পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা, ৪ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতে গ্রেফতার ১

পুলিশের ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে অভিনব কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগে কামাল হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ মে) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ থানার হীরাঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।

সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন জানান, প্রতিদিন ভোর ৬টায় ভিকটিমদের ফোন দেন কামাল। তিনি নিজেকে ডিবির সদস্য দাবি করেন। তারপর ভুক্তভোগীদের বলেন- আপনার ছেলে কী করে খোঁজখবর রাখেন? এরপর ছেলের কি হয়েছে চাইলে উত্তরে বলেন, ছেলেকে একটি মেয়েসহ হোটেল থেকে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। ছেলেকে মামলা থেকে বাঁচাতে চাইলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে হবে এবং  বিষয়টি নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করা যাবে না। অন্যথায় ছেলের অনেক বড় ক্ষতি হবে। 

তিনি আর জানান, কামাল প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এভাবে ১০০-১৫০টি নম্বরে ফোন দিতেন। এর মধ্যে ২/৩ জনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ১ থেকে ২ লাখ টাকা আত্মসাত করতেন। তাকে আরও ২ জন সহায়তা করতেন। প্রতিদিন ভোর ৫টায় কামাল তার সহযোগীকে ফোন দিয়ে কাজে বের হতে বলতেন। তার সহযোগী সকাল ৬টার মধ্যে গুলিস্তানের কাপ্তান বাজার, মতিঝিল ও কমলাপুর এলাকায় এসে বিভিন্ন বিকাশের এজেন্টের দোকান থেকে প্রতারণা করে আনা অর্থ উত্তোলন করতেন। কামাল প্রতিদিন নতুন সিম ব্যবহার করতেন। অন্য এক সহযোগী তাকে এসব সিম সরবরাহ করতেন।

মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন জানান, ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে বাংলালিংক কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সিম কিনে নারীদের টার্গেট করে তাদের সাথে কথা বলে নিজেকে বড় লোকের ছেলে পরিচয় দিয়ে তাদের সাথে প্রেম করতো। তাদের সাথে সম্পর্ক হলে তাদের সাথে দেখা করার জন্য রওনা করে পথে তার এক্সিডেন্ট হয়েছে বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। দুই বছর এভাবে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা ইনকাম করে সেটা বাদ দিয়ে প্রতারণার নতুন পন্থা অবলম্বন করে। ২০১৬ সাল থেকে সে বিভিন্ন যুবক বয়সী ছেলেদের অভিভাবকদের টার্গেট করে তাদের ছেলে-মেয়ে অসামাজিক কাজ করতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে বলে পুলিশ পরিচয়ে তাদের কাছে টাকা দাবি করা শুরু করে। টার্গেট ব্যক্তির সাথে কথা বলার পর প্রতারণা করে টাকা নেওয়া শেষ হলে সিমটি ভেঙে ফেলতো।

তিনি জানান, গ্রেফতার কামাল অভিনব পন্থায় প্রতারণা করে এখন পর্যন্ত ৪ কোটি টাকার অধিক টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, কামাল প্রতারণা করে অর্জিত টাকা দিয়ে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে ২ কোটি টাকা সুদের কারবারে বিনিয়োগ করেছে ও বাকি টাকা দিয়ে ৪৩ শতক জমি ক্রয় করেছে। এছাড়া একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছে।