শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি পিনু, সম্পাদক দীপংকর

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩৫ এএম

শেয়ার করুন:

প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি পিনু, সম্পাদক দীপংকর
ছবি : ঢাকা মেইল

'ভয়ের মাঝে অভয় বাজাও, সাহসী প্রাণে চিত্ত জাগাও'— এ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের সম্মেলন থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চাবিরোধী সকল কালাকানুন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। 

কাউন্সিল অধিবেশনে গোলাম কিবরিয়া পিনুকে সভাপতি ও দীপংকর গৌতমকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য ৪১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হয়।


বিজ্ঞাপন


শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সমাজচিন্তক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। 

এরপর টিএসসি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত একটি শোভাযাত্রা করা হয়। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ ঘুরে টিএসসি হয়ে কারাস মিলনায়তনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে উদ্বোধনী আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের সভাপতি কবি গোলাম কিবরিয়া পিনুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আলোচনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ ও অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। এ অধিবেশনে সূচনা বক্তব্য দেন ৪র্থ জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক কথাসাহিত্যিক শামসুজ্জামান হীরা, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কবি-সাংবাদিক দীপংকর গৌতম।

সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সহকারী সাধারণ সম্পাদক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম। 


বিজ্ঞাপন


sirajul islam ch

আলোচনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দেশে ও সারা পৃথিবীতে ভয়ের রাজত্ব চলছে। এখানে জীবিকার নিশ্চয়তা নেই, জীবনের নিশ্চয়তা নেই। বিপন্নতা গ্রাস করছে। সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ বিরাজ করছে সর্বত্র। এই ফ্যাসিবাদের কারণে মানুষ মুখ খুলতে ভয় পায়। মানুষ আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এই ভয়ে বিপরীতে আমাদের সাহসের কথা বলতে হবে। আমাদের সাহস নির্ভর করে সংঘবদ্ধতার উপর। দেশের প্রগতিশীল লেখকরা সংঘবদ্ধভাবে সেই ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার লড়াই করছে। তাদের হাত দিয়ে সমাজ বদল ঘটবে। 

তিনি আরও বলেন, ' বিধ্বংসী উন্নয়নের চেয়ে নদীর অবাধ প্রবাহ সভ্যতার জন্য অপরিহার্য। সেজন্য প্রাণ-প্রকৃতি স্বাভাবিক গতিময়তা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে সাহিত্যের মুক্তি, মানুষের মুক্তি প্রাণ-প্রকৃতির মুক্তির আন্দোলন সব এক ও অভিন্ন। মূলত সমস্ত মুক্তির আন্দোলনই পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলন। যেহেতু পুঁজিবাদ এই মুহূর্তে সমস্ত সংকটের মূলে সেহেতু পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনে লেখক শিল্পী-সাহিত্যিকদের আরো সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে।'

rally

পুঁজিবাদ মানবসভ্যতার সব অর্জন ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এমন একজনকে সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হলো, যিনি খুনের মামলার আসামি। ছেলে সুপারিশ করে তাঁকে পুরস্কার পাইয়ে দিয়েছে। আগেরবার আরেকজনকে পুরস্কার দেওয়া হলো, তাঁর নামই কেউ শোনেনি। এগুলো সবই হচ্ছে পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্য। বাংলাদেশ রাষ্ট্র একটি আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। তিনি আরও বলেন, ‘আমলাতন্ত্র সাহিত্যের শত্রু, কারণ এর পেছনে আছে পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদের শয়তানের কারণে পৃথিবী ধ্বংস হচ্ছে। পুঁজিবাদকে পরাভূত করাই হচ্ছে সাহিত্য ও সংস্কৃতিসেবীদের কাজ। এর জন্য সমর্থন দরকার, সংঘ দরকার। পাঠাগারকে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে, যেখানে বিতর্ক-নাটক-গান-খেলাধুলা থাকবে। এর সঙ্গে কিশোর আন্দোলনকেও যুক্ত করতে হবে। সারা দেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টি করা আমাদের সবার কর্তব্য।’

পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকেই ‘প্রকৃত লড়াই’ উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সভ্যতার অত্যাশ্চর্য বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্য আজকের পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ধ্বংস করে দিচ্ছে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে এবং পৃথিবী এখন মানুষের বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। আজকের পৃথিবীতে পুঁজিবাদ হচ্ছে সবচেয়ে বড় শত্রু। সাহিত্যে একটা দুর্দশা চলছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। এ বিপদের জন্য প্রযুক্তি দায়ী নয়, বরং প্রযুক্তির ওপর পুঁজিবাদী আধিপত্যের কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। পুঁজিবাদ মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা চায়, ভোগবিলাসে উৎসাহিত করতে চায়। পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্যের কারণে আজ পৃথিবী বিপন্ন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের কারণে নয়, পুঁজিবাদের বিকাশের কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘রাষ্ট্রকে আমরা মানবিক করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের চারটি মূল স্তম্ভের (জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা) কোনোটিই আমাদের দেশে সাফল্যের কাছাকাছিও যেতে পারেনি। ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা শহরগুলোতে উন্নয়নের নামে নিসর্গকে ধ্বংস করা সরকারের একটা কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাল-বিলগুলো ভরাট করে সেখানে সুপারমার্কেট-বাজার ইত্যাদি করা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সারা দেশটা যেন একটা দোকান। একটা দোকানসংস্কৃতির জয়যাত্রা চলছে এই দেশে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন হচ্ছে সব লেখকের সূতিকাগার। সেই আন্দোলনটাকে আবার ফেরত আনতে হবে।’

উদ্বোধনী আলোচনার পর দুপুর ২টা থেকে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। কাউন্সিলে বিভিন্ন রিপোর্টের ওেপর আলোচনা করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষকরা।

কাউন্সিল অধিবেশনে কবি গোলাম কিবরিয়া পিনুকে সভাপতি ও দীপংকর গৌতমকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য ৪১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচিত হয়।

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন—সহসভাপতি-শামসুজ্জামান হীরা, সাখাওয়াত টিপু, এ কে শেরাম, জাকির হোসেন, ইয়াজদানী কোরায়শী, মাইনুদ্দিন পাঠান, সহ সাধারণ সম্পাদক-অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, মাধব রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক-মাহবুবুল হক, কোষাধ্যক্ষ- দীনবন্ধু দাস, দপ্তর সম্পাদক- সোহেল তারেক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক- প্রশান্ত কুমার মণ্ডল, প্রকাশনা ও গবেষণা সম্পাদক- হাবীব ইমন, প্রচার সম্পাদক- মো. তারেকুজ্জামান, সাহিত্যসভা ও অনুষ্ঠান বিষয়ক সম্পাদক-শান্তা মারিয়া। 

এছাড়া সদস্য হয়েছেন—মতিন বৈরাগী, ফারুক মাহমুদ, সিদ্দিক আহমেদ, সুদীপ্ত হান্নান, তপন বাগচী, রহমান মুফিজ, দিলরুবা সুলতানা, অপূর্ব গৌতম, সুভাষ চন্দ, জলিল আহমেদ, সাব্বির রেজা, কোরবান আলী মণ্ডল, আনোয়ার কামাল, মীর মোশাররফ হোসেন, মৃণাল কান্তি ঢালী, শাহ মো. জিয়াউদ্দিন, মোয়াজ্জেম হোসেন মানিক, মহিদুর রহমান, শ ম কামাল, বিমল কান্তি দাস।

এসএএস/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর