শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন মিল্টন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:১৫ পিএম

শেয়ার করুন:

‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন মিল্টন

স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনন্য ভূমিকার জন্য ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’পেয়েছেন সমাজ সেবক মিল্টন সমাদ্দার। তিনি গত সাত বছর ধরে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মাধ্যমে অসহায় বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দিয়ে আসছেন।

রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২’পুরস্কার প্রদান করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল জ্যাকব ও যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন, মন্ত্রিসভার সদস্য, সিনিয়র সচিবসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


এই আয়োজনের মাধ্যমে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে মোট ১২ জন তরুণ-তরুণীকে তাদের স্বেচ্ছাসেবী ও মানবিক অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে। সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ১১ জনের হাতে ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত ১১ জনের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা এবং সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়েছে।

podok

এ ব্যাপারে মিল্টন সমাদ্দার ঢাকা মেইলকে বলেন, দীর্ঘ সাত বছরের কার্যক্রমে যারা সমর্থন জানিয়েছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে কোটি শুভাকাঙ্ক্ষী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতাসহ সোশ্যাল মিডিয়া শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন, এনজিও, উন্নয়ন সংস্থা আমাদের কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়ে স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা প্রদান করেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা। এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি আমার সব শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রতি।

মানবিক মিল্টন সমাদ্দারের গল্পের শুরু যেভাবে


বিজ্ঞাপন


মিলটন সমাদ্দার। জন্ম তার বরিশাল উজিরপুরে। অভাব অনটনে বেড়ে উঠা। জন্মভিটা ছেড়ে জীবন জীবিকার সন্ধানে ২০০৫ সালে এসেছিলেন রাজধানীতে। সেই যে এলেন, আর ফিরে যাননি। তারপরও শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, সমাজের  শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধীদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা নিয়েও ভাবেন তিনি। পথে-ঘাটে পরিচয়হীন, পড়ে থাকা প্রতিবন্ধীদের তুলে এনে পরম স্নেহ-মমতা-শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় আগলে রাখেন। এই পরিচয়হীন নারী-পুরুষ ও শিশুদের জন‌্য ২০১৪ সালে গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’নামের এই আশ্রম।

মিলটন সমাদ্দার বিয়ে করেছেন ২০০২ সালে। তাঁর স্ত্রী সরকারি চাকরিজীবী। মিল্টন হোক কেয়ার প্রাইভেট লি. নামে আছে হোম হেল্থ কেয়ার সার্ভিসের একটা প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালের কোনো একদিন। কাজ সেরে বাসায় ফিরছিলেন মিল্টন সমদ্দার। রাস্তার পাশে এক বৃদ্ধের দুই পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। কোন কিছু না ভেবেই মিল্টন তাকে সঙ্গে করে নিয়ে এলেন নিজের বাসায়। নিজ হাতে গোসল করালেন। পরিষ্কার জামা-কাপড় পরিয়ে খাওয়ালেন। পরিচয়হীন বৃদ্ধাকে পরম যত্নে মরণাপন্ন অবস্থা থেকে সুস্থ করে তোলেন। কিন্তু অসহায় বৃদ্ধের যাওয়ার কোনো জায়গা না থাকায় তাকে আশ্রয় দিলেন মিল্টন। সেই থেকে শুরু। এখন প্রায় এক দশক হতে চললো। বর্তমানে এমন শতাধিক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুর আশ্রয় হয়েছে দেশের ব্যতিক্রমী এই প্রতিষ্ঠানে।

podok3

মিল্টন বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১০৪৫ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও ৩৯৫ জন হারিয়ে যাওয়া শিশু ও ৪০ জন প্রতিবন্ধী শিশুদের আশ্রয় দিয়েছি। বর্তমানে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পরিচর্যা, চিকিৎসা সহ মাসিক খরচ হয় ২৫ থেকে ২৮ লাখ টাকা। শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় সাভারে নিজস্ব আবাসন জমি ক্রয়, কবরস্থানের জমি ক্রয় এবং মসজিদের জমি ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া ৫ শতাধিক মানুষের স্থায়ী আবাসনের জন্য ৭ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। একই সাথে অসহায় মানুষদের চিকিৎসা, শিক্ষা, মৃত ব্যক্তিদের দাফন-কাফন, দেশের ভিবিন্ন দূর্যোগ, মহামারিসহ নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কার্যক্রম সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন পর্যন্তসুবিধাভোগি মানুষের সংখ্যা ৭০ হাজারের অধিক।

প্রসঙ্গত, সামাজিক ও মানবিক কাজের জন্য মিল্টন ইতোমধ্যে সমাজসেবা অধিদফতরের মানবতা ক্যাটাগরিতে প্রবীণ হিতৈষী ‘মমতাময়ী’ পুরস্কার অর্জন করেন।

বিএইচআর/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর