বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

প্রধানমন্ত্রীর ঘরে নতুন জীবন পেল টাঙ্গাইলের গৃহহীনরা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রধানমন্ত্রীর ঘরে নতুন জীবন পেল টাঙ্গাইলের গৃহহীনরা

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের মাসুদ রানা (৪২)। আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন একজন সদস্য হতে চলছেন। তার আগের ঠিকানা ছিল উপজেলার অলোয়া গ্রামে। ২০১১ সালে তিনি সিএনজি দুর্ঘটনার শিকার হন। দুর্ঘটনার দিন জীবিকার তাগিদে ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে শহরের চরপাড়া নামক স্থানে ট্রেন-ট্রাক সংঘর্ষে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজি নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে মাসুদের দুই পা ও ডান হাত বিকল হয়ে পঙ্গুত বরণ করে। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় চলতো সংসার। অন্যদিকে, তার ভিটেমাটি না থাকায় ৪ সদস্যের পরিবার নিয়ে গাদাগাদি করে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

এর মধ্যেই পঙ্গুত্ব হওয়ার ২ বছর পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ধারদেনা করে ভাড়া নেয়া বাড়িটির একপাশে ছোট একটি চায়ের দোকান শুরু করেন। একদিকে বাড়ি ভাড়া, আরেক দিকে পরিবার খরচ চালাতে হিমশিম খায়। এভাবে খেয়ে-না খেয়ে চলে তার অভাবের সংসার। ২০২১ সালের দিকে জানতে পারেন আশ্রয় প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অসহায়, ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছেন। তা শুনে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখান থেকে দিক-নির্দেশনা মতে ঘরের জন্য আবেদন করে।


বিজ্ঞাপন


SS

মাসুদ বলেন, আবেদনের পরে যাচাই-বাছাই শেষে উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্যারের সহযোগিতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা নতুন ঘর পেয়েছি। যেন স্বপ্নের নতুন ঠিকানায় উঠেছি। সেইসাথে ২ শতাংশ জায়গা, বিদ্যুৎ ও যাতায়াতের রাস্তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও পেয়েছি। ভাবতেই পারেনি মুহুর্তেই আমার পঙ্গুত্ব জীবন ও পরিবারের স্বপ্ন বদলে যাবে। এরফলে সন্তানদের স্কুল-মাদরাসায় পাঠাতে পেরেছি। আমার এ স্বপ্ন পূরণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ইউএনও এবং পিআইও স্যারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

আরও কথা হয় উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বাগবাড়ী গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মমতা রানী শীলের সাথে। তিনি বলেন, আমার জায়গা-জমি ছিল না। রাস্তার পাশে অন্যের জমিতে ভূমিহীন অবস্থায় ছাপড়া ঘর তুলে থাকতাম স্বামী-সন্তান নিয়ে। স্বামী চুলকাটার কাজ করে যা রোজগার করে তা দিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতাম। এখন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়েছি। আশ্রয় পেয়ে আমরা আনন্দিত। দিনশেষে আপন ঠিকানায় ফিরছি। ইউএনও স্যার আমাদের সবধরণের সহযোগিতা করেছেন। স্যারের কাছে দাবি, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে চুলকাটা দোকানের জন্য একটু জায়গা চাই।
 
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভূঞাপুর পৌরসভার শিয়ালকোলস্থ ফায়ার সার্ভিসের পাশে চতুর্থ পর্যায়ে ১২ টি নতুন ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানেও কয়েক সপ্তাহ ধরে উপকারভোগিরা বসবাস করছেন। নতুন এ স্বপ্নের ঠিকানা পেয়ে নিজ নিজ ঘর গোঁছাতে ও কাজ-কর্মে ব্যস্ত নববাসিন্দারা। মুহুর্তেই বদলেছে এসব দরিদ্র-অসহায় মানুষের জীবনমান। তারা এখন বসবাস করছে রঙিন টিন আর পাকা দেয়ালের আধপাকা বাড়িতে। এরমধ্যেই অল্প সময়ে কেউ করছে হাঁস-মুরগি-ছাগল-গরু পালন। সুযোগ পেলে মুদিখানা, সেলুন ও দর্জি দোকান করার আশা প্রকাশ করেছে।

আশ্রয়ণে আসা নতুন বাসিন্দারা স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে চোখেমুখে হাজারো স্বপ্ন বুনছেন। সকাল হলেই সন্তানদের পাঠাচ্ছে স্কুলে। দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করছে। সরকারের উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর থেকে নিচ্ছেন নানা ধরণের কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ। অনেকের মাঝে একাডেমিক শিক্ষা না থাকলেও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রকল্পের বাসিন্দারা হয়ে উঠছেন আত্মনির্ভরশীল। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত তদারকির ফলে এগিয়ে যাচ্ছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের দরিদ্র ও আশ্রয়হীন বাসিন্দারা।


বিজ্ঞাপন


উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় উপজেলায় মোট ২৪২ টি ঘর নির্মাণ কাজ হাতে নেওয়া হয়। তারমধ্যে চতুর্থ দফায় ৭২টি ঘরের কাজ শুরু চলমান। ইতিমধ্যে ৩০টির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সেগুলো আগামী ২২ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন এবং উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্নের প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় এ পর্যন্ত ২১২টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ে ৪২ টি গৃহ নির্মাণ করা হয়। তারমধ্যে ৩০টি গৃহ আগামী ২২ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। এই ঘরগুলো টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার স্যারের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় আমাদের উপজেলা পর্যায়ে গৃহ নিমার্ণ কমিটির সদস্য, নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ সকলকে নিয়ে কাজের গুণগত মানোন্নয়ন বজায় রেখে অন্তত্য সুন্দরভাবে কাজগুলো সম্পূর্ণ করে যাচ্ছি।

ff

তিনি আরও বলেন, টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ছোট মনির মহোদয়ের সাথে পরামর্শ করে এবং উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত রেখে প্রকৃত ভূমি ও গৃহহীন যারা আছে তাদেরকে তালিকা করে তাদের মাঝে এ ঘরগুলো দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ে ঘরগুলো উদ্বোধনের দিন ৩০ জন উপকারভোগীদের মাঝে অন্যান্য কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ঘর পাওয়া মানুষদের সাথে কথা বলে জেনেছি, তারা ঘরগুলো পেয়ে অনেক খুশি ও উচ্ছ্বসিত। তারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে এ ঘরগুলো আমরা রক্ষণাবেক্ষণ করব।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর