ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন কোনো সমাধান নয় বলে মনে করে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আইনটিকে নিবর্তনমূলক দাবি করে এটি পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই আইনের অগ্রহণযোগ্যতা শুধু মৌলিক অধিকার পরিপন্থী অসংখ্য ধারার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং আইনটির যথেচ্ছ অপব্যবহারের ফলে ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ তথা আপামর জনগণের মধ্যে যে নিরাপত্তাহীনতার বিকাশ ঘটেছে সেজন্য আইনটি পুরোপুরি বাতিল করে সংশ্লিষ্ট খাতে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে শুধু ডিজিটাল পরিকাঠামো ও তার যুগোপযোগী ব্যবহারের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১২ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই আহ্বান জানান।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে সংবিধানপরিপন্থী প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ তথা আপামর জনগণের জন্য আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা আইনটি অবিলম্বে বাতিলের দাবি করছি। ২০১৮ সালে প্রণয়নের পর থেকেই আইনটির বিভিন্ন নিবর্তনমূলক ধারার যথেচ্ছ অপব্যবহারের ফলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আইনটি বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী।’
এই আইনকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকারী, ভিন্নমতাবলম্বীর শায়েস্তাকারী এবং স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার একাংশকে আইন লঙ্ঘনকারীতে রূপান্তরের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এই আইন এতটাই যথেচ্ছভাবে ব্যবহৃত হয়েছে যে, ভিন্নমত দমন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ, সংখ্যালঘু নির্যাতন, গভীর রাতে তুলে নিয়ে যাওয়া, দীর্ঘসময় গুম করে রাখার পর মামলা দিয়ে গ্রেফতার দেখানো, এমনকি গ্রেফতারের পর হেফাজতে নির্যাতন, নিরাপত্তাহীনতা ও মৃত্যুর মতো ঘটনা স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে মুক্তচিন্তা, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ দমনের কৌশল হিসেবে যেমন বৈষম্যমূলকভাবে এই আইনের ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে, তেমনি এই আইন সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ও উগ্র ধর্মান্ধতার শঙ্কাজনক বিকাশে সহায়কের ভূমিকা পালন করছে। সরকারের তরফ থেকে এই আইনের সংশোধনের কথা বলা হলেও এই আইনটি পুরোপুরি বাতিল করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’
ক্রমবর্ধমান তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল মাধ্যমের নিরাপদ ও সুস্থ ব্যবহার সহায়ক একটি আইনের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই রয়েছে- উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ বাতিল করে তার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে এবং সংশ্লিষ্ট খাতের সকল অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে সুনির্দিষ্টভাবে শুধু ডিজিটাল পরিকাঠামো ও তার ব্যবহারের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’
বিজ্ঞাপন
টিএই/জেবি

