স্থাপনাটির নাম ‘খেলারাম দাতার কোঠা’। ঢাকার জেলার নবাবগঞ্জের কলাকোপায় শত বছরের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে ঠিক কত বছর আগে এই স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়েছিল সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
খেলারাম দাতার কোঠাকে ঘিরে প্রচলিত আছে নানা গল্প। স্থানীয়দের মতে, খেলারাম জলদস্যু ছিলেন। সম্পদ লুট করে নিয়ে আসতেন এই কোঠায়। এই কোঠার নিচ দিয়ে ছিল সুড়ঙ্গ। সেই সুড়ঙ্গের অস্তিত্বের প্রমাণও মিলেছে। যদিও তা এখন বন্ধ।
বিজ্ঞাপন
প্রচলিত আছে, কোঠার সেই সুড়ঙ্গ দিয়ে প্রবেশ করে হারিয়ে গেছে একটি কুকুর, একটি বিড়াল ও দুইজন মানুষ। সেও শত বছর আগে। কথাগুলো সত্য কি মিথ্যা, তার সাক্ষ্য দেওয়ার মত কেউ এখন আর বেঁচে নেই। তবে লোকমুখে কথাগুলো প্রচার হয়ে আসছে যুগের পর যুগ।
কেউ আবার মনে করেন মাটির নিচ থেকে হঠাৎ করেই জেগে উঠেছে এই স্থাপনাটি। তাদের মতে এটি গায়েবি স্থাপনা।
কোঠার ভেতরে যাওয়ার প্রবেশপথ এখন একটি। বাকিগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ভরদুপুরের অনেকটা অন্ধকার থাকে উপরে যাওয়ার সিঁড়ি। চারদিকে বেশ নীরবতা। সরু সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতেই দেখা মেলে ছয়টি আলাদা আলাদা কক্ষের। হয়তো এখানে খেলারাম লুট করে আনা সম্পদ ভাগ-বাটোয়ারা করতেন।
কোঠার নির্মাণ শৈলী জানান দিচ্ছে সে আমলের নির্মাণ শ্রমিকদের দক্ষতা। কয়েকশ বছর আগে নির্মাণ করা এই কোঠার পরতে পরতে তখনকার মিস্ত্রীদের যোগ্যতার ছাপ। কোঠার দ্বারে অঙ্কিত রয়েছে ড্রাগনের প্রতিকৃতি।
বিজ্ঞাপন
কোঠার সামনের পুকুরটিও খেলারামের। এই পুকুর নিয়েও আছে নানা গল্প। এক সময় এই পুকুর থেকে নাকি ভেসে উঠত অতিথি আপ্যায়নের বাসন-কোসন।
তবে এ ধরনের কাহিনী নিছক গল্প বলে মনে করেন স্থানীয়রা। কোঠার ভেতরে গিয়ে কেউ হারিয়ে যাওয়া, কিংবা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা দেখেননি বলে জানান স্থানীয়রা।
কোঠার পাশের বাড়িটি নারায়ণ মণ্ডলের। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বহু বছর ধইরা এইখানে বসবাস করি। কোনো সময় তো দেখি নাই, কেউ গায়েব হইয়া গেছে বা এমন কোনো কর্ম হইছে।
কোঠার সামনের পুকুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্লেট উঠত, হাড়ি পাতিল উঠত অনেক বছর আগে। এখন আর ওঠে না। পানিও শুকাইয়া যায়, পানিও বেশি নাই।
স্থাপনাটি এখন সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধিভুক্ত। ছয় বছর ধরে এর নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন একজন নিরাপত্তাকর্মী। তার চোখে ধরা পড়েনি অস্বাভাবিক কিছু।
নিরাপত্তাকর্মী মতিউর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, গল্প মানুষের কাছ থেকে শুনি। এইটা গায়েবি উঠছে, ওইটা ডাইবা গেছে- এ রকম শোনা যায়। বাস্তবে এটা কেউ দেখে নাই। এই লোক (খেলারাম) নাকি ডাকাতি করত, জলদস্যু ছিল। পরে সব দান কইরা দিয়া দাতা হয়। খেলারাম দাতা।
কারই/জেএম