মানব জীবন পরিক্রমার সর্বশেষ, অবশ্যম্ভাবী ও স্বাভাবিক পর্যায় হচ্ছে বার্ধক্য। কারো যদি অকাল মৃত্যু না হয় তবে প্রত্যেককেই এ জীবনের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। বার্ধক্যের আঘাত সার্বজনীন। আর এ অবস্থায় উপনীত হলে ব্যক্তি নতুন পরিচয়ে পরিচিত হয়-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, বয়স্ক, বুড়া-বুড়ি, প্রবীণ বা সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে। এ সময় পৌঁছে মানুষ যে সমস্ত অবস্থা ও সমস্যার সম্মুখীন হয় তা তাঁর কাছে অভিনব, অপ্রতিরোধ্য, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনেক ক্ষেত্রে তার নিজের পক্ষে এগুলোর সমাধান তথা মোকাবেলা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। দৈহিক, মানসিক, আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক ইত্যাদি সব ধরনের সমস্যাই প্রবীণদের গ্রাস করতে চায়।
বার্ধক্য সম্পর্কে উদ্যোগ-আয়োজন বিশ্বে সাম্প্রতিককালের। বলা হয়, জনসংখ্যার বার্ধক্য বিষয়টি একটি জনমিতিক উপাদান যা প্রধানত আর্থ-সামাজিক তথা জীবনমান উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত। বার্ধক্য সমস্যার ব্যাপকতা ও গভীরতার প্রতি ইংগিত দিয়ে ১৯৭৪ সালে বুখারেস্টে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব জনসংখ্যা সম্মেলনে স্বীকার করা হয়েছে যে, “বর্তমানে বিশ্ব জনসংখ্যার দুটো বিষয়ই তাৎপর্যপূর্ণ, জনবিস্ফোরণ এবং বার্ধক্য-যা ধীর গতিতে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বার্ধক্য জনসংখ্যার ভয়াবহতা বিবেচনায় এনে বিশ্বব্যাপী প্রবীণ বিষয়ক নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচী প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে Vienna International Plan of Action on Ageing (VIPAA) গৃহীত হয় যা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন কর্তৃক অনুমোদিত হয়। জাতিসংঘ বার্ধক্যকে মানবজীবনের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে এ সমস্যা সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতি বছর ০১ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালন করে আসছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্ডায় বার্ধক্য ইস্যুটি গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত করার জন্যে জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানাচ্ছে। ÒFulfilling the Promises of the Universal Declaration of Human Rights for Older Persons: Across Generations.” অর্থাৎ "সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় প্রবীণদের জন্য প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রজন্মের ভূমিকা" বিষয়ের উপর জাতিসংঘের ৩৩তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ০১ অক্টোবর ২০২৩ পালিত হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে প্রবীণদের মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য আন্তঃপ্রজন্ম সম্পর্ক, সংহতি ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা আলোচ্য থিমের মূল উদ্দেশ্য।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বিশ্বে দ্বিগুণ হবে যা প্রায় ২.১ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়। বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ প্রবীণ উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০৫০ সালে বিশ্বের ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৮ জন প্রবীণ উন্নয়নশীল অঞ্চলে বসবাস করবে এবং তাদের মধ্যে ৫০% এর বেশি বয়স্ক মহিলা থাকবেন। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এই হার অনেকটাই সত্য। বাংলাদেশে প্রবীণদের হার যেমন বেড়ে চলেছে তেমনি বেড়ে চলেছে তাঁদের বঞ্চনার পরিমাণও।
বিগত কয়েকটি আদমশুমারি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০১ ও ২০১১ সালে ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬.০৫ ও ১০ মিলিয়ন যা ২০২২ আদমশুমারিতে এসে দাঁড়ায় ১৫.৩ মিলিয়ন এবং মোট জনসংখ্যার ৯.২৮%। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ ও ২০৫০ সাল নাগাদ এদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়াবে যথাক্রমে ১৭.৬২ ও ৪৩.০২ মিলিয়ন যা মোট জনসংখ্যার ১১% ও ২০% হবে।
বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৫০ সালে এদেশে Old Age Boom ঘটবে এবং গড়ে ৫ জনে একজন প্রবীণ হবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোন দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ হতে ১২ ভাগ প্রবীণ হলে ঐ দেশকে বার্ধক্য জনসংখ্যার দেশ ধরা হয়। সে হিসেবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বে বার্ধক্য জনসংখ্যার দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। শুধু সংখ্যায় এরা দ্রুত বাড়ছে তা’ই নয়; এঁদের অধিকারগত প্রয়োজন মেটানোর মতো পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক সমতা ক্রমেই গভীর সংকট এবং তীব্র চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। বার্ধক্য বাংলাদেশের জন্যে এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। আধুনিককালে বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নয়ন মানুষের আয়ুষ্কালকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে গড় আয়ুষ্কাল প্রায় ৭৪ বছর। বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠী বৃদ্ধির একটি উদ্বেগজনক হার হল ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। আদম শুমারি ২০২২ এ দেখা যায়, ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব জনসংখ্যা ৯.৭ মিলিয়ন যা মোট জনগোষ্ঠীর ৫.৮৯%। প্রবীণ জনসংখ্যাকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম। প্রবীণ জনসংখ্যা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসছে। ২০০২ সালে ১৫৯টি দেশের উপস্থিতিতে মাদ্রিদে প্রবীণ জনসংখ্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ৪৫টি ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়, যার ৫ম টি বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি। অতি সম্প্রতি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শিশু বৃদ্ধির হারের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। ফলে, মোট প্রবীণ জনসংখ্যা শিশু জনসংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে। সুতরাং, এটিই প্রতীয়মান হয় যে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে প্রবীণরাই জনসংখ্যার একটি বড় অংশ হয়ে পড়বে।
অনেক পরিবারেই সন্তানরা পিতামাতাকে বিষয় সম্পত্তির মতো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়ে থাকে, ফলে চিকিৎসাসহ মৌলিক সেবা হতে প্রবীণরা বঞ্চিত হয়। প্রবীণরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে উপেক্ষিত, অবহেলা, বঞ্চনা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদির শিকার হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় সমাজের বাড়তি বোঝা হিসেবে বিবেচিত হয়ে চরম হতাশা ও হীনমন্যতায় ভোগে।
আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় প্রবীণরা অতীতে নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবনযাপন করতেন। মূলত: তারাই পরিবার পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করতেন। কিন্তু বিশ্বায়নের এ যুগে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে তৈরি হচ্ছে একক পরিবার। দারিদ্র, ভূমিহীনতা, সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধের পরিবর্তন, যুব শ্রেণীর গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর, শিল্পায়ন ও নগরায়ন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জীবনধারণ সামগ্রীর উচ্চ মূল্য, বস্তুতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা ইত্যাদি কারণে আজকে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে একক পরিবারে রূপ নিচ্ছে। আর এ পরিবর্তনশীলতার নীরব শিকার হচ্ছে প্রবীণ জনগোষ্ঠী। এদেশের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ লোক গ্রামে বসবাস করে। এ হিসেবে মোট প্রবীণের প্রায় ৭৫ শতাংশ গ্রামে বাস করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আর্থ-সামাজিক সমস্যা নিরূপণ করলে দেশের ৫৫ শতাংশের অধিক প্রবীণ দারিদ্র্য সীমার নিচে গ্রামে বাস করে। এই ব্যাপক দারিদ্র্যের মাঝে অধিকাংশ প্রবীণ স্বাস্থ্য সমস্যাসহ বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার শিকার হচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলে অনেক পরিবারেই সন্তানরা পিতামাতাকে বিষয় সম্পত্তির মতো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়ে থাকে, ফলে চিকিৎসাসহ মৌলিক সেবা হতে প্রবীণরা বঞ্চিত হয়। প্রবীণরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে উপেক্ষিত, অবহেলা, বঞ্চনা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদির শিকার হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় সমাজের বাড়তি বোঝা হিসেবে বিবেচিত হয়ে চরম হতাশা ও হীনমন্যতায় ভোগে।
সচ্ছল পরিবারে প্রবীণদের অবস্থা তত খারাপ নয়, তবুও তাঁদের অনেকেই পারিবারিক ভাঙ্গন, মানসিক পীড়ন, নিঃসঙ্গতা এবং অযত্ন-অবহেলার শিকার। শহুরে বসবাসরত প্রবীণ স্বাস্থ্য সেবার সুবিধা কিছুটা ভোগ করলেও গ্রামে তা একেবারেই অনুপস্থিত বলা যায়। শহরাঞ্চলে প্রবীণ দম্পতি বা একাকী প্রবীণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাঁদেরকে দেখভাল বা পেশাগত সেবাদান আমাদের সমাজব্যবস্থায় এখনো গড়ে উঠেনি। প্রবীণদের জন্যে দীর্ঘমেয়াদী ও পেলিয়াটিভ সেবা দরকার। কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা তেমন সচেতন নই। সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের নিশ্চিতের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে ও ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদে সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য-লাভের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ “Left no one behind.” এ প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য বয়স্ক জনসংখ্যার সাথে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য।
সরকার বয়স্ক ব্যক্তিদের সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় বয়স্ক ভাতা প্রদানসহ জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ এবং পিতামাতা ভরণপোষণ আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেছে। প্রবীণদের সামাজিক সুরক্ষায় নিন্মোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে: ১) প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইন প্রণয়ন করা এবং তা বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা; ২) প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সামাজিক বীমার আওতায় নিয়ে আসা; ৩) প্রজন্মের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন, সংহতি ও ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা ও সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করা; ৪) দারিদ্র-পীড়িত প্রবীণ পরিবারসমূহে সহজ শর্তে/বিনাসুদে কৃষি ঋণ প্রদান, আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডে ঋণ প্রদান ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে এগিয়ে আসতে হবে; ৫) প্রবীণ পিতা-মাতার ভরণপোষণে সন্তান/নাতি-নাতনীদের আইনগত বাধ্যবাধকতা নির্ধারণে পিতা-মাতা ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ বাস্তবায়নের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা; ৬) বিদ্যমান বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ও সংখ্যা বৃদ্ধি করে এদেশের দুঃস্থ, অসহায় ও দরিদ্র প্রবীণদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা; ৭) কর্মক্ষম প্রবীণের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে দেশে চলমান ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে তাঁদের প্রাধান্য দেয়া; ৮) গণমাধ্যমসমূহে প্রবীণদের জীবনের বিভিন্ন দিক, পরিচর্যা, সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক পর্যায় হতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বার্ধক্য বিষয়টি পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যাতে নবীন ও তরুণ শিক্ষার্থীরা প্রবীণদের সম্পর্কে সচেতন, শ্রদ্ধাশীল, এবং দায়িত্বশীল হওয়ার গুণাবলী অর্জন করতে পারে। দেশে জেরিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থায় জেরিয়াট্রিক মেডিসিন ও জেরিয়াট্রিক সেবা বিষয়টি চালু করা। এখানে আশার আলো যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে বার্ধক্য বিষয়ে পঠন-পাঠনের জন্যে Gerontology and Geriatric Welfare শিরোনামে দেড় বছরের মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু হয়েছে; ৯) সরকারী ও বেসরকারি প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রবীণদের স্বাস্থ্য ও সেবাদানের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। দরিদ্র প্রবীণদের জন্য স্বল্প মূল্যে/বিনামূল্যে ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে ঔষধ প্রদান, চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ ও বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখার ব্যবস্থা করা এবং প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে জেরিয়াট্রিক ওয়ার্ড চালু করা; ১০) ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ইত্যাদিতে সাপ্তাহিক ধর্মীয় বিশেষ দিনে প্রবীণদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য তুলে ধরা; ১১) প্রবীণ নাগরিকদের জন্যে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত সিনিয়র সিটিজেন কার্ড প্রবর্তন করা এবং সকল প্রকার যানবাহনে প্রবীণদের জন্যে আসন সংরক্ষণ, বিশেষ ছাড়ে/স্বল্প মূল্যে টিকিট প্রদান করা; এবং ১২) প্রবীণ নারীর দেনমোহর ও উত্তরাধিকার সম্পত্তি প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্র কর্তৃক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
লেখক: ড. মো. রবিউল ইসলাম, বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মহাসচিব, বাংলাদেশ জেরোন্টোলজিক্যাল এসোসিয়েশন (বিজিএ)
মোবাইল: ০১৬২৫২৯৫৪৮০ Email: [email protected]
একে

