শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কেন একের পর এক বিস্ফোরণ?

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০২৩, ১১:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

কেন একের পর এক বিস্ফোরণ?

পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজধানী ঢাকার মানুষ। বস্তি থেকে অভিজাত এলাকা সবখানেই চাপা উদ্বেগ। অগ্নিকাণ্ড কিংবা পাইপ লাইনে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণ- কখন কি ঘটে যায়! সর্বশেষ রাজধানীর গুলিস্তানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও এতে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা নগরবাসীকে অবাক করেছে। তবে অসচেতনতার ফলেই এসব বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গতবছর মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিলেন। প্রথম দিকে সেটিকে এসির বিস্ফোরণ হিসেবে ধরা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে, সেই ঘটনায় করা পুলিশ সদর দফতরের কমিটির তদন্তে ওঠে এসেছে- পাইপ লাইন থেকে বের হয়ে জমা হওয়া গ্যাসের কারণেই বড় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে শুধু ওই ভবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। রাস্তা দিয়ে যাওয়া বাসের যাত্রীরাও হতাহত হয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


এরপর চলতি বছরে নিউমার্কেট এলাকার শিরিন ম্যানশনে বিস্ফোরণের ঘটনায় চারজন মারা গেছেন। এ ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবনটিতে জমে থাকা গ্যাসের কারণে এই বিস্ফোরণ।

explosion

এর আগে গুলশানে একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগে। পরে জানা যায়, ভবনটিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য আলাদা লাইন থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেটি না করে এই দুটো এক সাথে চালানো হচ্ছিল। আর ভবনটিতে ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো কাঠ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। ফলে আগুনের সময় ভবনটির বাসিন্দারা আগুন নেভানোর কোনো যন্ত্রই ব্যবহার করতে পারেননি।

আর গুলিস্তানে যে ভবনে বিস্ফোরণে ঘটনা ঘটে তার অনুমোদন পাঁচতলা পর্যন্ত থাকলেও সেটি করা হয়েছিল সাততলা। এ ঘটনায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ তেজগাঁও বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।


বিজ্ঞাপন


এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। গুলশানের বাসিন্দা পাভেল সরোয়ার বলেন, গুলশানে এর আগে এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তেমন নেই বললেই চলে। কিন্তু এ ঘটনার পর আমরাও এখন ভয়ে থাকি।

নগর ও পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা আসলে আমাদের নগরটাকে এমনভাবে তৈরি করেছি, জায়গায় জায়গায় এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের উপাদানগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই উপাদানগুলো থাকার নেপথ্যে যেমন পরিকল্পনাহীনতার দায় আছে, তেমনি দায় আছে পরিকল্পনা না মানারও। আইনে আছে বেজমেন্টে কোনো কিছু রাখা যাবে না, কোনো দোকান তৈরি করা যাবে না। কিন্তু ঢাকায় শত শত এরকম দোকান আছে যেগুলোর বেজমেন্টে নানা জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। ফলে ঝুঁকি তো বাড়বেই। ভবন মালিকরাও এসব বিষয় দেখেন না, তেমনি রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোও এসব বিষয়ে আগ্রহী না। দুই পক্ষই দায়ী- যারা ভবনগুলো তৈরি করছে এবং যারা তদারকি প্রতিষ্ঠান।

explosion

ভবন মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঢাকায় যারা ভাড়াটিয়া তাদের তো ক্ষমতা নেই। ভবনগুলোর যারা মালিক তাদেরই বিষয়টি দেখতে হবে। বিল্ডিং কোড মানা হলো কিনা, সেবা সংস্থার যত ধরনের আইন, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা- সবকিছু সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা এবং যারা তদারক করবেন কাজটি সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা তাদের কাছ থেকে বুঝে নিতে হবে। পৃথিবীর সব দেশেই এই অথরিটির মূল কাজ সব ঠিকঠাক আছে কিনা তা তদারক করা। আমাদের দেশে যা আইন আছে তা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রতিরোধের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আইনে বুঝে নেওয়ার বিষয়টি নেই। ফলে ভবন মালিকরা দায়বদ্ধতা অনুভব করেন না। তারা ভবনের কোড থেকে শুরু করে ইউটিলিটি বিষয়গুলো নিজেরা দেখভাল করছেন না।

তিনি আরও বলেন, ভবনে যাবতীয় বিষয় ঠিক আছে কিনা তা এক মাস সময় নিয়ে টেকনিশিয়ান দিয়ে যাচাই করতে পারেন। এরপর সেই টেকনিয়াশনদের তথ্য মতে সিটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জোনভিত্তিক পরিদর্শন করবেন। যাদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দুই বছর এভাবে এগোতে পারলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে। আইন লঙ্ঘন হলে ভবন মালিক থেকে শুরু করে তদারক সংস্থাগুলো দায়ী থাকবে- এমন হলেই পরিস্থিতি ভালো কিছুর দিকে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

explosion

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, আমরা সবাকে বলব রাজউকের প্লান অনুযায়ী বাসাবাড়ি তৈরি করার। পাশাপাশি সতর্ক থাকতে বলব। সতর্ক থাকলেই দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

নগরবাসীকে ফায়ার ফাইটিং প্রশিক্ষণ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ফায়ার ফাইটিং প্রশিক্ষণ থাকলে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে।

এমআইকে/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর