একের পর এক অগ্নিকাণ্ড, বাড়ছে প্রাণহানি

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় দিন দিন বাড়ছে প্রাণহানি।
সর্বশেষ রোববার রাজধানীর মিরপুর রোডের সায়েন্সল্যাবে বিস্ফোরণে তিনজন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া একই দিনে কক্সবাজারে একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে গৃহহীন হয়েছেন প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা। আগুনে অন্তত তিন হাজার ঘরবাড়ি পুড়েছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় দুটি মার্কেটের প্রায় শতাধিক দোকানপাটও পুড়ে ছাই হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত রোহিঙ্গা।
রোববার (৫ মার্চ) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবের শিরিন ম্যানসনে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনটিতে লাগানো মোটা গ্লাস ছাড়াও দেয়াল ধসে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১১টা ১৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন।
একই দিন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১১টি ইউনিট তিন ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে ক্যাম্পের তিন হাজারের বেশি ঘর পুড়ে যায়। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। কিভাবে ওই আশ্রয় শিবিরে আগুন লাগল, তা জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে এটা নাশকতার ঘটনা হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ রয়েছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।
এ ঘটনায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে প্রত্যাবাসন কমিশন, এপিবিএন, জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিরা সদস্য হিসেবে আছেন। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ১ মার্চ রাজধানীর গোপীবাগে একটি রিকশার গ্যারেজ আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট কাজ করে আগুন নেভায়।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি কেমিক্যাল কারখানার গুদামে ও রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতায় নান্নু স্পিনিং মিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট কাজ করে আগুন নেভায়। এ ঘটনায় বস্তির ৬০টি কাঁচাঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। একই দিন সকালে রাজধানীর মৌচাকে একটি বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কের ২/এ হোল্ডিংয়ের ১৪ তলা ভবনের ১১ তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পাশাপাশি ভবন থেকে বাসিন্দাদের নামিয়ে আনতে থাকেন তারা। আগুন ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে একে একে আরও ১৯টি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। এছাড়া সেনাবাহিনী-নৌবাহিনীর একটি করে ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন থেকে বাঁচতে লাফ দিয়ে আহত একজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। উদ্ধার করা হয় ২২ জনকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজন মারা যান।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশানের কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট এক ঘন্টা কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ১০ ফেব্রুয়ারিতে ভাষানটেক বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট কাজ করে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
৯ ফেব্রিুয়ারি রাজধানীর সোয়ারিঘাট এলাকার একটি প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘন্টা কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
৭ ফেব্রুয়ারি শ্যামপুরে চাঁদনী টেক্সটাইল মিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রামপুরা বাজারের আম্বিয়া টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনে এসিতে আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, এসব ঘটনার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ত্রুটিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেই বেশিরভাগ আগুনের সূত্রপাত। এছাড়া সিগারেটের আগুন, চুলার আগুন এবং উন্মুক্তভাবে দাহ্য পদার্থ রাখার কারণে অগ্নিকান্ডের ঘটনা থামছে না।
এ ব্যাপার সোমবার (৬ মার্চ) সকালে রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসের ভেতরে নবনির্মিত ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, ২০০৯ সালে ফায়ার সার্ভিসের জনবল ছিল মাত্র ছয় হাজার। সেখান থেকে জনবল বৃদ্ধি পেয়ে এখন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৫৭ জন। জনবল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সরঞ্জামাদিও। এছাড়া অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ও আগুন নেভানোর মতো ৯০ শতাংশ সরঞ্জামাদি তাদের রয়েছে।
সংস্থাটির প্রধান বলেন, দেশে পরপর বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যার যার জায়গা থেকে আমরা যদি সচেতন থাকি তাহলে যেকোনো অগ্নিকাণ্ড রোধ করা সম্ভব।
কেআর/জেএম