সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রাষ্ট্রের ১ নম্বর ব্যক্তি হিসেবে সাহাবুদ্দিনের নতুন জীবন শুরু

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

রাষ্ট্রের ১ নম্বর ব্যক্তি হিসেবে সাহাবুদ্দিনের নতুন জীবন শুরু

বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্ম নেওয়া মো. সাহাবুদ্দিন। ছাত্রলীগে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়া মানুষটি দীর্ঘজীবনে পড়াশোনা শেষে চাকরি করেছেন জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালকও ছিলেন। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর সক্রিয় হয়েছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। তবে এবার সবকিছু পেছনে ফেলে নতুন জীবনে পা রাখলেন একসময় সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত থাকা এই মানুষটি।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকালে বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর শপথ পড়ানোর মধ্য দিয়ে তিনি আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হলেন। 


বিজ্ঞাপন


শপথের পর আবদুল হামিদ চলে যাবেন তার নিকুঞ্জের বাসায়। আর বঙ্গভবনে বসবাস শুরু করবেন মো. সাহাবুদ্দিন।

রাষ্ট্রের এক নম্বর ব্যক্তি হিসেবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, সব ধরণের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পাবেন মো. সাহাবুদ্দিন। শুধু তিনিই নন, তার পুরো পরিবারের জন্যও থাকছে নানা সুযোগ সুবিধা।

নিরাপত্তার পাশাপাশি বেতন ভাতা, দেশে-বিদেশে বিনামূল্যে চিকিৎসা, রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশ ভ্রমণের মতো সুযোগ যেমন পাবেন, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা করারও অধিকার দিয়েছে সংবিধান।

নিরাপত্তা কড়াকড়ির কারণে অবশ্য সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ হাস্যরস করে বঙ্গভবনের জীবনকে 'খাঁচায় বন্দি' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। 


বিজ্ঞাপন


কী কী ক্ষমতা সুযোগ-সুবিধা পান রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি কী কী ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন, তা দেশের সংবিধান ও দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (সংশোধন) অ্যাক্টে বলা আছে। যা মো. সাহাবুদ্দিন ভোগ করবেন।

দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (সংশোধন) অ্যাক্ট অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই টাকা আয়করমুক্ত। আগে এই বেতন ছিল ৬১ হাজার ২০০ টাকা। সবশেষ ২০১৬ সালে তা বাড়ানো হয়।

নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপ্যায়নের (এন্টারটেইনমেন্ট) জন্য বছরে ভাতা পাবেন। এই টাকার নিরীক্ষা হবে না। রাষ্ট্রপতির জন্য সরকারি বাসভবন (বঙ্গভবন) থাকবে, যার সাজসজ্জা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দেবে সরকার।

রাষ্ট্রপতি চলাচলের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পরিবহন (গাড়ি) সুবিধা পাবেন। রাষ্ট্রপতি অফিশিয়াল কাজে দেশের বাইরে গেলে সরকার নির্ধারিত ভাতা পাবেন। রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন তহবিল বছরে দুই কোটি টাকা।

রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশের যেকোনো হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে দেশের বাইরে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেই খরচও সরকার দেবে।

এছাড়া রাষ্ট্রপতি বিমানে ভ্রমণ করলে বিমা সুবিধার ব্যবস্থা আছে। এই বিমা সুবিধা এখন বছরে ২৭ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের আগে ছিল ১৫ লাখ টাকা। এ রকম আরও বেশ কিছু সুবিধা পান রাষ্ট্রের ১ নম্বর ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি।

সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে। তিনি কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া অন্য সব দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী পালন করবেন।

তবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না এবং দিলে কোনো আদালত সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের তদন্ত করতে পারবেন না।

প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রনীতি-সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখবেন এবং রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করলে যেকোনো বিষয় মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য পেশ করবেন।

এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমা করার অধিকার আছে রাষ্ট্রপতির। কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া দণ্ড মার্জনা, বিলম্ব ও বিরতি করতে পারেন রাষ্ট্রপতি। 

এছাড়া যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা কমানোর ক্ষমতাও আছে রাষ্ট্রপ্রধানের। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর।

তবে রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি নিজ পদে বহাল থাকবেন। একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না।

এক নজরে নতুন রাষ্ট্রপতির জীবনী

নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম চুপ্পু। তার পিতা শরফুদ্দিন আনছারী, মাতা খায়রুন্নেসা।

১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা বাকশালের যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

সাহাবুদ্দিন ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে তিন বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।

মো. সাহাবুদ্দিন দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতাও করেছেন। তার অনেক কলাম বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে।

কর্মজীবনে তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাহাবুদ্দিন পরপর দুবার বিসিএস (বিচার) অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।

২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাবেক এ ছাত্রনেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহাবুদ্দিন।

বিইউ/এমআর

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর