শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পেনসিলভানিয়া হল: ঐতিহাসিক এক ভবনের গল্প

মীম নোশিন নাওয়াল খান
প্রকাশিত: ০২ জুন ২০২২, ০৬:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

পেনসিলভানিয়া হল: ঐতিহাসিক এক ভবনের গল্প

গেটিসবার্গ। পেনসিলভানিয়ার ছোট্ট একটা শহর, কিন্তু আমেরিকার ইতিহাসে এই ছোট্ট শহরটার গুরুত্ব অনেক। ১৮৬৩ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয়েছিল গেটিসবার্গে। আজও শান্ত শহরটার ভেতরে, আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সেই যুদ্ধের নিদর্শন। এই শহরের অনেক দালানকোঠা গৃহযুদ্ধের সাক্ষী। সেই ঐতিহাসিক ভবনগুলোর দেয়ালে আলাদা করে ছোট একটা ধাতুর পাতে লেখা আছে এগুলো ঐতিহাসিক ভবন। যেন গেটিসবার্গে আসা পর্যটকেরা সহজেই বুঝতে পারে কোন ভবনগুলো গৃহযুদ্ধের সময়েও এখানে এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল।

আমি গেটিসবার্গ কলেজের শিক্ষার্থী। গেটিসবার্গ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অনেকখানি জায়গাজুড়ে থাকায় আমার ক্যাম্পাস গৃহযুদ্ধের স্মৃতি বয়ে চলেছে আজও। তবে ক্যাম্পাসের সবচেয়ে পুরনো ভবন-যার নাম পেনসিলভানিয়া হল- সাক্ষী হয়ে আছে গেটিসবার্গ যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্যগুলোর।


বিজ্ঞাপন


meemবর্তমানে পেনসিলভানিয়া হল গেটিসবার্গ কলেজের মূল প্রশাসনিক ভবন। তবে এর ইতিহাসটা বেশ লম্বা। ১৮৩২ সালে পেনসিলভানিয়া কলেজ (বর্তমানে গেটিসবার্গ কলেজ) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তিন বছর পর ১৮৩৫ সালে জন ক্রেসন ট্রটওয়াইন এই ভবনটির নকশা করেন এবং ১৮৩৮ সালে এটি নির্মিত হয়। ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত এই ভবনটি ছিল একাধারে গেটিসবার্গ কলেজের একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, এবং প্রশাসনিক ভবন। ১৮৬৩ সালে আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময়ে গেটিসবার্গ কলেজের রসায়ন ও গণিতের অধ্যাপক মাইকেল জ্যাকবস ইউনিয়ন সৈন্যদের এই ভবনে নিয়ে আসেন যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করার জন্য। পরবর্তীতে সেই যুদ্ধে পেনসিলভানিয়া হল আহত সৈনিকদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল এবং মৃত সৈন্যদের জন্য মর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৮৬৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পেনসিলভানিয়া কলেজ পুনরায় ক্লাস চালু করে। ক্লাস শুরুর অনেক বছর পর পর্যন্ত পেনসিলভানিয়া হল এবং এর আশেপাশে বুলেট, মানুষের হাড়গোড়, রক্তাক্ত বইসহ যুদ্ধের নানা নিদর্শন পাওয়া যায়।

যুদ্ধের ইতিহাসের কারণে পেনসিলভানিয়া হলকে ঘিরে গেটিসবার্গে প্রচলিত রয়েছে এক ভৌতিক গল্প। এটা অবশ্য এখানে তেমন বিস্ময়কর কিছু নয়। গেটিসবার্গের অনেক পুরনো ভবন, যুদ্ধের ময়দানসহ বিভিন্ন জায়গাকে ঘিরে এমন অনেক ভৌতিক গল্প প্রচলিত আছে। বলা হয়, গেটিসবার্গের রাস্তায় রাতে হাঁটলে প্রায়ই নাকি অনেকে যুদ্ধের পোশাক পরা ইউনিয়ন বা কনফেডারেট দলের সৈন্যদের দেখেন।

meemতবে পেনসিলভানিয়া হলকে ঘিরে গল্পটা বেশ গায়ে কাঁটা দেয়ার মতো। লোকমুখে প্রচলিত আছে, পেনসিলভানিয়া হলের লিফট নাকি ভৌতিক। অনেকেই নাকি লিফটে উঠলে লিফট তাদেরকে তাদের গন্তব্যে না নিয়ে বেইজমেন্টে নিয়ে যায়। লিফটের দরজা খুললে দেখা যায় একটা হাসপাতালের ভেতরের চিত্র, আহত রক্তাক্ত সৈন্যদের আর্তনাদ, ডাক্তার-নার্সদের ছোটাছুটি।

আমি অবশ্য কখনো এমন কিছু দেখিনি। তবে যে একটু ভয় পাই না, তেমন কিন্তু নয়। পেনসিলভানিয়া হলের লিফট থেকে যতটা সম্ভব দূরেই থাকতে চেষ্টা করি।


বিজ্ঞাপন


লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার গেটিসবার্গ কলেজের শিক্ষার্থী

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর