অন্যান্য বছরের মতো এবারও নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। তবে মেলাকে কেন্দ্র করে এবার শুরু থেকে দেখা দিয়েছে নানা বিতর্ক। প্রথমে আদর্শ প্রকাশনীর বই নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। পরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মৃদু বিরোধের খবর নিয়েও হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
সবশেষ গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইমেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য সতর্কতামূলক নির্দেশনায় ভুল বানানের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করে আয়োজক বাংলা একাডেমির।
বিজ্ঞাপন
অবশ্য এমনটিকে ছোট ভুল হিসেবে দেখার কথা বলেছেন কেউ কেউ। অবশ্য বাংলা একাডেমির সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করেন অনেকে।
দেখা গেছে, পুরো মেলা প্রাঙ্গণে বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকা স্পটগুলো হলুদ রঙের বক্সে আটকে হয়েছে। সেটার ছবি ঘুরছে ফেসবুকে। যেখানে দেখা যায় ‘বিপজ্জনক’ শব্দকে ‘বিপদজনক’ লেখা রয়েছে। যা নিয়ে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে বাংলা একাডেমিকে।
অবশ্য রোববার মেলায় ঘুরে যেসব জায়গায় এমন ভুল বানান ছিল তার বেশ কিছু জায়গায় অতিরিক্ত কাগজ দিয়ে ঠিক বানান লিখে রাখার দৃশ্য দেখা গেছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একজনকে বলতে শোনা যায়, ফেসবুকে না এলে ভুল বানানই রয়ে যেতো। তবে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চের পাশে রোববার রাতেও ভুল বানান দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
কামাল নামের একজন দর্শনার্থী আক্ষেপ করে বলেন, একপাশেরটা ঠিক করলেও অন্যদিকে যে ভুল রয়ে গেছে সেটা দেখার সময় পায়নি।
গত ১ ফেব্রুয়ারি ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’- প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া বইমেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী মেলায় আসছেন। আগতদের জন্য নানা নির্দেশনামূলক বার্তা বিভিন্ন জায়গায় লেখা রয়েছে।
শুরুর দিকে এমন ভুল বানানের লেখা মেলায় আসা প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ নূরুল হকের নজরে আসে। পরে তিনি ‘বিপদজনক’ লেখা ফেস্টুনের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেন, ‘বাংলা একাডেমির বইমেলায় বিপদের বাপ। কথা হলো বিপদের বাপটা কী?’
অন্যদিকে সাংবাদিক নাজমুল হুদা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশের’ একটি ফেস্টুনে ‘সমস্যা’ বানান ‘সম্যসা’ লেখার ছবি পোস্ট করেন। তাদের দুটো ছবি শেয়ার করে সালাহউদ্দিন মাহমুদ কিছুটা ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘কোনো কিছু বিপদজনক হলেই সম্যসা।’
পরে অনেকেই লেখাটি শেয়ার করে নানা কথাবার্তা বলেছেন। শব্দগত ভুল হলেও এ বিষয়ে আয়োজকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ।
এরপরই বিষয়টি নজরে এলে বানান ঠিক করার উদ্যোগ নেয় বাংলা একাডেমি।
এদিকে প্রথম সপ্তাহ শেষ হয়ে আসলেও কিছু কিছু স্টল এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি। রোববার রাতে সরেজমিন ঘুরে দেখা, অন্যবছরের মতো এবারও স্বনামধন্য লেখকদের বই যেসব প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় সেসব স্টলেই বইপ্রেমীদের বেশি ভিড়। অন্য স্টলগুলোতে খুব একটা ভিড় নেই।
অবশ্য বই না কিনলেও অনেকে পরিবার পরিজন ও বন্ধুদের নিয়ে মেলায় ঘুরে দেখছেন। চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ আবার একটু সুন্দর জায়গা পেলে ছবি তুলে নিচ্ছেন।
অন্যদিকে মেলার সার্বিক নিরাপত্তায় থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। তবে শেষ দিকে নিরাপত্তায় কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর এবারই প্রথম ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনেই শুরু হয়েছে একুশে বইমেলা, যাতে অংশ নিয়েছে ৬০১টি প্রতিষ্ঠান।
মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মেলায় থাকছে ৩৮টি প্যাভিলিয়ন।
বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবেন না।
ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিইউ/এইউ

