শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

আট আনায় পুরি, এক টাকায় পেঁয়াজু

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২২, ০২:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

আট আনায় পুরি, এক টাকায় পেঁয়াজু

নব্বই দশকের শেষ দিকেও দেশে আট আনার প্রচলন ছিল। চার আনারও ব্যবহার হতো সে সময়। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই অচল বনে যায় চার আনা। বিংশ শতাব্দির গোড়াপত্তনের আগেই আট আনা দামের পণ্যের বিলুপ্ত ঘটে। এরপর কেটে গেছে ২২ বছর। সবার কাছে আট আনা দামের পণ্য ফুরিয়ে গেলেও ফুরায়নি মানিক ভাণ্ডারির কাছে। 

রাজধানী লাগোয়া সবুজে ঘেরা বনানীর এক আবরণ যেন কেরাণীগঞ্জের কলাতিয়া অঞ্চল। কলাতিয়া বাজারের শতবর্ষী কড়ই গাছের ছায়াতলে মানিক ভাণ্ডারির খাবার হোটেল। হোটেলের বয়সও প্রায় তিন দশক। সে সময়ও আট আনায় পুরি বিক্রি করতেন মানিক। তখন মানিকের বয়স ছিল কুড়ি বছরের কোঠায়। কালো চুল ধবল হয়ে গেছে। পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই। কিন্তু সব বদলে গেলেও বদলায়নি মানিকের পুরির দাম। এখনো আট আনায় পুরি বিক্রি করেন তিনি। 


বিজ্ঞাপন


puriরাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বসিলার রাস্তা ধরে প্রায় ১২ কিলোমিটার গেলে কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া বাজার। বাজারে নেমে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে হোটেলটি।

স্থানীয়দের ভাষ্য, বছরের পর বছর ধরে রাজধানী ও সাভারের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানিক ভাণ্ডারির হোটেলে পুরি-পেঁয়াজু খেতে আসে মানুষ। প্রতিদিন দুপুরের পরই নামে ক্রেতার ঢল।  

ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে মানিক ভাণ্ডারি বলেন, ২৮ বছর আগে দোকান দিছিলাম। তখন জিনিসপত্রের দাম কম আছিল। পুরি আট আনার বেচতাম। এখনো আট আনায়ই বেচি। জিনিসের দাম বাড়ছে, তাই সাইজ ছোট করা লাগছে।’

আট আনায় পুরি বিক্রির পাশাপাশি এক টাকায় পেঁয়াজু বিক্রি করেন তিনি। সেই পেঁয়াজুর আকার অনেকটা দেশের পাঁচ টাকার কয়েনের মত। 


বিজ্ঞাপন


দাম ও আকার। এই দুই মিলেই যেন এক বিশেষত্বের জন্ম দিয়েছে। তাই তো প্রতিদিন বিকাল তিনটা থেকে পেঁয়াজু-পুরি বিক্রির জোয়ার আসে মানিক ভাণ্ডারির হোটেলে। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী বা বয়স্করা, কেউ বাদ যান না এই খাবার স্বাদ নিতে। 

নিজেরা খেয়ে যাওয়ার যাওয়ার সময় পরিবার-পরিজনের জন্য পুরি–পেঁয়াজু নিয়ে যেতে ভুল হয় না কারো। পাশাপাশি কেউ কেউ অর্ডার করেন মুঠোফোনেও।

puriআট আনার পুরি ও এক টাকার পেঁয়াজুর স্বাদ নিতে আসা রায়হান হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্ধুর মুখে এই পুরি–পেঁয়াজুর খবর পেয়েছেন তিনি। তাই সময় করে চলে এসেছেন এর স্বাদ নিতে। 

ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে এই কিশোর বলেন, ‘আট আনা আমি দেখছি, কিন্তু আট আনায় কিছু কিনে কোনো দিন খাওয়া হয়নি। এখানে এখনো এই দামে খাবার পাওয়া যায়, বিষয়টা অবাক করার মত। তাই খেতে চলে আসলাম।’

এই পুরি–পেঁয়াজুর স্বাদ নিতে আসা শরিফুল সাগর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি এর আগেও খেয়েছি। এটা দেখতে যেমন সুন্দর। খেতেও দারুণ। আমার ভালো লাগে। তাই বারবার আসা হয়।’

মানিক ভাণ্ডারি জানান, অন্যান্য খাবার হোটেলের মত প্রতিদিন সকালেই খোলা হয় তার হোটেল। সকালে থাকে অন্য ১০টা হোটেলের মত স্বাভাবিক নাশতার বন্দোবস্ত। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় পুরি-পেঁয়াজু তৈরি। তিনটা থেকে শুরু হয়ে পুরি-পেঁয়াজু বেচাকেনা চলে সন্ধ্যা সাত-আটটা পর্যন্ত। 

কারই/এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর