শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পুলিশের চেয়ে সোর্স বেশি যে থানায়

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২৩, ১০:১৯ এএম

শেয়ার করুন:

পুলিশের চেয়ে সোর্স বেশি যে থানায়
ছবি: ঢাকা মেইল

থানার গেটের পশ্চিম পাশে ফুটপাতঘেঁষা চায়ের দোকান। কথা বলছেন তিন যুবক ও তিন নারী। পাশে বেঞ্চে বসে শুনছিলেন এই প্রতিবেদক। এক যুবক বলছিলেন, এত কম টাকায় হইব না। লাখ টেকা দিলে তয় ছাড়ব। তিন নারীর মধ্যে কালো বোরকা পরা একজন বলে উঠলেন, পোলাটারে ধইরা আনল, আর এখন কয় টেকা না দিলে ছাড়ব না। আল্লায় বিচার করব।

সেই তিন নারী হতাশ হয়ে ফুটপাত ধরে চলে যাওয়ার সময় তাদের কাছে যান এই প্রতিবেদক। ঘটনা জানতে চাইলে মাঝবয়সী একজন জানান, তার স্বামীকে পুলিশ দুপুরের দিকে ধরে নিয়ে এসেছে। তিনি ফেসবুকে কি যেন বিষয় নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেই অপরাধে স্থানীয় এক ব্যক্তি থানায় খবর দিয়ে তার স্বামীকে ধরিয়ে দিয়েছে। স্বামীকে ছাড়ানোর বিষয়েই দেন-দরবার করছিলেন ওই তিন যুবক তথা দালাল বা পুলিশের সোর্সের সাথে। কিন্তু দরদামে না মেলায় তারা ফিরে যাচ্ছেন। তিনি তার স্বামীর নাম ও বাসার ঠিকানা বলতে রাজি হননি। এরপর তারা রাস্তা পার হয়ে উত্তর দিকে চলে যান।


বিজ্ঞাপন


Special Newsরোববার রাত ৯টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার গেট লাগোয়া পশ্চিম পাশের ফুটপাতের ঘটনা এটি।

পরে সেই ফুটপাতে ফিরে এসে আর সেই তিন যুবককে পাওয়া যায়নি। এরপর যাত্রাবাড়ী থানা প্রধান গেট এবং এর ডান-বাম ও ভেতরে প্রায় চার ঘণ্টা অবস্থান করেন এই প্রতিবেদক।

এই সময়ে এখানে অন্তত ৫০ জন সোর্সের আনাগোনা দেখা গেছে। যাদের বেশিরভাগই উঠতি যুবক। তারা পুলিশের সোর্স হয়ে আসামি ধরিয়ে দেন। আবার তারাই থানার বাইরে সহযোগিতার নামে সেই আসামির স্বজনদের সাথে রফাদফায় সহায়তা করেন। এর মাধ্যমে তারা হাতিয়ে নেন বিভিন্ন অঙ্কের টাকা। কারও কাছ থেকে লাখ, আবার কারও কাছ থেকে হাজার। পারিবারিক ও আর্থিক অবস্থা দেখে এই সোর্সরা দালালি করেন।

Special Newsজানা গেছে, এই থানার পুলিশের চেয়ে সোর্সের সংখ্যাই বেশি। অনেকেই যাদের চেনেন ফর্মা বা দালাল হিসেবে। দালালরাই থানায় আগত ব্যক্তিদের নানা সমস্যার কথা আগে শোনে। এরপর তারাই সিদ্ধান্ত নেয় মামলা হবে নাকি জিডি হবে, থানায় দরে আনা ব্যক্তিকে কিভাবে ছাড়ানো হবে কিংবা কাকে কত টাকা দিতে হবে এবং কিভাবে এসব করতে হবে ইত্যাদি।


বিজ্ঞাপন


ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, থানার এই সোর্সরা শত শত মানুষকে ফতুর করছেন। তারা যা টাকা নেয় তার বেশিরভাগই নিজেদের কাছে রেখে দেয়।

যাত্রাবাড়ী থানার গেটের পূবে দুটি ও পশ্চিমে দুটি ভাসমান চায়ের দোকান আছে। এই দোকানগুলোও পুলিশের সোর্সের মাধ্যমেই চলে বলে জানা গেল। আরও জানা গেছে, এই দোকানগুলো যারা চালান তারা থানায় আগত ব্যক্তিরা বাইরে এসে কি করেন, কার সাথে ফিটিং দেন এবং কোনো সাংবাদিক সেখানে ঘোরাফেরা করে কিনা তাও আগাম জানিয়ে দেন। দোকানগুলোতে বাইরের ক্রেতা কম। থানায় আগত ব্যক্তিদের সঙ্গে আপসরফা করতেই তাদেরকে এখানে ডেকে আনে দালালরা। তারা চা খাইয়ে গল্প শুরু করেন। এরপর সেখানে টাকা নিয়ে চলে যান থানার ভেতরে।

Special Newsশনিরআখড়া এলাকার যুবক সুমন ওই সময় সেখানে ঘোরাফেরা করছিলেন। কেন থানায় এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, তিনি থানায় কাজ করেন ও পুলিশের লোক। তাকে নানা প্রশ্ন করার এক পর্যায় তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন, তিনি পুলিশের সোর্স বা এই থানায় দালালি করেন। থানায় আগত ব্যক্তিদের সাথে টাকার বিষয়ে রফা করতেই তিনি সেখানে থাকেন। বিকেল থেকে শুরু হয় তাদের কার্যক্রম। চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

তার সাথে কথা বলার সময় অন্তত ১৫ জন উঠতি যুবক আসেন থানার গেটে ও বাইরে। তারা সবাই পুলিশের সোর্স ও দালাল হিসেবে কাজ করেন বলে জানালেন তিনি।

গেটের বাইরে সড়কে থাকা রিকুইজিশন করে আনা লেগুনা বা পুলিশের পিকআপ ভ্যান বসে থাকে সোর্স ও দালালরা। পুলিশের সাথে বেশ সখ্য তাদের।

এমআইকে/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর