মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শ্যামলীর রূপায়ণ শেলফোর্ডে অগ্নিকাণ্ড, এক মাসেও চালুর সম্ভাবনা কম

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২৩, ০১:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

শ্যামলীর রূপায়ণ শেলফোর্ডে অগ্নিকাণ্ড, এক মাসেও চালুর সম্ভাবনা কম

রাজধানীর শ্যামলীতে থাকা ২০ তলা রূপায়ণ  শেলফোর্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুরো ভবনে বৈদ্যুতিক লাইন পুড়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সার্ভার লাইনও। ফলে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে ভবনটি। বৈদ্যতিক লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আগামী এক মাসেও ভবনটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা কম।

শনিবার (৩ জুন) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন ফ্লোরে থাকা ভাড়াটিয়া, মালিক ও ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন


ভাড়াটিয়া ও বিভিন্ন ফ্লোরের মালিকরা জানিয়েছেন, তারা ঘটনার রাত থেকে ভবনে উঠতে পারেন নি। আজ শনিবার দুপুরে সুযোগ পেয়ে মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভবনটিতে দীর্ঘদিন থেকে ভাড়ায় অফিস নিয়ে ব্যবসা করছিল একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মচারী বলেন, সাত তলা থেকে ওপরে আর ওঠা যাচ্ছে না। পুরোটাই অন্ধকার আর গরম। গরম আর পোড়া তারের গন্ধে ওপরে ওঠা অসম্ভব। 

ভবন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভবনটি ২০তলা। তাতে প্রায় ৩০ টির মতো প্রতিষ্ঠানের ভাড়া ও কেনা ফ্লোরে অফিস চলে। এরমধ্যে পাঁচটি ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে। ঘটনার পর থেকে পুরো ভবনে বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন। ফলে কোনো প্রতিষ্ঠান সেদিন থেকে আর তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে না। বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র চলে যাচ্ছে। কেউ যাচ্ছে তাদের মুল অফিসে আবার জরুরী প্রয়োজনে কাজ করার জন্য অন্যত্র মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে ঘটনার রাতে দ্রুত দমকল বাহিনী না আসলে তারা এসব মালামালও পেতেন না।

ভবনটিতে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানের দু’জন কর্মচারী বলেন, ঘটনার দিন অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, ভবনে থাকা একটি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন চলাকালীন রোগীকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আনা হয়েছে। তখনও তার অপারেশন কাজ শেষ হয়নি। সেই অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে নামিয়ে আনা হয়। এছাড়াও পাঁচটি ক্লিনিক ও হাসপাতালের অর্ধ শতাধিক রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

fire


বিজ্ঞাপন


ভবনটিতে পাঁচটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে অন্যতম ট্রমা সেন্টার অ্যান্ড স্পেলাইজড হাসপাতাল এবং ইসলাম ডায়াগনস্টিক ল্যাব। জানা গেছে, ট্রমা সেন্টারটিতে আইসিইউ থাকলেও সেটি ঘটনার দিন থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র বৈদ্যতিক সমস্যা কারণে। এছাড়াও ভবনটিতে ইউরোপীয় ইউনিভার্সিটি ছাড়াও কয়েকটি ব্যাংক, বীমার শাখা অফিসও ছিল। তবে পুরো ভবন না পুড়লেও অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার দুপুরেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে আর কোন রোগী যাচ্ছে না। কারণ তারা সেদিন থেকে জেনারেটরে কাজ চালালেও এখন অবস্থা নাজুক। বিকল্প উপায় না থাকলে হাসপাতালগুলোর কাযক্রম চালানো সম্ভব হবে না। ভবনটির নিচে চারজন পুলিশ সদস্যকে তখন পোশাকে ডিউটি করতে দেখা গেছে। তবে তারা ভবন সংশ্লিষ্ট ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।    

ইনপুটেট সলিউশন নামের একটি সফটওয়ার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, আমরা আজ অফিস বদলাচ্ছি। কারণ এটা তো আগামী এক মাসেও চালু হবে কিনা সন্দেহ। এ সময় তার কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরো ভবনের বৈদ্যতিক লাইন পুড়ে গেছে। কোন তলায় বিদ্যুৎ নেই। তার সাথে আসা একজন বলেন, আজ আমাদের ছুটির দিন। কিন্তু অফিসের এই অবস্থার কারণে ছুটির দিনও মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য আসতে হলো।

যখন তার সাথে কথা হচ্ছিল সেই সময় তিনি ভবনটির সামনে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে একটি ভ্যানে করে বিভিন্ন কম্পিউটার ও আইটি সরঞ্জাম এক ব্যক্তিকে দিয়ে লোড করাচ্ছিলেন। তার পাশেই আরেকটি ব্লু পিকআপে দুই শ্রমিক অপেক্ষা করছিলকখন তাদের মালামাল নামবে। অবশ্যই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই দ্রুত নেমে এলো নানা মালামাল। পরে জানা গেল, সেই মালামালগুলো ডাটা সফট নামের একটি আইটি সফটওয়ার প্রতিষ্ঠানের।

ডাটা সফট নামের ওই সফটওয়ার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা দেবাশীষ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের এখানে মুল অফিস ছিল কিন্তু আমরা এখন মালামালগুলো বনানী অফিসে নিয়ে যাচ্ছি। কারণ এখানে কোন বিদ্যুতের লাইন নাই। বিদ্যুত বন্ধ। ফলে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। আগামী এক মাসেও কাজ হবে কিনা সন্দেহ। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমরা দ্রুত সব কিছু সরিয়ে নিচ্ছি।

shyamoli

দেবাশীষের সাথে কথা বলার মাঝেই শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে একটি টিম আসেন ভবন পরিদর্শনে। ওই সময় ভবনটির বিভিন্ন তলায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাড়াটিয়ারা তাদের প্রতিষ্ঠানের মালামাল নামাতে ব্যস্ত। তারই ফাঁকে একজনের সাথে কথা হয় এই ঢাকা মেইলের প্রতিবেদকের সঙ্গে।

 নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা বলেন, মুলত বৈদ্যতিক লাইনের গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। তবে ডার্ক রুম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিচতলা থেকে ২০ তলা পযন্ত পুরো বৈদ্যতিক লাইন থেকে শুরু করে সব ডাটা ক্যাবল পুড়ে গেছে।

তবে বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাতে এ ঘটনা ঘটলেও এখনও মোহাম্মদপুর থানায় কোনো মামলা হয়নি। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভবনটিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং তারা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালায়। অবশেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ততক্ষণে একটি প্রাণ ঝড়ে যায়। ওই রাতে বিভিন্ন তলায় আটকে পড়া ২৩ জনকে নামিয়ে আনা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভবনটির ১৯ ও ২০তলা। ১৯ তলায় ছিল ডাটা সফট’ ও ‘নিপা ফার্মাসিটিক্যাল’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের অফিস।

এমআইকে/আরআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর