সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পিলখানা: ১৪ বছর আগের যে ট্রাজেডি আজও কাঁদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

পিলখানা: ১৪ বছর আগের যে ট্রাজেডি আজও কাঁদায়
ফাইল ছবি

রাত পোহালেই (২৫ ফেব্রুয়ারি) পিলখানা ট্রাজেডির বর্ষপূর্তি। ১৪ বছর আগে সংঘটিত ভয়াবহ সেই ট্রাজেডি আজও কাঁদায়। ২০০৯ সালের এই দিনে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতর পিলখানায় বিপথগামী সৈনিকরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

দিবসটি পালন করতে বিজিবি ও সেনাবাহিনী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফেরাত কামনায় পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দফতর এবং বিজিবির সব মসজিদ ও বিওপি পর্যায়ে সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় পবিত্র  কোরআন খতম, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে। দিবসটি পালনে বিজিবির সব স্থাপনায় বিজিবি রেজিমেন্টাল পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবির সকল সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবেন।


বিজ্ঞাপন


এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় শনিবার সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) ও শহীদদের নিকটাত্মীয়রা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

যা ঘটেছিল সেদিন

সেদিন বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তা ও জওয়ানরা বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সপ্তাহ উপলক্ষে এসেছিলেন পিলখানায়। আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিলখানায় বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে অংশ নেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত সদস্যদের মধ্যে ভালো কাজের জন্য পদক প্রদানের কথা ছিল। দরবার হলের সেই অনুষ্ঠানে প্রায় আড়াই হাজার বিডিআর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শেষে বাংলা অনুবাদ যখন শেষ হয় ঠিক তখনই সিপাহি মইন দরবার হলের রান্নাঘরের পাশ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মেজর জেনারেল শাকিলের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করেন। তৎকালীন অতিরিক্ত ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারিসহ অন্যান্য কর্মকর্তা মইনকে আটক করেন। মইনকে আটকের সাথে সাথে ‘জাগো’ বলে বিডিআর জওয়ানরা দরবার হল ত্যাগ শুরু করে।

ডিজি তখন তাদের উদ্দেশে বলেন, তাদের দাবি-দাওয়া শুনবেন তিনি। কিন্তু মুহূর্তেই দরবার হল শূন্য হয়ে যায়। একপর্যায়ে জওয়ানদের সবাই যখন দরবার হল ত্যাগ করে তখন বাইরে থেকে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু হয়। কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা কর্মকর্তাদের যাকে যেভাবে পেয়েছে হত্যা করেছে। অনেকে ভেতরেই কোথাও গোপন স্থানে অবস্থান নেন। সেসব স্থান থেকে তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়। লুটপাট অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপকর্মে মেতে ওঠে বিডিআর জওয়ানরা।


বিজ্ঞাপন


হত্যা মামলায় বিচারকাজ কতদূর?

পিলখানা ট্র্যাজেডির এই ঘটনায় ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা করেন তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক নবজ্যোতি খিসা। এছাড়া বিজিবির নিজস্ব আইনে ৫৭টি মামলায় সারাদেশে পাঁচ হাজার ৯২৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।

pilkhana2

২০১০ সালের ১২ জুলাই পিলখানা হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে সম্পূরক চার্জশিটে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর লালবাগে অবস্থিত আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে এ হত্যা মামলার রায় দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে ৮৫০ জন আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৭১ জনকে খালাস দেওয়া হয়। দুই থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২৬৬ জনকে।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়। আট জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ আসামি।

এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এখনো বিচারাধীন। মামলাটির আসামি রয়েছেন ৮৩৪ জন। এর মধ্যে ২৪ জন এরই মধ্যে মারা গেছেন। পলাতক রয়েছেন ২০ জন।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর