অস্বাভাবিক হারে খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার শুরু থেকেই হজ নিবন্ধনে আগ্রহীদের মধ্যে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। আট দফা সময় বাড়িয়েও নির্ধারিত কোটা পূরণ করতে পারেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়। সবশেষ হজ নিবন্ধন করতে এক দিনের জন্য বিশেষ সুযোগ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। তবে এতেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। ফলে এবার বাংলাদেশিদের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ হওয়ার আপাতত সম্ভাবনা নেই।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) এক দিনের জন্য হজ নিবন্ধনের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়। দিন শেষে দেখা গেছে, এদিন নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৭৮৬ জন। এর মধ্যে ৩৭ জন সরকারি এবং ৭৪৯ জন বেসরকারিভাবে হজে যেতে চান।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ধর্ম মন্ত্রণালয় অথর্ব, হজ প্যাকেজ অমানবিক: হাইকোর্ট
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে মোট নিবন্ধন করেছেন এক লাখ ২০ হাজার ৪৭৯ জন। সে হিসেবে এখনও ফাঁকা রয়েছে ছয় হাজার ৭১৯ জন। এর মধ্যে বেসরকারিতে কোটা এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে নিবন্ধন করেছেন এক লাখ ১০ হাজার ৪০৭ জন। সে হিসেবে বেসরকারিতে ফাঁকা রয়েছে এক হাজার ৭৯১ জন। এছাড়া সরকারিতে বাংলাদেশের জন্য কোটা রয়েছে ১৫ হাজার। সন্ধ্যা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ১০ হাজার ৭২ জন। সে হিসেবে ফাঁকা রয়েছে চার হাজার ৯২৮ জন।
এর আগে আট দফায় সময় বাড়িয়েও কোটা পূরণ না হওয়ায় গত ১১ এপ্রিল শেষ হয় হজ নিবন্ধনের সুযোগ।
চাঁদ দেখাসাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও অবশিষ্ট ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: সবকিছুর দাম বাড়ায় হজ প্যাকেজ এত বেশি: ধর্ম মন্ত্রণালয়
চলতি বছর হজে যেতে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। তবে কোটার বিপরীতে খুবই কমসংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধিত হন। পরে নিবন্ধনের সময় ৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই সময়েও কোটার অর্ধেকেরও কম হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়। এজন্য নিবন্ধনের সময় ১৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই নিবন্ধনের সময় ২১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরে ২৭ মার্চ এবং ৩০ মার্চ দু-দফা সময় বাড়ে। ওই সময়ের মধ্যে কোটা পূরণ না হলে শেষে নিবন্ধনের সময় ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। শেষে আরও এক দফা ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়।
আরও পড়ুন: আগামী বছর আরও বাড়বে হজের খরচ
সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে হজের খরচ ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। অন্যদিকে কোরবানি ছাড়াই এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য সর্বনিম্ন প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর আগের বছর ছিল পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে দেড় লাখ টাকা বেড়েছে।
হজের খরচ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় দেড় লাখ টাকা বেড়ে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা হয় বিভিন্ন মহলে। হজের আগাম নিবন্ধনেও এর প্রভাব পড়ে। অনেকে খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার হজে যাওয়ার ইচ্ছা বাদ দিয়েছেন। কেউ কেউ হজের পরিবর্তে ওমরায় যাচ্ছেন। এই অবস্থায় মন্ত্রণালয়কে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। হাইকোর্টে রুলও করেন এক আইনজীবী। হাইকোর্ট শুনানিকালে এই খরচকে অমানবিক এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অর্থব বলেও মন্তব্য করেন।
জেবি

