উত্তর মেরুর কাছাকাছি অবস্থিত বরফে মোড়া সোয়্যালবার্ড দ্বীপপুঞ্জে সম্প্রতি উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে এক রহস্যময় দৃশ্য—দূরবর্তী এক উপকূলে ভিড় জমিয়েছে অসংখ্য বিশাল আকৃতির প্রাণী। ছবিটি প্রকাশ্যে আসতেই বিজ্ঞানমহলে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা।
আর্কটিক বৃত্তের সাড়ে ৬৬ ডিগ্রি অক্ষাংশ থেকে মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটিকে ঘিরেই পৃথিবীর উত্তরের শেষ সীমা। নরওয়ে, কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও রাশিয়াই উত্তর মেরুর সবচেয়ে কাছের দেশ। নরওয়ের উত্তরে নরওয়েজিয়ান সাগর পেরোলেই দেখা মিলবে রহস্যময় সোয়্যালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের, যাকে অনেকে ‘স্পিটজবারজেন’ নামেও চেনেন।
বিজ্ঞাপন

রহস্যের শুরু উপগ্রহচিত্রে
সম্প্রতি প্রকাশিত এক উপগ্রহচিত্রে দেখা যায়—দূরবর্তী এক উপকূলে একসঙ্গে জড়ো হয়েছে বিশাল দেহী অজানা প্রাণীর দল। দৃশ্যটি প্রথমে গবেষকদের বিভ্রান্ত করলেও পরবর্তী বিশ্লেষণে জানা যায়, ওই প্রাণীগুলো আসলে সিন্ধুঘোটক বা ওয়ালরাস।

বিজ্ঞাপন
ডব্লিউডব্লিউএফ এবং ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘Walrus from Space’ প্রকল্প থেকেই ওই ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০২১ সালে চালু হওয়া এই প্রকল্পে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে মেরুবৃত্তীয় প্রাণীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন।
গবেষকদের দাবি, সোয়্যালবার্ডের ওই নির্দিষ্ট উপকূলে এর আগে কখনও ওয়ালরাসদের এমন সমাবেশ দেখা যায়নি—এটি জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
বরফ গলছে, বদলে যাচ্ছে আচরণ
দুই টন ওজনের বিশাল সিন্ধুঘোটক সাধারণত বিশ্রাম ও প্রজননের জন্য সমুদ্রের বরফচাঁইয়ের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়ায় সুমেরুর বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। এর ফলে নিরাপদ আশ্রয় হারিয়ে ওয়ালরাসেরা বাধ্য হচ্ছে উপকূলে উঠে আসতে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই অস্বাভাবিক আচরণ জলবায়ুর পরিবর্তনের ভয়াবহ সংকেত।
ডব্লিউডব্লিউএফ–এর ‘পোলার অ্যান্ড ওশান’ বিভাগের প্রধান উপদেষ্টা রড ডাউনি বলেন “সিন্ধুঘোটক শক্তিশালী প্রাণী, কিন্তু জলবায়ু সংকটের কারণে আজ তারা চরম ঝুঁকির মুখে। কারণ তাদের নিচ থেকে বরফ আক্ষরিক অর্থেই গলে যাচ্ছে।”

সোয়্যালবার্ড—অন্য গ্রহের মতো রহস্যময় এক দ্বীপ
সোয়্যালবার্ড পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি।
এখানেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যবীজ ভাণ্ডার ‘সোয়্যালবার্ড গ্লোবাল সিড ভল্ট’, যেখানে ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সংরক্ষিত আছে ১২ লক্ষের বেশি শস্যবীজ।
শীতকালে দীর্ঘ সময় সূর্যের আলো না পাওয়ায় দ্বীপটি ‘বিষণ্নতার দ্বীপ’ বলেও পরিচিত। ১৯২০ সালের সোয়্যালবার্ড চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে শাসিত হয় এ দ্বীপপুঞ্জ।

মেরু অঞ্চলের পরিবেশ সংকটে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
সিন্ধুঘোটক সুমেরুর বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। তাদের উপস্থিতি স্থানীয় খাদ্যশৃঙ্খল ও সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু বরফ গলে যাওয়ায় তাদের প্রাকৃতিক আবাস ও আচরণ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নীল তিমির চেয়ে তিনগুণ বড় প্রাণী কি আদৌ আছে?
বিজ্ঞানীদের মতে, সোয়্যালবার্ড উপকূলে ওয়ালরাসদের জমায়েত—জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে দৃশ্যমান সতর্কবার্তাগুলোর একটি।
এজেড

