মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘ঢাকায় টাকা ওড়ে শুনছি, ধরতে জানতে হয়’

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৭:২৭ এএম

শেয়ার করুন:

‘ঢাকায় টাকা ওড়ে শুনছি, ধরতে জানতে হয়’

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কৃষক জিল্লুর। গ্রামে তার পেশা কৃষি হলেও ঢাকায় এসে তিনি এখন পুরোদস্তুর রিকশাচালক। রাজধানী ঢাকার আঁকাবাঁকা গলিতে ছুটে চলেন যাত্রী নিয়ে। রমজানের আগেই এসেছেন ঢাকায়। গত বছরও ঈদের আগে ঢাকায় এসেছিলেন। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এলেন। তবে মাত্র এক মাসের জন্য। এই একমাস কৃষক জিল্লুর হয়ে যান রিকশাচালক। ২৭ রমজান পর্যন্ত থাকবেন ঢাকায়।

জিল্লুর তখন বিশ্রাম করছিলেন আজিমপুর বটতলায়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন রিকশাচালক গল্প করছিলেন। সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপর। জিল্লু জানান, গ্রামের বাড়িতে জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। মরিচের চাষ শেষে করেই এসেছেন ঢাকায়। ভুট্টা চাষের প্রস্তুতি চলছে। গ্রামে প্রায় বেকার সময় কাটাচ্ছিলেন। তাই চলে এসেছেন ঢাকায়। ঈদ সামনে রেখে কিছু বাড়তি পয়সা (টাকা) মিলবে। তাতে ফিরে গিয়ে ঈদে পরিবারের সঙ্গে কিছু ভালো-মন্দ খাওয়া যাবে। বাকি টাকা দিয়ে এক খণ্ড জমি বর্গা নেওয়ারও ইচ্ছা আছে তার।


বিজ্ঞাপন


মৌসুমি এই রিকশাচালক বলেন, ঢাকায় টাকা ওড়ে শুনছি। কষ্ট করে ধরতে জানতে হয়। হাফ বেলা প্যাডেল মারলে (রিকশা চালালে) তিন-চারশ টাকা পাওয়া যায়। একটু রাত করে ফিরলে এক হাজার থেকে ১২শ টাকা আয় হয়। গ্রামে দুই দিনেও এই টাকা আয় হয় না। মানুষ বেশি, কাম কম।

পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে জিল্লুর বলেন, পাঁচ সদস্যের পরিবার। দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী। মেয়েটা ঈদে লাল জামা চেয়েছে। ছেলেগুলো শার্ট-প্যান্ট-বেল্ট। পোলাপানের মায়েরেও তো কিছু দিতে হবে। গ্রামে থেকে সামান্য পয়সা দিয়ে কিছুই দেওয়া হতো না। এদিক-সেদিক রিকশা চালানোর ফাঁকে পোলাপাইনের জামাকাপড় কিনে রাখছি। নিজেদেরটা পরে কিনব। ঈদ তো আর প্রতিদিন আসে না। একটু বেশি কষ্ট করছি, পরিবারকে যদি খুশি করতে পারি।

আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে বাড়তি আয়ের আশায় জিল্লুরের মতো মৌসুমি রিকশাচালকের সংখ্যা বেড়েছে রাজধানীতে। যাদের অনেকেই প্রথমবারের মতো এসেছেন। ঠিকমতো পথঘাটও চিনেন না। এতে যাত্রীদের প্রায়ই পড়তে হয় বিপাকে।

এমন আরও কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ঢাকায় এসে হুট করে কোনো কাজ পাওয়া কঠিন। তার চেয়ে রিকশা চালানো সহজ। তাই অল্প সময়ে রোজগারের উপায় হিসেবে রিকশা চালানোকেই বেছে নেন। মৌসুমি রিকশাচালকদের অধিকাংশের বাড়ি রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ ও নেত্রকোনা জেলায়।


বিজ্ঞাপন


এদিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুসহ কয়েকটি এলাকার রিকশা গ্যারেজ ঘুরে দেখা যায়, পুরাতন রিকশা মেরামতে ব্যস্ততা বেড়েছে। একটি গ্যারেজের মালিক আনিসুর বলেন, রিকশার জমা এখন ১৫০ টাকা হয়েছে। তবে তারপরও কোনো রিকশা খালি নাই। ২-১টা রিকশা পড়েছিল, সেগুলোও মেরামত করা হচ্ছে। প্রতি বছরই ঈদের আগে এমন চাপ থাকে বলেও জানান তিনি।

এ সময় অনিবন্ধিত রিকশার চলাচলও বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রিকশার মতো স্লো অযান্ত্রিক যান ঢাকার রাস্তায় চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। রিকশাগুলো উঠে পড়ছে মহাসড়কে। অনিবন্ধিত এসব রিকশায় সয়লাব নগরী। জীবিকার তাগিতে নিম্নআয়ের মানুষও ঢাকায় চলে আসছেন। এসব বন্ধ করার পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। কারণ ঢাকার রাস্তায় এত রিকশা চলার মতো সক্ষমতা নেই।

ডিএইচডি/জেএম/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর