শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ছায়াদানকারী গাছ কেটে ফুলের চারা লাগিয়ে ডিএসসিসির ‘উন্নয়ন’

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৩, ০৮:৫৪ এএম

শেয়ার করুন:

ছায়াদানকারী গাছ কেটে ফুলের চারা লাগিয়ে ডিএসসিসির ‘উন্নয়ন’

রাজধানীর সাত মসজিদ রোডের সড়ক বিভাজকে থাকা বড় বড় গাছগুলো কেটে এরইমধ্যে সাবাড় করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। উন্নয়নের নামে চুপিসারে রাতের আঁধারে কাটা হয় গাছগুলো। ছায়াদানকারী বড় বড় এসব গাছ কেটে সড়ক বিভাজকের ‘উন্নয়ন’ করা হচ্ছে ছোট ছোট ফুলের চারাগাছ লাগিয়ে।

সচেতন নাগরিক ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, গাছগুলো সড়ক ও নাগরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তো নয়ই, গাছগুলো রেখেই সড়ক সম্প্রসারণ করা সম্ভব ছিল। শুরু থেকেই বিভিন্ন নাগরিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গাছ কাটার বিরোধিতা করে আসছে। লাগাতার নানা কর্মসূচিও পালন করছে তারা। নগর ভবন ঘেরাও করার কর্মসূচিও দেওয়া হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কের সড়ক বিভাজক বা আইল্যান্ডের গাছগুলো কাটা উন্নয়ন কাজের শুরুর দিকের নির্দেশনায় ছিল না বলে দাবি করে আন্দোলনকারীরা বলছেন, অবৈধভাবেই গাছগুলো কাটা হয়েছে।

অন্যদিকে সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাছগুলো সড়কদ্বীপের জন্য বেমানান ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কেটে ফেলা হচ্ছে। তার পরিবর্তে হরেকরকম বাহারি ফুলের গাছে সজ্জিত করা হচ্ছে সড়ক বিভাজক (মিডিয়ান)।

dm

কাছ কাটার পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, উপায় না থাকায় উন্নয়ন কাজের জন্য এই গাছ কাটতে হচ্ছে। যত গাছ কাটা হবে, তার তিন গুণ লাগানো হবে। গাছ কাটা নিয়ে কেউ কেউ মর্মাহত হতেই পারেন, কষ্ট পেতেই পারেন। এটা তাদের আবেগের বিষয়। আবার অনেকেই ঢালাওভাবে অনেক কথা বলছেন। পূর্ণ তথ্য না নিয়েই কথা বলেন। আসলে উন্নয়ন কাজে অনেক সময় গাছ ফেলে দিতে হয়, কেটে ফেলতে হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু আমরা তখনই করি, যখন নিতান্তই আর কোনো উপায় নেই। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তাপস।


বিজ্ঞাপন


এদিকে নগরে গাছ রক্ষা ও কাটার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে পরিবেশবাদীরা বলছেন, মেয়র ঘোষণা দিয়েছেন গাছ লাগানোর। কিন্তু কি গাছ লাগাবেন তা বলেননি। সিজনাল ফুল গাছ লাগিয়ে বলা হয় গাছ লাগানো হয়েছে, তাহলে হবে? স্বল্প আয়ু আর ধুলায় গাছগুলো থাকে না। গাছ না থাকায় স্থানগুলো ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়। অন্যদিকে ক্রমাগত বৃক্ষ নিধনে তাপমাত্রা বেড়ে নিজের অবস্থান জানান দিয়ে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন বলছে, সড়কটিতে ভুল গাছ লাগানো হয়েছে। যদি ভুল গাছ লাগানো হয়ে থাকে, সেই ভুল করা কর্মকর্তাকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তারা আর কত ভুল করবেন?

পূর্ণবয়স্ক ছায়াদানকারী গাছ কেটে সড়ক বিভাজকে ফুলগাছ লাগানো প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন (মেগা) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক খায়রুল বাকের বলেন, পুরো বিভাজকে প্রায় ১ হাজার ৫শ গাছ লাগানো হবে। ২ দিনের মধ্যে সড়ক বিভাজক ফুল গাছে সজ্জিত করার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

সম্প্রতি ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোড ঘুরে দেখা যায়, সড়ক বিভাজকে রঙ্গণ, কামিনী, বাগান বিলাস, চন্দ্রপ্রভা (টেকোমা) ও কাঞ্চন ফুলের চারা লাগিয়েছে সিটি করপোরেশন। পরপর দুটো গাছের মধ্যে ৪-৫ ফুট দূরত্ব রাখা হয়েছে। সড়কের মোট ১.৭ কিমি দৈর্ঘ্যের বিভাজকের ৮০০ মিটার অংশে ইতিমধ্যে ৬৫০টি ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, এই সড়ক বিভাজকে ফুলগাছ লাগানো এবং প্রয়োজনীয় ভিটি বালু, মাটি, গোবর ও সার ক্রয়ে মোট ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে।

পূর্ণবয়স্ক ছায়াদানকারী গাছ কেটে সড়ক বিভাজকে ফুলগাছ লাগানো প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন (মেগা) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক খায়রুল বাকের বলেন, পুরো বিভাজকে প্রায় ১ হাজার ৫শ গাছ লাগানো হবে। ২ দিনের মধ্যে সড়ক বিভাজক ফুল গাছে সজ্জিত করার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

dm

এ বিষয়ে স্ট্যামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কে যে গাছ লাগানো হচ্ছে সেগুলো ফুলের গাছ। আমরা আশা করব, গাছ লাগানোর সময় দেশীয় প্রজাতির গাছ বিবেচনায় রাখা হবে। মাটির গুণাগুণ বিবেচনা করে গাছ লাগাতে হবে।

ড. আহমদ কামরুজ্জমান বলেন, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও পরিকল্পনাবিদদের সাথে আলোচনা করে গাছ লাগানো হবে- এমনটাই সবার প্রত্যাশা। সেই সাথে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বৃক্ষজাতীয় গাছ না লাগানোর যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকা মেইলকে বলেন, সাত মসজিদ সড়কে গাছের বদলে ফুলগাছ লাগানোর কারণে আগের ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। উষ্ণায়ন রোধে ঢাকা শহরের সড়ক বিভাজকের গাছপালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফুলগাছের পাশাপাশি উপযুক্ত জাতের গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া গেলে এই সড়ক ব্যবহারকারীরা অধিকতর উপকৃত হবেন এবং এলাকার বায়ুমানের উন্নতি হবে ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে।

এর আগে রাজধানীর সাত মসজিদ সড়কের ছায়াদানকারী গাছ কাটা বন্ধে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা। ৮ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করেন তারা। এখনও নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে চলমান রয়েছে প্রতিবাদ। রোববার (২১ মে) সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন ‘গাছেদের জন্য নগরভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।

ডিএইচডি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর