মার্কেট-শপিংমলের নিরাপত্তা জোরদার

রমজান ও ঈদ ঘিরে রাজধানীর মার্কেট ও শপিংমলগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি শপিংমলে বসানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। প্রবেশপথে তল্লাশি করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে শপিংমলগুলোতে পুলিশের পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি নারী সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। গত দুইদিন রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
শপিংমলগুলো ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ব্যবসায়ীরা দোকান নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছেন। পণ্যভর্তি বেশিরভাগ দোকান। ইতিমধ্যে ঈদের কেনাকাটার উদ্দেশ্যে ক্রেতারাও আসতে শুরু করেছেন।
রাজধানীর গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনি মার্কেটের মূল ফটকে দুজন নারী পুলিশ সদস্য বসে আসেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রথম রমজান থেকেই তারা দায়িত্ব পালন করছেন। রমজান ও ঈদ উপলক্ষে বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে এই ডিউটি করছেন বলে জানান ওই দুই নারী পুলিশ সদস্য।
একই অবস্থা দেখে গেছে গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টার, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, সুন্দরবন সুপার মার্কেট, জাকির প্লাজা, নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা, গুলিস্তান পুরান বাজার ও বঙ্গ ইসলামী সুপার মার্কেটও।
ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের চার তলায় ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে গিয়ে দেখা গেছে কয়েকজন নারী পুলিশ সদস্য বসে আছেন। ঈদ ও রমজান উপলক্ষে তারাও দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানালেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-১ এর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, রমজান ও ঈদ ঘিরে মার্কেটে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রমজান ও ঈদ সামনে রেখে ছিনতাই, চুরি, ইভটিজিংসহ সব ধরনের অপরাধ রোধে রাজধানীর প্রতিটি মার্কেটে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। রাজধানীর পাইকারি মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীদের সাথেও আলাদা আলাদা বৈঠক করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ২২ মার্চ চকবাজার মডেল থানা পুলিশের উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রমজান মাসে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে ব্যবসায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা ও বিভিন্ন এজেন্টদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
চকবাজার মডেল থানা পুলিশের নিরাপত্তা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জাফর হোসেনের সভাপতিত্বে প্রায় ৪২টি ব্যাংকের কর্মকর্তা, আর্থিক অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, বিকাশ ও রকেট কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিল বলে জানা গেছে।
ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জাফর হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, পবিত্র রমজানে চকবাজার থানা এলাকায় ব্যবসায়ীদের আর্থিক বড় ধরনের লেনদেন, ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন, টাকা জমা ও স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে ডিএমপির মানি এস্কর্ট সুবিধাসহ যেকোনো ধরনের পুলিশি সহায়তার বিষয়ে ব্যবসায়ী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মার্কেটে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু চকবাজারেই নয়, রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সদরঘাট ও এর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোতোয়ালি থানায় মতবিনিময় সভা হয়েছে। সভায় রাস্তা ও ফুটপাতে যানবাহন এবং ক্রেতা ও যাত্রীদের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করার উপায় ও কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া সভায় বিভিন্ন সমিতি ও সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেন। এরপর সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার ও অন্যান্য সংস্থা, ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
শুধু লালবাগেই নয়, ডিএমপির রমনা, মতিঝিল, ওয়ারী, উত্তরা, গুলশান, তেজগাঁও ও মিরপুর বিভাগে রমজান মাসে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে ব্যবসায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা ও বিভিন্ন এজেন্টদের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। নিউমার্কেটের রহমত আলী নামের এক ব্যবসায়ী জানান, পুলিশ তাদের সহযোগিতা করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ঝামেলা হয়নি।
তিনি আরও জানান, ১০ রমজানের পর থেকে মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় থাকবে। ১৫ রমজানের পর ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে। সেই সময় পুলিশি সেবা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। রাজধানীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটে পুরুষ ও নারী পুলিশ সদস্যরা রয়েছে। এছাড়া অপরাধ ঠেকাতে সাদা পোষাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে বলে জানান তিনি।
কেআর/জেএম