বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

যে কারণে যানজট কমছে না সড়কে

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ০১:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

যে কারণে যানজট কমছে না সড়কে
ছবি : ঢাকা মেইল

রমজানের চতুর্থ দিনেও যানজটে অতিষ্ঠ নগর জীবন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে যানজটের পরিধিও। সকাল থেকেই অফিস ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ভুগতে হচ্ছে অসহনীয় যানজটে। সঙ্গে চৈত্রের প্রচণ্ড তাপ। 

বুধবার (৬ এপ্রিল) সকাল থেকেই তীব্র যানজট দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে। কারওয়ান বাজার মোড়, ফার্মগেট, বাড্ডা ও যাত্রবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সিটি বাসগুলো পয়েন্টে পয়েন্টে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করছে চালকরা। এতে ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে বাস, প্রাইভেট, সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর ট্রাকের সারি। 


বিজ্ঞাপন


এদিন কারওয়ান বাজার মোড় ও ফার্মগেট এলাকায় ঘুরে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মেইলের এই প্রতিবেদক। তারা জানান, সড়কের বড় একটি অংশ দখল করে রেখেছে মেট্রোরেল প্রকল্পের যন্ত্রাংশ। অন্যদিকে কয়েকটি সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। সড়কগুলোর ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অস্থায়ী দোকান। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে রয়েছে রিকশার জটলা। সব মিলে যানজটে পড়তে হচ্ছে সবাইকে। 

ফখরুল হাসান নামে এক যাত্রী বলেন, একদিকে ধুলা আরেকদিকে রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি। ভাঙা রাস্তায় বাস চলার সময় ঝাঁকুনিতে যেন হাড় গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। তার মতে, নগরীতে রাস্তার নির্মাণকৌশল ভালো নয়। অনেকগুলো সড়কের গাড়ি যখন এক সড়কে যুক্ত হয় তখন যানজট হওয়াটা স্বাভাবিক। 

কারওয়ান বাজারে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য জানান, বুধবার রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি থাকে। সোমবারও চাপ থাকে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মঙ্গলবার বন্ধ থাকার পর বুধবার নিউমার্কেটসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি বিপণিবিতান খোলা হয়। এছাড়াও বৃহস্পতিবারে পুরান ঢাকার দিকে চাপ থাকে। এর কারণ পরের দিন (শুক্রবার) ছুটির দিন হওয়ায় অনেক মানুষ ও গাড়ি একসঙ্গে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দিকে যায়।

দুই বছরে মোটরসাইকেল-ইজি বাইক বেড়েছে ৩০ লাখ
রাজধানীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে যানজট। বাড়ছে যানবাহনও। তবে সেই তুলনায় সড়ক বাড়ানো হয়নি। যাত্রী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, করোনার দুই বছরে গণপরিবহন সীমিত থাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল। ২০২০-২১ সালে ১০ লাখ নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধন করা হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


বাসের চেয়ে হাঁটার গতি বেশি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে সড়কে পিক টাইমে চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার। চলতি বছরে এই গতি নেমেছে প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। উল্টো দিকে বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষের হাঁটার গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় এর চেয়েও বেশি। 

এর আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) আশঙ্কা করা হয়েছিল— ২০৩০ সালের দিকে সড়কে যানবাহনের গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে আসতে পারে। 

যানজট নিরসনে কোন পথে হাঁটছে সরকার
ঢাকার যানজট নিরসনে ২০০৫ সালে ২০ বছর মেয়াদী কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়ন করে সরকার। যেখানে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শহরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ৭০টি পলিসি এবং ১০ প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে রাজধানীতে বিদ্যমান যানজট সমস্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। পরবর্তীতে পরিকল্পনায় সংশোধন এনে ২০১৫ থেকে ২০৩৫ সালের কথা বিবেচনা করে গণপরিবহন খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য আরএসটিপি প্রণয়ন করে। যে দুটিতেই নগরীর মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিতে ফুটপাতগুলো সচল করার সুপারিশ করা হয়।

এর মধ্যে ৮টি রেডিয়াল রোড (শহরের কেন্দ্রের সঙ্গে বাইরের সংযোগ সড়ক), ৩টি রিং রোড (বৃত্তাকার সড়ক) এবং গণপরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে। এখানে গণপরিবহন বলতে মূলত ঢাকায় বাস সার্ভিসকেই বোঝানো হয়েছে। এজন্য সুপারিশ করা হয়েছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের। এছাড়া এসটিপির সুপারিশে আছে ৫টি মেট্রোরেল, ২টি বিআরটি, ৬টি এক্সপ্রেসওয়ে, ২১টি ট্রান্সপোর্টেশন হাব নির্মাণ। কিন্তু সরকার স্বল্প খরচে যেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যেত, সেগুলো বাস্তবায়ন না করে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি আরও এমন কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা এসটিপি প্রস্তাব দেয়নি।

ডিএইচডি/ এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর