শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

পুরনো মোবাইল ফোন কিনছেন! সাবধান!

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৩, ০৭:২৪ এএম

শেয়ার করুন:

পুরনো মোবাইল ফোন কিনছেন! সাবধান!

আসমা আক্তারের গ্রামের বাড়ির নোয়াখালী জেলায়। স্বামীর সঙ্গে থাকেন রাজধানীর মিরপুরে। অনলাইনে বিক্রয় ডটকম থেকে একটি পুরাতন ফোন কিনে সেটি ব্যবহার করছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েক মাস আগে রাজধানীর কোতোয়ালি থানা থেকে তাকে ফোন করে বলা হয়, ফোনটির মালিক অমুক এবং ফোনটি অমুক জায়গা থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। ফোনের মালিক থানায় অভিযোগ করেছেন এবং তিনি (পুলিশ অফিসার) এই ঘটনার তদন্ত করছেন।

পুলিশের ফোন পেয়ে হতভম্ব হয়ে যান আসমা আক্তার। পরে থানায় খোঁজ নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হন এবং তিনি নিজেই সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে ডেকে পুরাতন ফোনটি বুঝিয়ে দেন।


বিজ্ঞাপন


আসমা আক্তার বলেন, ১০ হাজার টাকা দিয়ে ফোনটি কিনেছিলাম। কিন্তু এখন পুরো টাকাই আমার পানিতে গেল। তবে বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি, এটাই বড় কথা। এটা যে চুরি করা বা হারিয়ে যাওয়া বা ছিনতাই হওয়া ফোন সেটা বুঝতে পারিনি।

শুধু আসমা আক্তার নন, তার মতো অনেকেই অনলাইন, ফোন মেরামতকারী ব্যক্তি বা অন্য কারও কাছ থেকে কম দামে মোবাইল ফোন কিনে প্রতারিত হচ্ছেন কিংবা বিপদে পড়ছেন। বিশেষ করে ক্রয় করা মোবাইল ফোনটি চুরি করা বা হারিয়ে যাওয়া বা ছিনতাই হওয়া ফোন হলে হেনস্তার শিকারও হতে হয়। কারণ ফোনটির মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ফোনটি সর্বশেষ যার কাছে পাচ্ছে তাকেই আসামি হিসেবে গণ্য করছে। অন্য কিছু না হলেও যে টাকায় ফোন কিনছেন তা গচ্ছা দিতে হচ্ছে।

সম্প্রতি ঢাকার দোহার এলাকার একটি পুরাতন মামলা তদন্ত করতে গিয়ে চোর চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। তদন্তের এক পর্যায়ে যার কাছ থেকে ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছিল তাকেই আসামি ধরে নিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ওই ব্যক্তি ফোন মেরামতকারী এক ব্যক্তির কাছ থেকে অল্প দামে ফোনটি কিনেছিলেন। এই ফোনের কারণে তাকে ঢাকা পর্যন্ত আসতে হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

সিআইডির তথ্য বলছে, গত পাঁচ মাসে তারা অন্তত ২০০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছেন। যার অধিকাংশ চুরি কিংবা খোয়া যাওয়ার পর বিক্রি করা হয়েছে। আর এসব মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে। এসব মোবাইল তারা কিনেছেন অভিজাত শপিংমলের দোকানিদের কাছ থেকে।


বিজ্ঞাপন


এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ ঢাকা মেইলকে বলেন, সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে এ ধরনের মোবাইল আপনারা কিনবেন না। রাস্তাঘাট বা অনলাইন যেখান থেকেই কিনেন যেন ভাউচার ও বক্স থাকে। এতে ফোনটি কার কাছে কিনেছেন, কোন দোকান থেকে কিনেছেন তা সহজে শনাক্ত করা যায়। মোবাইল বিক্রয়কারী ব্যক্তির ফোন নাম্বার ও দোকানের ঠিকানা থাকলে খুব সহজেই সেই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করা সম্ভব। বেশিরভাগ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারো কাছ থেকে পুরাতন মোবাইল উদ্ধার করার পর সেই ব্যক্তি ভাউচার ও যার কাছ থেকে কিনেছেন তার নাম্বার সরবরাহ করতে পারেন না। এসব তথ্য না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে আসল অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।

তিনি মোবাইল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি পরামর্শ দিয়ে বলেন, দোকানি হিসেবে যারা এসব পুরাতন মোবাইল কিনবেন তাদের প্রতি পরামর্শ হলো- আপনার অবশ্যই সেই ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা নিয়ে রাখবেন। এছাড়াও প্রান্তিক পর্যায়ে যে ব্যক্তি এই ধরনের মোবাইল কিনবেন তিনি যেন সেই দোকানের ঠিকানা, ভাউচার এবং বক্স সংগ্রহে রাখেন।

এ ধরনের মোবাইল যারা কিনছেন তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এজন্য তিনি সবাইকে নতুন ও ইনটেক মোবাইল কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ একটি পুরাতন মোবাইলের মধ্যে অপরাধের আলামত থাকতে পারে। তিনি পুরাতন মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য না কেনার অনুরোধ করেছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার ডিভিশনের ডিসি তারেক বিন রশিদ ঢাকা মেইলকে বলেন, যার কাছ থেকে ফোন কেনা হচ্ছে তার জাতীয় পরিচয়পত্র অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে যেন সেই ব্যক্তিটিকে খুব সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত তার ফোন নাম্বার সংগ্রহে রাখা।

এমআইকে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর