বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মাহবুবের নতুন বই ‘ডিপ্রেশন’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪১ এএম

শেয়ার করুন:

মাহবুবের নতুন বই ‘ডিপ্রেশন’

একুশ শতকে মানুষের অন্যতম শত্রুর নাম ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা। এতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ আত্মহত্যা করছে। গ্লোবাল ইমোশন্স রিপোর্ট-২০২২ অনুযায়ী, মানুষের সংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীতে ক্ষুদ্ধ, দুঃখী ও অবসাদগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। একেকজনের ক্ষেত্রে বিষণ্নতার যাত্রাটা একেক রকমের। এতে একজনের সঙ্গে আরেকজনের মিল থাকে না বললেই চলে। তাই মানুষভেদে এর লক্ষণ হয় বিভিন্ন প্রকার। 

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করতে না পারার মানসিক চাপ, সারাদিন শুয়ে-বসে থাকা, ইন্টারনেটে হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখা, অন্যদের উপর চাপ সৃষ্টি হবে ভেবে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত না করা প্রভৃতিকে বিষণ্নতার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এর কারণ ও প্রতিকার অনুসন্ধানে গবেষণা চলছে। এর ফলে মানুষ সব বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে প্রতিনিয়ত দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত হতে থাকে; বারবার আনন্দ লাভের চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত সুখ অর্জন করতে পারে না। বিষণ্নতার শিকার ব্যক্তি বারবার নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, কিন্তু কেউ তা বুঝতে পারে না; আত্মহননের পর অহেতুক আয়োজিত হয় শোকসন্ধ্যা নামক পুনর্মিলনী উৎসব।


বিজ্ঞাপন


বাংলা সাহিত্যে সম্ভবত প্রথম আত্মহত্যামূলক কবিতা জীবনানন্দ দাশের আট বছর আগের একদিন। তাঁর জীবন ছিল বিষন্নতায় পরিপূর্ণ। তাঁর কবিতাকে দুর্বোধ্য, অশ্লীল ও প্রগতিবিরোধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ প্রকাশের পর তিনি তা রবীন্দ্রনাথকে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। পড়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘জীবনানন্দের কবিত্ব শক্তি আছে কিন্তু সে ভাষা নিয়ে জবরদস্তি করছে, ওস্তাদি করছে, তার মুদ্রাদোষ আছে।’ জবাবে জীবনানন্দ বলেছিলেন, ‘সকলে কবি নয়, কেউ কেউ কবি।’ নজরুলও জীবনানন্দকে বড় কিছু মনে করেননি। একজন একবার নজরুলকে বলেছিলেন, ‘জীবনানন্দ তো বলেন উপমাই কবিতা।’ প্রত্যুত্তরে নজরুল হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের এখন আর ‘মা’তে হচ্ছে না, ‘উপ’মা দরকার?’’

কর্মজীবনে চাকুরি হারিয়ে বারবার জীবিকার চেষ্টা করতে করতে জীবনানন্দ বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে নাই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি। বেকাররা তো বসে থাকে না, তারা দৌড়ায়, ছুটে বেড়ায়। কেবল ভালো অবস্থানের লোকদের জন্যই বরাদ্দ আছে ইজিচেয়ার, কুশন, সোফা বা বিছানার অনন্ত শৌখিনতা।’ 

কাব্যিক, কর্মকেন্দ্রিক ও পারিবারিক চাপ জীবনানন্দকে ধীরে ধীরে আত্মহত্যাপ্রবণ করে তুলেছিল। জীবনানন্দের কবিতায় স্বপ্ন, ঘোর, ক্ষোভ, ক্রোধ, পৌরুষ, নারীত্ব, প্রেম, বিরহ, হতাশা, আক্ষেপ ও মৃত্যুচিন্তা মিলেমিশে সৃষ্টি করেছে রহস্যময় বিষণ্নতার। 

মাহবুবের ‘ডিপ্রেশন’ গ্রন্থের বিভিন্ন পর্বে এ সব বিষয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাল বা ইন্টারনেটজীবনকে চিত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কারণ, ইন্টারনেটে মানুষ নিজেকে অপরের সাথে তুলনা করতে করতে কখনো উগ্রতা আর কখনো হতাশার পথে পরিচালিত হয়, যা এক পর্যায়ে পরিণত হয় মৃত্যুচিন্তায়। অপার মৃত্যুচিন্তায় আসক্ত মানুষ অবসাদচক্রে ঘুরতে থাকে। 


বিজ্ঞাপন


গ্রন্থের প্রতিটি কবিতা একেকটি গল্প; প্রতিটি পর্বের অন্তর্ভুক্ত কবিতাসমূহ মিলে আরেকটি গল্প; সব পর্ব মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ গল্প এবং পুরো বইটি সামগ্রিক বিষণ্নতার গল্প হিসেবে চার স্তরের গল্পমালার সমন্বয়ে গ্রন্থের কাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে।

book

পর্বসমূহের থিম প্রকাশার্থে বিভিন্ন ব্যান্ডের গান ব্যবহৃত হয়েছে। জীবনানন্দ ছাড়াও বহু কবির কবিতার দেয়ালে পড়েছে অবসাদের ছায়া। গ্রন্থ রচনাকালে তাই বিভিন্ন কবি ও কবিতার প্রভাব পড়েছে। ভাবার্থে সংযুক্ত ছবিগুলো কবিতা-লেখকের তোলা। গ্রিক দার্শনিক প্লুটার্কের ভাষায়, Painting is silent poetry and poetry is painting that speaks.

তাই সকল কবির উদ্দেশ্যে আহ্বান একটাই: হে কবি! তুমি লিখে যাও, রচিতে থাকো অমর অক্ষয়কাব্য। হয়তো আজ নয়, হয়তো শতবর্ষ পর কোনো একদিন তোমার ভাষা, তোমার আখ্যান, তোমার উপাখ্যান ধ্বনিত হবে অন্য কোনো কবির কণ্ঠে; আনমনে গুন গুন করতে করতে মধ্যরাতে। আকাশে সেদিন বসবে লক্ষ তারার মেলা, সাগরে উঠবে ফেনিল ঢেউ, বাইরের হালকা বাতাস মনকে একটু দোলন দেবে, মস্তিষ্কে দেবে দোলনচাঁপার গন্ধমাতাল ঢেউ, তারপর হারিয়ে যাবে সমুদ্রে যেমন ফেনারা হারায়। তবুও সেই মুহূর্তটুকুর জন্য লিখে যাও। থাকবে না, হয়তো থাকবে না তুমি সেদিন। তবে তোমার কণ্ঠস্বর কবিতার শব্দে শব্দে রয়ে যাবে অমর, অক্ষয় কোনো এক মধ্যরাতের অনুভূতি হয়ে, অবসাদের পথে অথবা বিপরীতে।

মাহবুবের ‘ডিপ্রেশন’ গ্রন্থে একটি ডিপ্রেশনাল জার্নিকে দেখানো হয়েছে। সবার জীবনে স্বপ্ন থাকে। কিন্তু সামাজিক, অর্থনৈতিক নানাবিধ কারণে সেগুলো বাস্তবায়িত হতে পারে না। ফলে মানুষের মাঝে ক্ষোভ, ক্রোধ তৈরি হয়। ইন্টারনেটে মানুষ নিজেকে অপরের সাথে তুলনা করতে করতে কখনো উগ্রতা আর কখনো হতাশার পথে পরিচালিত হয়। প্রেম ও বিরহের কারণে মানুষের মাঝে হতাশা জন্মায়। এই হতাশাই ধীরে ধীরে পরিণত হয় মৃত্যুচিন্তায়। মৃত্যুচিন্তা ঘোরের মতো। এই ঘোরের মাঝে মানুষ অবসাদের চক্রে ঘুরতে থাকে এবং হঠাৎ একদিন আত্মহত্যা করে।

আমাদের জীবনের এই ছোট ছোট নেতিবাচক ঘটনাগুলোই একটা ডিপ্রেশনাল স্রোতের সৃষ্টি করে। আলোচ্য গ্রন্থে এই ডিপ্রেশনাল স্রোতটাকেই একটি আঙ্গিকে, ভিন্ন স্টাইলে, ভিন্ন ফর্মে উপস্থাপন করা হয়েছে।

গ্রন্থটি সংগ্রহ করতে রকমারি ডট কম বা [email protected]এ ইমেইল প্রেরণ করা যেতে পারে।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর