সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে ক্যাপস’র ১৫ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ মে ২০২৩, ০৩:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে ক্যাপস’র ১৫ সুপারিশ

কম সালফারযুক্ত ডিজেল (৫০ পিপিএম) আমদানি ও ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ নির্মল বায়ু আইন যতদ্রুত সম্ভব প্রণয়ন করার দাবি জানিয়েছে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস)। একই সঙ্গে ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে তাদের দেওয়া ৪টি দাবি ও ১৫টি সুপারিশ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে পর্যালোচনাপূর্বক গ্রহণ করলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ হবে বলে মতামত দিয়েছে সংগঠনটি। 

সোমবার (২২ মে) ঢাকার শাহবাগ চত্বরে ক্যাপসার উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই দাবি ও সুপারিশগুলো দেওয়া হয়। বিএনসিএ, বারসিক, সেভ ফিউচার বাংলাদেশ, জিএলটিএস, গ্রিন ভয়েজ, পরিবেশ উদ্যোগ, সিপিআরডি, সিজিইডি নির্বাহী পরিচালক এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের উদ্যোগে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। 


বিজ্ঞাপন


বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সম্প্রতি দেশের পরিবেশ দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিভিন্ন শহর ধীরে ধীরে বসবাসের যোগ্যতা হারাচ্ছে। সারাদেশে প্রবাহমান তীব্র দাবদাহের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বায়ুদূষণও দায়ী। ধূলিকণা এবং দূষিত গ্যাসের তাপ শোষণ করার ক্ষমতা থাকার কারণে বর্তমানে অত্যাধিক দূষিত বায়ুতে অবস্থিত ধূলিকণা এবং গ্যাসীয় পদার্থগুলো সূর্যের তাপমাত্রাকে শোষণ করে তাপপ্রবাহ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। 

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, পাশাপাশি সালাফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সুতরাং তাপমাত্রার বৃদ্ধি কমাতে বায়ুদূষণ কমানো জরুরি। অথচ দেশে বায়ুদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। অতি দ্রুত বায়ুদূষণ কমাতে পদক্ষেপ না নিলে জনজীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। তিনি বায়ুদূষণ ও তাপমাত্রা কমানোর জন্য বনায়ন ও জলাভূমি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। 

মানববন্ধনে নিম্মলিখিত ৪টি দাবি ও ১৫টি সুপারিশ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে পর্যালোচনাপূর্বক গ্রহণ করলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ হবে বলে বক্তরা মতপ্রকাশ করে।

দাবিগুলো


বিজ্ঞাপন


  • ভবিষ্যতে বায়ুদূষণের মারাত্মক প্রভাব হ্রাস করার জন্য বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ তে PM2.5 এর পূর্ববর্তী মানমাত্রা কমপক্ষে প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম বজায় রাখার দাবি। 
  • বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ এ নির্গমন মানমাত্রাগুলোকে আরও শক্তিশালী করা এবং আগত Integrated Energy and Power Master Plan (IEPMP) তে স্টাক ইমিশনের মানমাত্রাগুলোকে পুনঃবিবেচনা এবং অন্তভুক্ত করতে হবে।
  • পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃক প্রণীত বায়ুদূষণ রোধ নির্দেশিকার ১৬ নম্বর পৃষ্ঠার ১৯ নম্বর ক্রম অনুযায়ী কম সালফারযুক্ত ডিজেল (৫০ পিপিএম) আমদানি ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
  • পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃক প্রণীত নতুন পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২৩ এর তফসিল-১ অনুযায়ী কয়লা ও তেলভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট (৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত) এবং গ্যাসভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট (১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত) কমলা শ্রেণীর অন্তভুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান। যা লাল শ্রেণীভুক্ত থাকার দাবী জানাচ্ছি।

স্বল্পমেয়াদী সুপারিশ

  • অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে সেন্ড ব্লকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে।
  • ব্যক্তিগত এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করা যেতে পারে। 
  • নির্মাণকাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে।
  • মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদফতরের সমন্বয়ে দূষিত শহরগুলোতে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। 
  • রাস্তায় ধূলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে।

মধ্যমেয়াদী সুপারিশ

  • সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদবাগান করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে।
  • আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • দূষিত শহরগুলোর আশপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে। 
  • সিটি গভর্নেন্সের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়ন মূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের মাধ্যমে স্বল্প নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশ

  • নির্মল বায়ু আইন যতদ্রুত সম্ভব প্রণয়ন করতে হবে। 
  • পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যামস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়াও বায়ুদূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে।
  • গণপরিবহনসহ ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।
  • পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস ও পরিবেশ পুলিশ চালু এবং পরিবেশ আদালত কার্যাবলী গতিশীল করতে হবে। 
  • সব ধরনের শিল্প কারখানাকে (লাল, কমলা শ্রেণী) Real Time Monitoring প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূষণ নির্গমনের মাত্রা পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃক সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখলে দূষণের নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।
  • সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ুদূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য নির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশের বায়ুদূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

এ সময় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক আলমগীর কবির, বারসিকের সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম, সিজিইডির নির্বাহী পরিচালক আব্দুল ওহাব, বিএনসিএ সহ-সমন্বয় শামস সুমন, গ্রিন ভয়েজের সহ-সমন্বয়ক হুমায়ুন কবির সুমন, সিপিইডির ইমরান সরকার, পরিবেশ উদ্যোগের সমন্বয়ক মাহমুদা ইসলাম এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

ডিএইচডি/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর