পৌরসভা কর্মকর্তার চায়ের বিল মাসে ৩৫ হাজার!

ভারতে সরকারি অফিসের কর্মকর্তা চা-কফি বাবদ ভাতা পান। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই ব্যবস্থা চলছে। এটি দেওয়া হয় কারণ অনেকে প্রতিদিন তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন, তাদেরকে আপ্যায়ন করতে হয়। তাই বলে মাসে চায়ের বিল আসবে ৩৫ হাজার রুপি!
এই ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার পৌরসভায়। সেখানকার আইন কর্মকর্তার চায়ের বিলের পরিমাণ এমন। এ নিয়ে সেখানে শোরগোল পড়ে গেছে।
দ্য ওয়ালের খবরে বলা হয়েছে, কলকাতা পৌরসভার মুখ্য আইন কর্মকর্তা সেলিম আনসারি। গত বছর পর্যন্ত সাম্পচুয়ারি অ্যালাওয়েন্স বাবদ মাসে ৩০ হাজার রুপি পেতেন। এ বছর ৬ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়ে তা মাসে ৩৫ হাজার রুপি করা হয়েছে।
আরও অবাক করা বিষয় হলো, করোনা মহামারির মধ্যে যখন লকডাউন চলছিল, তখনও ভিজিটর বাড়ার কারণ দেখিয়ে এক বছরে দু’বার ভাতা বেড়েছে তার।
সরকারি কর্মচারীরা যখন মহার্ঘ ভাতা তথা ডিএ বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত, তখন এই কাণ্ড ঘোর অসন্তোষ তৈরি করেছে তাদের মধ্যে। সম্প্রতি মেয়র ফিরহাদ হাকিম সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, না পোষালে ছেড়ে দিন। ফলে সরকারি কর্মচারীরা এখন এই ঘটনা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন মেয়রের দিকে।
রাজ্যের মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও সাম্পচুয়ারি অ্যালাওয়েন্স তথা অতিরিক্ত ভাতা বাবদ মাসে ৩৫ হাজার রুপি পান না। মুখ্য সচিব এবং অতিরিক্ত মুখ্য সচিবরা এই ভাতা বাবদ মাসে ৩৪ হাজার রুপি করে পান। বিভিন্ন দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিরা এই ভাতা বাবদ পান মাসে ২০ হাজার রুপি। আর দফতরের সচিবরা পান মাসে ১৭ হাজার রুপি। একজন সিনিয়র আইএএস অফিসার এবং দফতরের সচিবের সাম্পচুয়ারি অ্যালাওয়েন্সের দ্বিগুণ পান কলকাতা পৌরসভার আইন কর্মকর্তা।
২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই পদে সাম্পচুয়ারি অ্যালাওয়েন্স ছিল মাসে সাড়ে ৪ হাজার রুপি। ফেব্রুয়ারি মাসে সেই ভাতা বাড়ানোর নির্দেশে বলা হয়, বহু কর্মকর্তা নানা কাজ নিয়ে দেখা করতে আসেন। প্রতিদিনই ভিজিটরের সংখ্যা বাড়ছে। তাই এই ভাতা বাড়িয়ে ৬ হাজার রুপি করা হোক।
এরপর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের নির্দেশে বলা হয়, ভিজিটরের সংখ্যা দিন দিন আরও বাড়ছে। তাই ভাতা বাড়িয়ে ৬ হাজার থেকে ৯ হাজার রুপি করা হোক। ৬ মাস যেতে না যেতেই ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে ফের ভাতা বাড়ানো হয়। তখন নির্দেশে বলা হয় ভিজিটরের সংখ্যা আরও বাড়ছে দিন দিন।
৯ মাস না কাটতেই ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার রুপির আবেদন করা হয়। এভাবে আরও কয়েক ধাপে এটি পৌঁছয় ৩৫ হাজারে। লকডাউনে যখন চারদিকে বন্ধ ছিল, তখনও তার ভিজিটর বেড়েছে!
তবে এই পরিমাণ বিল নিয়ে অবাক নন স্বয়ং ওই আইন কর্মকর্তা। সেলিম আনসারি বলেন, 'এতে অবাক হওয়ার কী আছে? অনেকে দেখা করতে আসেন। চা বিস্কুট খাওয়াতে হয়তো। এটা কিছু না!'
একে