রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে ভোগান্তির অন্ত নেই। দিন দিন এর পরিমাণ যেন বেড়েই চলেছে। তবে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের ভোগান্তি কমাতে এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে পাসপোর্ট অধিদফতর। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর আফতাবনগরে নতুন পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে আজ। তবে শুরুর দিনই ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের।
রোববার (৭ মে) সকাল ৮টায় আঞ্চলিক এই অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ এই অফিসে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
আহমেদ হোসেন নামে এক পাসপোর্ট প্রত্যাশী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার বাসা আফতাবনগরে। আমাদের এলাকায় নতুন পাসপোর্ট অফিস হওয়াতে আজ এখানে আসলাম। কিন্তু এখানে এসেও দীর্ঘ লাইন দেখতে পাই। আবার অনেকে ফোনের মাধ্যমে লাইন ছাড়াও ভেতরে প্রবেশ করছেন।’
হাবিব নামের অপর একজন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি খিলগাঁও থেকে এসেছি। তবে এখানেও ভোগান্তি রয়েছে।’
কী ধরনের ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আসছি। কিন্তু এখনো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।’
এদিকে, সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকেই মুগদা, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, মতিঝিল, পল্টন, বাড্ডা, হাতিরঝিল থানার বাসিন্দারা পাসপোর্ট আবেদন নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। নিচতলায় লাইনে দাঁড়ানো সেবা প্রত্যাশীদের নির্দিষ্ট সময় পরপর ওপরের তলায় নেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের ওপর থেকে মাত্রাতিরিক্ত চাপ কমানো এবং সেবা সহজ করার লক্ষ্যে রাজধানীতে একাধিক অফিস এবং আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সেন্টার (এপিসি) স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই লক্ষ্যেই রাজধানীর আফতাবনগর এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঢাকা পূর্ব (আফতাবনগর) নামে একটি অফিস করা হয়েছে।
আপাতত আফতাবনগর মেইন রোডের ৮ নম্বর এভিনিউ, এফ ব্লক, সেকশন-২ এর ২ নম্বর ভাড়া বাড়িতে চলবে এই কার্যক্রম। এই অফিসের অধীনে থাকবে মুগদা, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, মতিঝিল, পল্টন, বাড্ডা ও হাতিরঝিল থানা। ওই ৯ থানার বাসিন্দারা সেখান থেকে পাসপোর্টের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর শুরুর দিকে আফতাবনগর এলাকায় একটি ভবন ভাড়া নেওয়া হয়। চারতলা বিশিষ্ট ওই ভবনটিতে ইতোমধ্যেই অফিসের বিভিন্ন ফ্লোরে কাউন্টার ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেস্ক এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানো থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সাজসজ্জা শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে অফিস ভবনে সুপেয় পানি, মাতৃদুগ্ধ কর্নার ও সেবা প্রত্যাশীদের বসার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এদিকে, সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে দুইজন আনসার সদস্যকে আঞ্চলিক এই পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে রাসেল নামে এক আনসার সদস্য ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘মহাপরিচালক স্যার আসবেন, তাই আমরা এখানে এসেছি।’
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার জানিয়েছেন, উদ্বোধনের দিন থেকেই নতুন অফিসে সেবা পাওয়া যাবে। নতুন এই পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ জন সেবা নিতে পারবেন।
এর আগে গত ১ মার্চ থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় মোহাম্মদপুর ঢাকা পশ্চিম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চালু হয়। ওই অফিসে সাভার, ধামরাই, মোহাম্মদপুর, আদাবর, দারুস সালাম, শাহ আলী, হাজারীবাগ, নিউ মার্কেট থানার নাগরিকরা পাসপোর্ট সেবা নিতে পারবেন।
উল্লেখ্য, আগারগাঁওয়ের বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে শেরে-ই-বাংলা নগর, মিরপুর, কাফরুল, রূপনগর, গুলশান, বনানী, শাহবাগ, ধানমন্ডি, কলাবাগান থানা এলাকার বাসিন্দারা পাসপোর্ট সেবা পাবেন। এছাড়া উত্তরা-পূর্ব, উত্তরা-পশ্চিম, উত্তর খান, দক্ষিণ খান, তুরাগ, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, আশুলিয়া, পল্লবী, ভাষানটেক থানা এলাকার পাসপোর্ট আবেদনকারীরা উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সেবা পাবেন।
এদিকে, কেরানীগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের অধীনে থাকবে শ্যামপুর, কদমতলী, কোতোয়ালি, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ, লালবাগ, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, বংশাল ও ওয়ারী থানা।
অন্যদিকে, ঢাকা সেনানিবাসের পাসপোর্ট অফিসের সেবা নিতে পারবেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার অধীনে বসবাসরত নাগরিকরা। এছাড়াও সচিবালয়ের পাসপোর্ট অফিসের সেবা পাবেন শুধু সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পোষ্যরা।
কেআর/আইএইচ

