ্জায় পড়ে যাবেন। একবার দাম বলবেন তো ফেঁসে যাবেন। আর দাম না বললে বা পছন্দ না হলে অনেকগুলো কটু কথা শুনিয়ে দেবে। প্রতিবাদ করলেই সেখানে চরম অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হবে। এমনি শারীরিকভাবে হেনস্তা করতেও তারা দ্বিধা করেন না।


বিজ্ঞাপন


সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আরও সঠিকভাবে বললে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। অধিকাংশ দোকানদারকেই দেখা যায় শিক্ষার্থীদের সমীহ করতে। এই এলাকায় তাদের একচেটিয়া আধিপত্যের মূল বাধা হচ্ছে এই শিক্ষার্থীরা। এই বাধা তারা যেকোনো মূল্যেই দূর করতেই চাইবে। শুধু নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী নয়, মটর শ্রমিক, পুলিশ, আমলা সবারই প্রতিপক্ষ এই শিক্ষার্থীরা। এমনকি সরকারও অধিকাংশ সময় শিক্ষার্থীদের প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করে। রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলোর বিপরীতে প্রতিবাদী সাধারণ ছাত্ররা এদেশের সকল অনিয়মের একমাত্র প্রতিপক্ষ।

এখানকার ফুটপাতগুলো বিক্রি হয়ে গেছে ইঞ্চি দরে। এসব ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের সংঘবদ্ধ চক্র। রাস্তার ধারে একজন জীর্ণ-শীর্ণ লোককে ব্যবসা করতে দেখে আপনার মায়া হতে বাধ্য। আপনি ভাববেন গরিব মানুষ সেখানে ব্যবসা করছে, এতে অন্তত একজনের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিছু উপার্জন করে খেতে পারছে। কিন্তু এর আড়ালে চলে অন্য কিছু। ফুটপাতে গলা ছেড়ে হাঁকডাক করা আর প্রচণ্ড রোদে রক্ত পানি করা ব্যক্তি এখানে গৌণ। এখানে ব্যবসা করে অন্য কেউ।

কিছুদিন আগে রাস্তার শরবত আর আখের রস নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাতের প্রতিটি দোকানের নেপথ্যে একাধিক ব্যক্তি। দোকানদার ছোট ছেলেটার সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে সতর্ক হয়। কথা বলতে ইতস্তত বোধ করে। হঠাৎ পেছন থেকে অন্য একজন এসে দাঁড়ালো, ব্যবসা মূলত তার। ওই ছেলে তার কর্মচারী। এরা সবাই সংঘবদ্ধ চক্র। এদের যোগাযোগ রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ প্রশাসন সবার সঙ্গে।

প্রতিদিন নিউমার্কেট এলাকায় কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। এই টাকা কীভাবে ভাগাভাগি হয় কারা ভাগ পায় তা শিক্ষার্থীরা ভালো করেই জানে। কাজেই নৈতিকতার বিচারে ছাত্রদের খেয়ে বিল না দেওয়ার বা কাপড়ের দোকানে গিয়ে ফাপড় দিয়ে চলে আসা সেখানে অন্যকিছু। সাধারণ কোনো বিষয় না। আর এটা সব ছাত্ররা করে না। করে বড়ভাই আশ্রিত কিছু ছাত্র নামধারীরা।


বিজ্ঞাপন


তবে প্রতিবাদ সেখানকার নিজস্বতা। যদি এই ছাত্ররা হেরে যায় তবে হেরে যাবে বাংলাদেশ। দেশের যেকোনো আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা কখনোই অস্বীকার করার নয়। এমনকি বাংলাদেশের জন্মের ভিত তৈরি হয়েছিল ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে। সেখানে পুলিশ যদি ভাগের টাকা নিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ নেয় তবে সেটি সফল হবে না। গত ১০০ বছরের ইতিহাসে ছাত্ররা হারেনি। আজকের ঢাকা কলেজের ছাত্ররাও হারবে না। হারতে দেওয়া যাবে না।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

এমএইচ/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর