শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সাংবাদিকদের জন্য ইসির নীতিমালা প্রত্যাখ্যান, সিইসির কাছে ৮ দাবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

সাংবাদিকদের জন্য ইসির নীতিমালা প্রত্যাখ্যান, সিইসির কাছে ৮ দাবি

সম্প্রতি সাংবাদিকদের জন্য নির্বাচনের সময়কালে পেশাগত কাজ করতে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারমধ্যে ভোটের সময় মোটরসাইকেল ব্যবহার বন্ধসহ ইসির নীতিমালা নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে সব নির্বাচনের খবর সংগ্রহে মোটরসাইকেল ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ আট দফা দাবি জানালেন আরএফইডির নেতারা।

রোববার (৩০ এপ্রিল) রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য স্মারকলিপি দেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


এতে সাংবাদিকরা গত ১২ এপ্রিল জারি করা সংবাদ সংগ্রহে ইসির নীতিমালা প্রত্যাখ্যানের কথাও তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো-
১. নির্বাচন কমিশনের অনুমতিপ্রাপ্ত কার্ডধারী সাংবাদিকদের কোনো ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষে (গোপন ভোটকক্ষ নয়) প্রবেশ করতে কারো কোনো অনুমতির প্রয়োজন পড়বে না। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সাংবাদিক কার্ডই চূড়ান্ত অনুমতিপত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। কেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি বাতিল করতে হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি গাইবান্ধার উপ-নির্বাচনে ইসির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, ভোটগ্রহণের অনিয়মের সঙ্গে প্রিজাইডিং অফিসাররা যুক্ত ছিলেন। সুতরাং কোনো অনিয়মে যদি কোনো কর্মকর্তা যুক্ত থাকেন তাহলে অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া অনুমতি নিতে যে বিলম্ব ঘটবে, তার মাধ্যমে কারচুপি আড়াল করার সুযোগ তৈরি হবে।

২. নির্বাচন কাভারেজে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দিতে হবে। দেশের এমন অনেক ভোটকেন্দ্র আছে যেখানে গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না।


বিজ্ঞাপন


৩. ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচারে ইসির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির আধুনিক এই যুগে তাৎক্ষণিক সংবাদ প্রচার করতে হয়। এ ছাড়া সরাসরি সম্প্রচার হলে ভোট নিয়ে প্রশ্ন অনেকাংশেই কমে যাবে।

৪. ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচনের সঙ্গে যে ব্যক্তিরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন, তাদের বক্তব্য ছাড়া যে কোনো মাধ্যমের প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ হবে।

৫. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিক নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিকভাবে ডিসি (জেলা প্রশাসক) অফিস কিংবা নির্বাচন অফিস থেকে কার্ড সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সাংবাদিক কার্ড যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হতে হবে।

৬. কোনো গণমাধ্যমকর্মী অহেতুক দীর্ঘক্ষণ কোনো ভোটকক্ষে অবস্থান করেন না, যদি না ভোটে কোনো ধরনের অনিয়মের চিত্র তাদের কাছে ধরা পড়ে। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, একটি ভোটকক্ষে ১০ মিনিটের বেশিক্ষণ অবস্থান করা যাবে না। সাংবাদিকদের কাজ সময় দিয়ে বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি বাতিলের দাবি জানানো হলো।

৭. প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা কিংবা আলোচিত প্রার্থীরা যখন ভোট দিতে যান, তখন ছবি-ফুটেজ কিংবা সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকেন টেলিভিশন ও পত্রিকার সংবাদকর্মীরা। এক্ষেত্রে অনেকজন সংবাদকর্মীকে একত্রে কোনো কক্ষে প্রবেশ করতে হয়। এ ছাড়া সাধারণত কোনো ঘটনা ছাড়া একাধিক গণমাধ্যমকর্মী একটি কেন্দ্রে প্রবেশও করেন না। তাই দুইজনের বেশি একটি কক্ষে ঢুকতে পারবেন না বলে নীতিমালায় যে ধারাটি রয়েছে, তা বাতিল করা উচিত বলে মনে করি আমরা।

৮. ভোটের দিন নির্বাচনে ইন্টারনেটের ব্যবহার সচল রাখতে নির্দেশনা দেবে নির্বাচন কমিশন।
আরএফইডির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই করা স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, সংবিধানের ৩৯ (১) অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এই নিশ্চয়তা কোনো শর্তযুক্ত নয়। সুতরাং কোনো বিধি-বিধান, আইন এই স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। আর যদি তা করা হয় তাহলে তা হবে সংবিধানের লঙ্ঘন।

সাংবাদিকরা বলেন, গত ১২ এপ্রিল কমিশন যে নীতিমালা জারি করেছে, তাতে আমরা হতাশ ও বিস্মিত হয়েছি। মতবিনিময় সভায় আরএফইডি লিখিতভাবে সাত দফা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়েছিল। জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, এগুলো বিবেচনায় নিয়ে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু ঘোষিত এই নীতিমালায় আমাদের কোনো দাবিই আমলে নেওয়া হয়নি, যা ২০১৮ নীতিমালার অনুরূপ হয়েছে। একে কার্বন কপি বলা যেতে পারে।

সুষ্ঠু নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের সহায়ক শক্তি গণমাধ্যম। তবে নীতিমালার নামে স্বাধীন সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ কখনোই মেনে নেবে না আরএফইডি। ইতোমধ্যে এই নীতিমালা দেশে বিদেশে কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। সুতরাং অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নীতিমালায় সংশোধনের দাবি জানাই আমরা। নতুবা আরএফইডি সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায়ে সচেষ্ট হবে। 

এর আগে নির্বাচন কমিশন নীতিমালা প্রকাশের পর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ একাধিক সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেয়া হয়।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর