শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘এক ঘণ্টায় উধাও’ হয় না টিকিট, খুশি রেলযাত্রীরা

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৩, ০৯:০০ এএম

শেয়ার করুন:

‘এক ঘণ্টায় উধাও’ হয় না টিকিট, খুশি রেলযাত্রীরা

ভ্রমণের পাঁচদিন আগে চেষ্টা করেও ট্রেনের টিকিট কাটতে পারতেন না অনেকে। সকাল ৮টায় অনলাইনে টিকিট দেওয়া শুরুর এক ঘণ্টা পরই উধাও হয়ে যেত ট্রেনের টিকিট। সাধারণত বৃহস্পতিবারের টিকিট কিংবা দুই-একদিনের ছুটি থাকলে টিকিটের জন্য রেলওয়ের ওয়েবসাইটেই ঢোকা যেত না- এমন অভিযোগ ছিল বেশিরভাগ যাত্রীর। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের লোকজনকে এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো বেশি। কাউন্টারের অবস্থা আরও বেগতিক ছিল। রাজধানীতে একটু কড়াকড়ি থাকলেও বাইরের স্টেশনগুলো ছিল ‘অনিয়মের আখড়া’। অভিযোগ ছিল- কালোবাজারি চক্র হাতিয়ে নিত অধিকাংশ টিকিট। বিক্রি করত কয়েকগুণ দামে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে বিক্রি করা হত এসব টিকিট।

কিন্তু এখন সেটা আর হয় না। ভ্রমণের এক-দুই দিন আগেও মিলছে ট্রেনের টিকিট। যা রীতিমতো চমক মনে করছেন যাত্রীরা। ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’- এই নীতিতেই অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে বলে মনে করছেন যাত্রীরা।


বিজ্ঞাপন


Trainগত ১ মার্চ ট্রেনের টিকিট কাটার নতুন নিয়ম চালু করেছে রেলওয়ে- ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’। আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কেনার আগে যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বা জন্মনিবন্ধন সনদ যাচাইপূর্বক রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কাউন্টার, অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট ক্রয়কারী যাত্রীরা অনলাইন অথবা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে যেকোনো সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং সিস্টেমে খুব সহজে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারছেন।

নতুন নিয়মে, পুরোনো নিবন্ধনকারীর ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে বর্তমান ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ওয়েবসাইট অথবা রেল সেবা অ্যাপে সাইন ইন করতে হয়। দ্বিতীয় ধাপে এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ লিখে ভেরিফাই বাটনে ক্লিক করতে হয়।

অন্যদিকে নতুন নিবন্ধনকারীর ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট অথবা রেলসেবা অ্যাপে গিয়ে সাইন আপ এবং সঠিক এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ ভেরিফাইপূর্বক অন্যান্য তথ্য প্রদানসাপেক্ষে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হয়।

Trainএছাড়া অফলাইন-এসএমএসের মাধ্যমেও নিবন্ধন করা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল থেকে মেসেজ অপশনে গিয়ে ইংরেজি বড় অক্ষরে বিআর টাইপ করে স্পেস দিয়ে এনআইডি নম্বর স্পেস দিয়ে জন্মতারিখ (জন্মসাল-মাস-দিন) লিখে এসএমএস পাঠাতে হয় ২৬৯৬৯ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধন সফল না ব্যর্থ হয়েছে তা জানিয়ে দেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট দিয়ে অ্যাকাউন্ট করতে পারছেন। একটি এনআইডি বা জন্মনিবন্ধনের বিপরীতে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। একটি নম্বর দিয়ে প্রতিদিন একবারই টিকিট কাটা যাবে। এ ছাড়া ভ্রমণের সময় যাত্রীকে এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের ছবিসংবলিত নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে।

কিছুদিন আগে টিকিট কালোবাজারি চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা বিভিন্ন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে টিকিট কেটে তা ট্রেন ছাড়ার আগে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতো। আর এসব কালোবাজারির জন্য টিকিট পেতেন না যাত্রীরা। এর আগেও কালোবাজারির অভিযোগে প্রায়ই গ্রেপ্তারের খবর শোনা যেত। কিন্তু এখন থেকে যাত্রীর টিকিটের সঙ্গে মেলানো হবে এনআইডি। না মিললে বিনা টিকিটে যাতায়াত করছেন বলে তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। এরপর মুখোমুখি হতে হচ্ছে জরিমানার।

Trainসরকারের এ পদক্ষেপে খুশি যাত্রীরা। তারা বলছেন, যেখানে ৪-৫ দিন আগেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছিল না এখন একদিন আগেও পাওয়া যাচ্ছে টিকিট।

রাজধানীর কমলাপুর থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের যাত্রী খায়রুল বলেন, কিছুদিন আগে অনলাইনে পাঁচ আগেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছিল না। এবার দুইদিন আগেও ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখি বেশ কয়েকটা টিকিট আছে। বিষয়টা অবাক করার মতো। এই ধরনের পদক্ষেপ অনেক আগেই নেওয়া উচিৎ ছিল।

একই রুটের ঠাকুরগাঁওগামী আরেক যাত্রী বলেন, কালোবাজারিদের কারণে কিছুদিন আগে ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছিল না। এখন দুই-তিন দিন আগেও টিকিট পাচ্ছি। গতকালও দেখলাম এই ট্রেনের কাউন্টারে কয়েকটা সিট আছে। এখন এই ব্যবস্থা চালু থাকলেই হয়।

আফরোজ নামে আরেক যাত্রী বলেন, এনআইডি ব্যবহার করে টিকেট কিনতে হবে তা জানতাম। তাই প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি। পবিত্র ঈদে আমরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হই। এই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে ভোগান্তিসহ টিকেট কালোবাজারির থাবা থেকে মুক্ত হবে।

Trainরেলওয়ের এই পদক্ষেপকে যুগান্তকারী বলছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, এটাকে আমি মনে করি টিকিট কালোবাজারি বন্ধে একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ আরও অনেক আগে নেওয়া উচিত ছিল। আমরা যাত্রী সাধারণের কাছে অনুরোধ করব, তারা যেন সরকারের এই প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন। ভ্রমণের সময় তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে রাখেন। আমরা একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি- এখন কিন্তু কাউন্টারে গেলে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। একটা সময় টিকিট ছাড়ার সাথে সাথে সব টিকিট উধাও হয়ে যেত। কিন্তু এ কয়েকদিনে সেটা হচ্ছে না। আমরা আশা করব, সরকার এই নীতিমালা বাস্তাবায়নে সবসময় তৎপর থাকবে।

এদিকে ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ পদ্ধতি বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে রেলের টাস্কফোর্স টিম। রেলের পূর্বাঞ্চলে ছয়টি টাস্কফোর্স টিম গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ে জানায়, ছয়টি টাস্কফোর্স টিমের মধ্যে দুটি চট্টগ্রাম, আখাউড়া ও লাকসামে কাজ করছে। আর বাকি চারটি টিম ঢাকা, ভৈরব বাজার, ময়মনসিংহ, জামালপুর দেওয়ানগঞ্জ, তারাকান্দি, জয়দেবপুর, সিলেট ও মোহনগঞ্জে কাজ করছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক সফিকুর রহমান বলেন, নতুন প্রক্রিয়া মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। যাত্রীরা বুঝতে পেরেছেন টিকিট ছাড়া ট্রেনে ভ্রমণ করা যাবে না। আমরাও আরও বেশি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াচ্ছি। একইসঙ্গে মনিটরও জোরদার করেছি। আমাদের চারটি টাস্কফোর্স টিম কাজ করছে। মানুষ যাতে সহজে রেজিস্ট্রেশন করে টিকিট কাটতে পারে তার জন্য ঢাকা ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে জনবল বাড়ানো হয়েছে।

টিএই/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর