শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটনে পিবিআইয়ের সাফল্য

খলিলুর রহমান
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটনে পিবিআইয়ের সাফল্য
ফাইল ছবি

পরশ মনি। বয়স মাত্র ৯ বছর। নেত্রকোণা জেলার মদন থানার কদমশ্রী গ্রামের হাবিবুর রহমানের বড় মেয়ে। ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয়। পরদিন ভোর ৫টায় কদমশ্রী গ্রামের বুলবুল চৌধুরীর বাড়ির সামনের বিলের পাড় থেকে তার লাশ উদ্ধার করে মদন থানা পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করা হয় এবং এক বছরের বেশি সময় তদন্ত করে পুলিশ।

পরে জেলা সিআইডি মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় এবং এক বছরের বেশি সময় তদন্ত করে। কিন্তু রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। ২০২০ সালে মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হলে বাদীর নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে ২৬ নভেম্বর মামলাটির তদন্ত জেলা পিবিআইকে দেওয়া হয়। পিবিআই চাঞ্চল্যকর এই ক্লুলেস মামলাটির রহস্য উদঘাটন করে।


বিজ্ঞাপন


এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ও ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড, যা ছিল সম্পূর্ণ ক্লুলেস। নেত্রকোণা জেলা পিবিআই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং সরেজমিনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত আসামি জোবায়েরকে (২৩) সনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে পরশমনিকে হত্যার কথা স্বীকার করে সে।

PBIশুধু পরশ মনি হত্যাকাণ্ডই নয়, আরও বেশ কয়েকটি ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই।

সম্প্রতি মাটির নিচে ড্রামে পাওয়া কঙ্কালের পরিচয় সনাক্ত করে ছয় বছর আগের একটি হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন এবং আসামি গ্রেফতার করেছে পিবিআই।

পিবিআই জানায়, গত বছরের ৩০ মে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়ার বজলুর রহমানের বাউন্ডারি ঘেরা জায়গা ভবন নির্মাণের জন্য খনন করা হয়। এ সময় পরিত্যক্ত পুরাতন টয়লেটের রিং স্লাবের কুয়ার ভিতর একটি নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রামে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় পিবিআই যশোর জেলা ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।


বিজ্ঞাপন


পরবর্তীতে এ ঘটনায় জড়িত আসামি মো. সালামকে (৫৫) গ্রেফতার করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতার অভিযানসহ মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া স্বামীকে ফাঁসাতে টাঙ্গাইলের পারুল আক্তারকে খুন করে তারই বাবা- সাত বছর পর সেই রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই।

PBIপিবিআই জানায়, ২০১২ সালে কুদ্দুছ খাঁর মেয়ে পারুল আক্তার টাঙ্গাইলের কালীহাতির নাসির উদ্দিন বাবুকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। কিন্তু সেই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি বাবা আব্দুল কুদ্দুছ। তারপরও আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় একটি বাড়িতে সংসার শুরু করেন পারুল ও বাবু। তবে কিছুদিন পর তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। আর ওই সুযোগ নেন ঘাতক বাবা। ভালো ছেলে দেখে অন্য জায়গায় মেয়ের বিয়ে দেবেন- এমন আশ্বাসে টাঙ্গাইলে নিয়ে যান পারুলকে। এর মধ্যেই খুন হয় পারুল।

পরবর্তীতে পারুলের স্বামীকে আসামি করে মামলা করেন পারুলের বাবা। কিন্তু স্বামীর সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয় চারটি তদন্ত সংস্থা। চারবারই নারাজি দেন কুদ্দুছ খাঁ। সবশেষ আদালত জুডিশিয়াল তদন্ত করে রিপোর্ট দেন, বাদী ঢাকার আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পেতে পারেন।

গত ২৭ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে মামলা করেন কুদ্দুছ খাঁ। ওই মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে রহস্য উদঘাটন করে সংস্থাটি।

পিবিআই জানায়, ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় নদীর পাশে রাতের অন্ধকারে বাবাই তার এক বন্ধুর সহযোগিতায় মেয়ের হাত-পা বেঁধে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। লাশ ফেলে দেয়া হয় নদীতে। পরে এ ঘটনায় ঘাতক বাবাকে গ্রেফতার করা হলে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি।

 

শুধু ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডই নয়, নারী ও শিশু নির্যাতন, ডাকাতি, চুরি, প্রতারণা, ধর্ষণ, মাদকসহ বিভিন্ন মামলার তদন্তেও সাফল্য পাচ্ছে পিবিআই।

গত ৩০ জানুয়ারি বাগেরহাটে ফ্রি ফায়ার গেম খেলাকে কেন্দ্র করে বন্ধুর হাতে বন্ধু খুনের ঘটনায় মো. ফেরদৌস নামের এক কিশোরকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরে ওই মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়।

পিবিআই জানায়, ভিকটিম সাব্বির শেখ (১৫) পাতলা টু তেরখাদা রাস্তায় বেশিরভাগ সময় ভ্যান চালাত। গত ৯ জানুয়ারি সকালে ভ্যান চালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় সে। দুপুরে সাব্বিরের মা তাকে ফোন দিয়ে বাড়ি আসার কথা বলেন। কিন্তু সে বলে, আমি ভাড়া নিয়ে পাতলা টু তেরখাদা যাচ্ছি, আছরের দিকে আসব। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও সাব্বির বাড়িতে না আসায় মোবাইলে ফোন করলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে সাব্বিরের বাবা শেখ বোরহান ১১ জানুয়ারি তেরখাদা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাগেরহাটের মোল্লাহাট থানার ছোট কাচনা গ্রামের ওমরের মোড় সংলগ্ন শেখ ওবায়দুর রহমানের নির্মিত গোডাউনের নিচে ফাঁকা জায়গায় থেকে একটি পচাগলা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে স্বজনরা গিয়ে মৃতদেহ সনাক্ত করেন। এই ঘটনায় সাব্বিরের বাবা অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।

PBIথানা পুলিশের পাশাপাশি বাগেরহাট জেলা পিবিআইও মামলাটির ছায়া তদন্ত চলমান রাখে। ৩০ জানুয়ারি পিবিআই মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণ করে। এ ঘটনায় ফেরদৌস নামে এক কিশোরকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার মেঘনা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেখানো মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গামছা, ভিকটিমের ভ্যান গাড়ি ও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের অংশবিশেষ উদ্ধার ও জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফেরদৌস জানায়, ফ্রি ফায়ার খেলায় সাব্বির ফেরদৌসের কাছে পরাজিত হওয়ায় তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। ফেরদৌস প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ জানুয়ারি দুপুরে শিশু বায়েজিদের মাধ্যমে সাব্বিরকে ডেকে নেয় এবং গ্যারেজে সাব্বির গেম খেলা অবস্থায় ফেরদৌস পিছন থেকে গামছা গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ গ্যারেজের খাটের পাশে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখে। সাব্বিরের ভ্যান গাড়ি ও ব্যাটারি ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে দেয়।

পরে ১০ জানুয়ারি রাতে পার্শ্ববর্তী শেখ ওবায়দুর রহমানের গোডাউনের নিচে লাশ ফেলে আবর্জনা দ্বারা ঢেকে রাখে এবং নারায়ণগঞ্জে চলে যায়। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজি বনজ কুমার মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি যেন আসামি ও ভিকটিম ন্যায়বিচার পান। ন্যায়বিচারের কথা মাথায় রেখেই মামলা তদন্ত করা হয়। খুন, চুরি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ সব মামলা একই রকম গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয় বলে জানান তিনি।

কেআর/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর