চারিদিকে দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশি। ভারত মহাসাগরের বুকে জেগে ওঠা প্রবাল প্রাচীরের ওপর একখণ্ড বালুভূমি। প্রায় দুহাজার ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর মালদ্বীপ। দূর দিগন্তে দেখা যায়, ছোট ছোট নৌযান। অনতিদূরে ফেনার মত ঢেউ তুলে ছুটে চলেছে একালের স্পিডবোট। মাথার ওপরে শব্দ তুলে চক্কর দেয় সি প্লেন। পর্যটনের ভরা মৌসুমে এভাবেই মালদ্বীপবাসীর দিন কেটে যায়।
মালদ্বীপের প্রকৃতি নির্মল। কোলাহল নেই। যন্ত্রযানের গগনবিদারী আওয়াজ নেই। ধূলি ধূসরিত পথঘাট নেই। বে অব বেঙ্গলের মতো গর্জনতোলা ঢেউ নেই। আছে নির্জনতা। প্রবালদ্বীপের ওপর গড়ে ওঠা নারকেল কেওড়া আর ছায়াঘেরা ঝোঁপঝাড়। কি অপরূপ মায়া আর মমতা দিয়ে যেন গড়া।
বিজ্ঞাপন
ইউরোপ-আমেরিকা আরব দুনিয়ার লোকেরা এখানে অবকাশে আসে। এখন পূর্ব পশ্চিম সব গোলার্ধ্ব থেকেই ভ্রমণপিপাসু নির্জনতাপ্রিয় মানুষেরা আসে। পৃথিবীর বড় স্থলভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও মালদ্বীপ চিরকালই ছিল পর্যটকদের জন্য আকর্ষণের জায়গা। ইতিহাস অন্তত সেটাই বলছে।
পৃথিবীর বহু নামি পরিব্রাজক মালদ্বীপ এসেছেন। মরক্কোর নাগরিক ইবনে বতুতাও মধ্যযুগে মালদ্বীপ ঘুরে গেছেন। তার লেখা সফরনামায় এ বিষয়ে লেখা আছে।
উইকিপিডিয়া বলছে, ১৯৭২ সালে মালদ্বীপে প্রথম রিসোর্ট গড়ে ওঠে। জনবসতির উপযোগী যে শ দুয়েক দ্বীপ আছে দেশটিতে তার মধ্যে ৮৪টিতে রিসোর্ট তৈরি হয়েছে। এর বেশিরভাগই রাজধানী মালে থেকে দূরে। জাহাজ নৌযান স্পিডবোট আর সি প্লেনেই পর্যটকরা এসব জায়গায় যাতায়াত করেন।
রিসোর্টগুলো দেশি বিদেশি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে তৈরি। এসব রিসোর্টে ১৬ হাজারের বেশি শয্যা আছে।
বিজ্ঞাপন
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মালদ্বীপে আসা পর্যটকরা গড়ে এখানে আট দিন অবস্থান করেন। আর খরচ করেন মাথাপিছু ৭৫৫ মার্কিন ডলার। ৫-৭ লাখ পর্যটক দেশটি ভ্রমণে আসেন। মালদ্বীপের পর্যটন বিভাগ ২০১৪ সালে দেশটিতে রেকর্ড ১০ লক্ষাধিক লোক সফর করতে এসেছেন বলে তথ্য জানিয়েছে।
মালদ্বীপের বেশিরভাগ লোক সুন্নী মুসলিম। দ্বাদশ শতকে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন হয় এখানে। ১৩৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মরক্কোর পরিব্রাজক ইবনে বতুতা এই দ্বীপ ভ্রমণে এসেছিলেন। ১৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান থাকুরুফানি আল আজম নামে একজন মুসলিম সেনাপতি পর্তুগিজদের বিতাড়িত করে মালদ্বীপের শাসনভার গ্রহণ করেন। মালেতে এই মুসলিম শাসকের সমাধি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
এমআর