বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পুষ্টি উদ্যোগে তরুণরা

মিজানুর রহমান মাসুদ
প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

পুষ্টি উদ্যোগে তরুণরা
ছবি : ঢাকা মেইল

কিশোর-কিশোরী আর যুবকদের মধ্যে রয়েছে অসীম সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার চালিকাশক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে কিশোর-যুবকরা পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে স্থানীয়, জাতীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে উন্নত পুষ্টি ও খাদ্যব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্য অর্জনে তরুণ ও যুবসমাজকে অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য, যাতে তারা অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারে। 

সুস্বাস্থ্যের জন্য দরকার সুষম পুষ্টি—এ কথা সর্বজনবিদিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৭ সালে পুষ্টি নিয়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, শীর্ষ ১১টি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণের মধ্যে ছয়টিই খাদ্য ও পুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই কিশোর-কিশোরীদের জন্য পুষ্টির জোগান বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ইতিবাচক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। 


বিজ্ঞাপন


কৈশোরে শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি থাকে। এই বয়সে শরীরের ৫০% পর্যন্ত গাঠনিক বৃদ্ধি এবং চুড়ান্ত প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চতার ২০% পর্যন্ত অর্জিত হয়। তাই সঠিক শারীরিক গঠনের জন্য নিয়মমাফিক পর্যাপ্ত পুষ্টির যোগান দরকার। কিশোর-কিশোরী বা যুবদের খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা বয়ঃসন্ধিকালে ফলমূল, শাকসবজি কম খায় এবং চিনি, সোডিয়াম ও চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খায়। কৈশোরের এই পুষ্টির ঘাটতি শরীরে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে পরবর্তী সময়ে তা আর সঠিকভাবে পূরণ করা সম্ভব হয় না। দেশের কিশোর ও যুবদের একটা বড় অংশ তাদের বেড়ে ওঠার পুরোটা সময় দারিদ্র্যের বেড়াজালে বন্দী থাকে। তারা পর্যাপ্ত পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে না। দারিদ্র্যসীমার আশেপাশে জীবন কাটানো পরিবারগুলোর কিশোর-কিশোরীরা অপুষ্টি নিয়ে বেড়ে ওঠে। 

pusthi

এরকম প্রেক্ষাপটে কিশোর-কিশোরী ও যুবকদের পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা, জ্ঞান ও দক্ষতা তৈরিতে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করা একটি জরুরি বিষয়। এজন্য বিআইআইডি (বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব আইসিটি ইন ডেভেলপমেন্ট) ফাউন্ডেশন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিউট্রিশন ক্লাব গড়ে তুলেছে। পুষ্টিবিষয়ক বিভিন্ন সক্রিয় উদ্যোগের মাধ্যমে ক্লাবের সদস্যরা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। অপুষ্টি দূরীকরণ এবং স্বাস্থ্যকর নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্ভাবনী ধারণা ও প্রযুক্তি সামনে নিয়ে এসেছে নিউট্রিশন ক্লাবের সদস্যরা। 

ক্লাবের সদস্যদের দক্ষতাগুলো জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার লক্ষ্যে ২০১৭ সাল থেকে নিউট্রিশন অলিম্পিয়াড বা পুষ্টি অলিম্পিয়াড আয়োজন করে আসছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত চারটি নিউট্রিশন অলিম্পিয়াডে দেশের সব জেলা থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উঠে আসা মেধাবী কিশোর-কিশোরী ও যুবকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। 


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে রাস্তার খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। মশলাদার, মুখরোচক ও সুস্বাদু এসব খাবার জনপ্রিয় হলেও সেগুলো অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করে তৈরি হয় বলে এসব খাবার প্রাণঘাতি জীবাণু থাকতে পারে। কীভাবে এসব খাবার নিরাপদ করা যায় এবং এজন্য সমাজ ও প্রশাসন কী ভূমিকা পালন করতে পারে অলিম্পিয়াডে এরকম বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা ধারণা পায়।

খাদ্যশস্য, মিঠাপানির মাছ ও শাকসবজির ক্ষেত্রে শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। তবুও বাংলাদেশে খাদ্যের সুষম বন্টন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে, যা খাদ্য ও পুষ্টি বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এ সমস্যার সমাধানকল্পে তরুণ উদ্যোক্তারা খাদ্যশিল্পে বিনিয়োগ করে ও তাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এ বৈষম্য কমিয়ে আনতে অবদান রাখতে পারেন। অলিম্পিয়াডে বিশেষজ্ঞ আলোচকরা খাদ্য ব্যবস্থাপনায় সম্ভাব্য ক্যারিয়ার ও ব্যবসার সুযোগ সম্পর্কে তরুণদের দিকনির্দেশনা দেন। 

বাংলাদেশে খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক আলোচনায় একটি বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে স্কুলের খাবার। সরকার ইতিমধ্যে স্কুলগুলোতে দুপুরের খাবার চালু করার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, কিন্তু উদ্যোগ বা প্রকল্পগুলো সঠিক ও সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে কী কী চ্যালেঞ্জ ছিল এবং এই উদ্যোগসমূহের সফল বাস্তবায়নের জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে সে বিষয়েও অংশগ্রহণকারীরা ধারণা পায়। খরা, আকস্মিক বন্যা, জলবায়ু পরিবর্তন ও ফলন হ্রাস—এ বিষয়গুলোও আলোচিত হয় এসব আয়োজনে।

pusthi

এ বছরের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক নিউট্রিশন অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে। এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪০ হাজার অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকবে বলে আশা করছে আয়োজক প্রতিষ্ঠানটি।

নিউট্রিশন ক্লাবের সদস্যরা সারা বছরই স্বাস্থ্যসচেতনতা, পুষ্টি, পরিবেশ ও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করে। এ ধরনের আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের আন্তর্জাতিক মঞ্চ। অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে খাদ্য, পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন অংশীদার, বেসরকারি খাত, গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কিশোর-কিশোরীদের বিনিময় ও নেটওয়ার্কের সুযোগ তৈরি হবে। 

আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে নিউট্রিশন অলিম্পিয়াডে বিষয়ভিত্তিক বক্তৃতাও করবে অংশগ্রহণকারীরা। এছাড়াও “স্মার্ট স্কুল মিল” শীর্ষক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার তৈরি করবে। 
প্রতিযোগিতা ও সেমিনারের পরের অংশ হিসেবে অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা প্যানেলিস্টদের সহযোগিতায় “ঢাকা ঘোষণা” প্রস্তুত করবে এবং এর মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সকলের জন্য পুষ্টি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সুসংহত করতে সরকারকে আহ্বান জানাবে।

/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর