শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

১৫ দিনের মধ্যে খাল পারের অবৈধ স্থাপনা না সরালে ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

১৫ দিনের মধ্যে খাল পারের অবৈধ স্থাপনা না সরালে ব্যবস্থা

মোহাম্মদপুরের লাউতলা-রামচন্দ্রপুর খালের পারের অবৈধ স্থাপনা ১৫ দিনের মধ্যে সরাতে সময় বেধে দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। 

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ ও ৩৪ নং ওয়ার্ডের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। 


বিজ্ঞাপন


মেয়র আতিক বলেন, 'খালের সীমানা নির্ধারণ করে পিলার বসানো হয়েছে। যে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে খালের পারে এই সীমানার বাইরেও তারা অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি করছে। তাদেরকে আমি বলেছি, খালের পারের অবৈধ স্থাপনা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নিজ দায়িত্বে আপনারা সরিয়ে নেবেন। নিজেরা অবৈধ স্থাপনা না সরালে আমরা বুলডোজার দিয়ে সেই স্থাপনা ভেঙে দেব। আজকেই আমরা ভাঙতাম। যেহেতু ওনারা বলেছেন ভেতরে প্রচুর পশু রয়েছে। তাই এই পশু সরানো চ্যালেঞ্জিং হবে। পশুগুলোও আমাদের সম্পদ। তাই এর ক্ষতি করা ঠিক হবে না। আমি তাদেরকে ১৫ দিন সময় দিয়েছি। এরপরে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।'

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, '৩৩ নং ওয়ার্ডে প্রচুর গরুর খামারীরা ব্যবসা করছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো খামারগুলোর গো-বর্জ্যসহ অন্যান্য সকল বর্জ্য খালে ফেলা হচ্ছে। আপনার দেখেছেন খালটি উদ্ধারের পর আমি গত বছর এই রামচন্দ্রপুর খাল পরিষ্কার করে দিয়েছিলাম। এটি আবার গো-বর্জ্য এবং অন্যান্য বর্জ্য দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে। ওনারা মনে করেছেন এরকম ভাবেই চলবে। আমার মনে হয় যারা ব্যবসা করবেন তারা অবশ্যই পরিবেশকে মাথায় রেখে ব্যবসা করতে হবে।' 

mayor

ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা হাউজিং, বসিলা গার্ডেন সিটি, দয়াল হাউজিং এলাকায় কয়েকটি খামার পরিদর্শন করেন। খামারের সকল বর্জ্য খালে ফেলে পানি দূষণ ও পরিবেশের ক্ষতি করায় একটি খামারকে মেয়রের উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন অঞ্চল-০৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ।


বিজ্ঞাপন


মেয়র আতিক বলেন, 'রামচন্দ্রপুর খাল একটি ঐতিহাসিক খাল ছিল। আমরা সেটি উদ্ধার করেছি। ময়লার কারণে খালটা আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখানে মাছের নয় মশার চাষ হচ্ছে। আমি স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি খামারের বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করতে পারলে অন্য জায়গায় এই খামার স্থানান্তর করতে হবে, খালের সীমানার মধ্যে যে স্থাপনা আছে তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে, খামারের গো-বর্জ্য ইটিপি ট্রিটমেন্ট করেই কেবল খালে ফেলা যাবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কাজকে আমি পারমিশন দেব না।'

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র আরও বলেন, 'রাজধানীর বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ঢাকার আশপাশের ইটভাটা। গবেষণা অনুসারে শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা ৫৮ শতাংশ দায়ী। এছাড়া সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলা দ্বারা ১৮ শতাংশ, যানবাহনের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জিনিসপত্র পোড়ানোর জন্য ৮ শতাংশ ও অন্যান্য কারণে ৬ শতাংশ বায়ু দূষিত হচ্ছে। ধুলাবালি নিবারণে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অত্যাধুনিক স্প্রে ক্যাননের মাধ্যমে পানি ছিটাচ্ছে। দুটি স্প্রে ক্যানন ডিএনসিসি এলাকার মহাসড়কে পানি ছিটানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিএনসিসির আওতাধীন পুরো এলাকার মহাসড়ককে দুটি ভাগে ভাগ করে একদিন অন্তর অন্তর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দুটি মেশিন দিয়ে পানি ছিটানো হচ্ছে। মহাসড়ক ছাড়াও ডিএনসিসি এলাকার অন্যান্য সড়কগুলোতে ১০টি ওয়াটার ব্রাউজার দিয়ে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে দুইবার পানি ছিটানো হয়। নির্মাণাধীন সড়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বেশি পরিমাণ পানি ছিটানো হয়।' 

বায়ু দূষণ বিষয়ে মেয়র আতিক আরও বলেন, 'আমাদের সিটি কর্পোরেশন থেকে নতুন যে টেন্ডার হবে এই টেন্ডারের মধ্যে যেন কমপ্লায়েন্স মেইন্টেন করে এমন একটি খাত ধরে কাজ করতে হবে। ঠিকাদারকে কমপ্লায়েন্সের জন্য তাদের বালি, পাথর ঢেকে রাখতে হবে। এ ধরনের একটা এগ্রিমেন্ট তাদের সাথে আমাদের করতে হবে। বড় বড় যে কনস্ট্রাকশনগুলো হচ্ছে, রাজউকের প্রতি আহ্বান- বাসাবাড়ির যে কনস্ট্রাকশনগুলো হচ্ছে সেগুলোর জন্য যেন একটি নোটিশ দেওয়া হয় এবং মনিটরিং করা হয়। আমাদের সিটি কর্পোরেশন থেকে আমাদের যে ঠিকাদারগুলো আছে তাদেরকে আমরা মনিটরিং করব।'

পরিদর্শন শেষে ৩৩ ও ৩৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সুযোগ-সুবিধার কথা ও সমস্যা জানতে স্থানীয় জনগণকে নিয়ে বসিলা কমিউনিটি সেন্টারে একটি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। 

mayor

মতবিনিময় সভায় রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য নগরবাসীকে প্রয়োজনীয় জায়গা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান ডিএনসিসি মেয়র। 

নগরের উন্নয়নে জনগণের সহযোগিতার বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আপনারা জায়গা দিন আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে রাস্তা করে দিব। অবৈধ দখলগুলো ছেড়ে দেন। আমরা রাস্তা, মাঠ ও পার্ক নির্মাণ করে দিব।'

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান, ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, অঞ্চল-০৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ৩৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ, ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রোকসানা আলম প্রমুখ। 

ডিএইচডি/এমএইচএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর