শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শেভ ও চুল কাটা এখন আরও ব্যয়বহুল

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ০৩ মার্চ ২০২৩, ০২:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

শেভ ও চুল কাটা এখন আরও ব্যয়বহুল
ছবি: ঢাকা মেইল

দুই দশক ধরে সেলুন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নজরুল ইসলাম। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে তার ব্যবসার পরিধিও। বর্তমানে তার মালিকানাধীন ‘সাত রং জেন্টস পার্লারে’র ১০টি শাখা আছে পুরান ঢাকায়। এসব প্রতিষ্ঠানে ৪০ জনের বেশি কর্মী রয়েছে।

একসময় ভালো ব্যবসা করলেও করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট এবং সেলুনে ব্যবহৃত কিছু পণ্যের আমদানি বন্ধ হওয়ার প্রভাব পড়েছে নজরুল ইসলামের ব্যবসার ওপর। গত কয়েক মাসে দফায় দফায় বেড়েছে সেলুনে ব্যবহৃত প্রসাধনীসহ সব ধরনের পণ্যের দাম। এতে অনেকটা দিশেহারা অবস্থা। বাধ্য হয়ে বাড়াতে হয়েছে সেলুনের সেবার মূল্য। ফলে গ্রাহকও কমে গেছে বলে জানালেন এই ব্যবসায়ী।


বিজ্ঞাপন


Salonএকই অবস্থা লক্ষ্মীবাজারের অনন্ত হেয়ার ড্রেসারের মালিক সজল পালেরও। এক যুগ আগে ঢাকায় যখন সেলুনে কাজ শুরু করেন তখন ২৫ টাকায় চুল কাটা যেত, আর শেভ করা যেত ১২ টাকায়। সময়ের সঙ্গে এই সেবার মূল্য বেড়েছে। বর্তমানে চুল কাটা ও সেভ করার জন্য নেয়া হয় ৭০ টাকা। অবশ্য বছরের শুরুতেও এ জন্য ৬০ টাকা নেয়া হতো।

কয়েকগুণ বেড়েছে সেলুনে ব্যবহৃত পণ্যের দাম

নজরুল ইসলাম ও সজল পালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে ৫ পিসের ট্রিট ব্লেড ২০ টাকা পাইকারি কিনলেও এখন তা ২৮ টাকা হয়েছে। সে হিসেবে ডজন ৩৩০ টাকার বেশি। আর জিলেটের ডজন হয়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। যা গত বছরও ছিল ২৩০-২৪০ টাকা।

আগে বিগ জেল ছিল ২১৫ টাকা। তবে কিছুদিন ধরে আমদানি হচ্ছে না। এখন জিলেট কিনতে হচ্ছে ৩৬৫ টাকায়। ফলে গ্রাহকের কাছ থেকেও টাকা বেশি নিতে হচ্ছে। অবশ্য তা আগের তুলনায় ১০-২০ টাকা বেশি।


বিজ্ঞাপন


এদিকে ফেসিয়ালের জন্য যেসব পণ্য দরকার তারও দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ৫৮০ টাকার ফেসওয়াশ এখন ৭০০ টাকারও বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে বলে জানান এই ব্যবসায়ীরা। ১৩শ টাকার রিবনডিং ক্রিম এখন দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। দাম বেড়েছে চুল কাটার ট্রিমারেরও। ১০৫০-১১০০ টাকা ট্রিমার এখন কিনতে হচ্ছে ১৮০০ টাকা দিয়ে।

Salonশুধু তাই নয়, সেলুনে ব্যবহৃত ২০ হাজার টাকার চেয়ারের দাম এখন ৩০-৪০ হাজার টাকা। ৬ হাজার টাকার শ্যাম্পুর বেসিন এখন ১২ হাজারের বেশি।

এসব কারণে কিছু কিছু সেবামূল্য বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান সেলুন মালিকরা। কোথাও কোথাও সেলুন মালিকদের সংগঠনের ব্যানারে বাড়ানো হচ্ছে টাকা।

খরচ বাড়ছে গ্রাহকেরও

সেলুন মালিক সজল পাল ঢাকা মেইলকে বলেন, এক যুগ আগে যখন ঢাকায় কাজ শুরু করি তখন ২৫ টাকায় চুল কাটাতাম। শেভ করতে নিতাম ১২ টাকা। এত দিনে সবকিছুর দাম বাড়ছে, আমাদেরও চার্জ বাড়ছে। তারপরও হিমশিম খাই।

তিনি জানান, গত বছরেরও শেষ সময় পর্যন্ত চুল কাটা, শেভের জন্য ৬০ টাকা করে নেয়া হতো। সূত্রাপুর সেলুন মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে এই মাস থেকে ৭০ টাকা নেয়া হচ্ছে।

তবে চুল টাকা, শেভ করার বাইরে ফেসিয়াল ও চুল কালার করার গ্রাহক কমে গেছে বলে জানালেন এই সেলুন মালিক।

তিনি বলেন, যারা আগে সাতদিনে একবার ফেসিয়াল করতেন এখন ১৫ দিনে করছেন। যারা মাঝে মধ্যেই করতেন তারা এখন দুই মাসেও সেলুনে ফেসিয়াল করতে আসেন না।

Salonসজল বলেন, আগে ৩০০-৩৫০ টাকায় চুল-দাঁড়ি কালার করলেও এখন ৪০০ টাকা নেয়া হয়।

কর আইনজীবী সেলিম মাহমুদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ২০০৮ সাল থেকে শনিরআখড়া এলাকায় থাকি। তখন ৭০ টাকায় চুল-শেভ করা যেত। এখন চুল কাটতে ১০০ টাকা নেয়া হয়। শেভও ১০০ টাকা। কম দিলে সেলুনের কর্মীরা মাইন্ড করে।

আর নিয়মিত সেলুনে যাওয়া মঈন উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, সেলুনে ঢোকার ১৫ মিনিট পার হতেই দেখা যায় ১৫০ টাকা নেই। একটু ভালো মানের সেলুন হলে তো কথাই নেই। অল্প সময়ে দেখা যায় কয়েক ধরনের সেবামূল্য নিয়ে নিয়েছে।

এদিকে দীর্ঘদিন সেলুন ব্যবসা করা নজরুল ইসলামের দাবি, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, কর্মীদের বেতন যেভাবে দিতে হচ্ছে, সে তুলনায় সেবামূল্য তারা বাড়াতে পারছেন না।

ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার নন এসি সেলুনে চুল টাকা ও শেভ ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এখনো তাই। তবে এসি সেলুনে দেড়শ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। চুল কালার ৫০০ টাকা। জেল সেভ ৭০-৮০ টাকা। আর এসি সেলুনে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।

Salonফেসিয়ালের পণ্যের দাম বাড়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দেড়শ টাকার ফেসওয়াশ ২৩৫ টাকা হয়ে গেছে। বাজারে দেশীয় আজিজ স্ক্রাব নামের একটি ভালো পণ্য ছিল। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না থাকার অজুহাতে সেটা বিক্রি বন্ধ হওয়ায় ভারতের স্ক্রাব বেশি টাকায় কিনতে হয়। সরকারের উচিত বিগ জেল দেশে আসার ব্যবস্থা করা। দেশীয় পণ্য আজিজ স্ক্রাবের অনুমোদন দেয়া।

এসব বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, কিছু সবকিছু ঠিক করতে হলে প্রথমেই বাজার ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। অন্যথায় বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। যার যেমন সামর্থ্য আছে সে সেই ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নেবে। তখন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে যারা বেশি নেবে তারাও সমন্বয় করতে বাধ্য হবে।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৯০’র দশকের শেষের দিকে বনানীতে যে সেলুনে যেতাম সেখানে ২৫-৩০ টাকায় যে সেবা পেতাম এতদিন ৩০০ টাকা লাগত। এখন ৫০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

বিইউ/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর