শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

সড়ক দখল করে ডাম্পিং স্টেশন

খলিলুর রহমান
প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:০৪ এএম

শেয়ার করুন:

সড়ক দখল করে ডাম্পিং স্টেশন

রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ধুলা-বালি পড়ে আর অযত্ন-অবহেলায় জং ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে কয়েকশ গাড়ি। দেখে মনে হয় যেন পুরনো যানবাহনের ভাগাড়। কোনো গাড়ির হেডলাইট ভাঙা, কোনো গাড়ির চাকা ফেটে গেছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় সৃষ্টি হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। গাড়ির চাকায় জমে থাকা পানিতে জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা।

শুধু তাই নয়, ভাঙ্গা গাড়িগুলো রাখার জন্য থানার পাশের প্রধান সড়ক দখল করেই তৈরি করা হয়েছে ডাম্পিং স্টেশন। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে দিন-রাত নিয়মিত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বন্ধের দিনগুলোতে দিনে যানজট কম থাকলেও অফিস ডে-তে নাজেহাল হতে হয় এই পথে চলাচলকারী ও এলাকাবাসীকে। তবে পুলিশের দাবি, নিরুপায় হয়ে সড়কে গাড়ি রেখেছেন তারা। মামলার আলামত হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ওই গাড়িগুলো জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাটারা থানার পুলিশ সদস্যরা।


বিজ্ঞাপন


police

স্থানীয়রা জানান, রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় ভাটারা থানার সামনে দীর্ঘদিন থেকে রাস্তা দখল করে রাখা হয়েছে গাড়িগুলো। বর্ষা আসলে থানা-সংলগ্ন ভাঙা গাড়িগুলোতে জমে থাকা পানিতে মশা ডিম পাড়ে। এতে মশার উৎপাত বৃদ্ধি পায়।

পুলিশ বলছে, জায়গার অভাবে গাড়িগুলো সরানো যাচ্ছে না। পরিত্যক্ত গাড়িতে মশা জন্ম নেওয়ায় নাজেহাল অবস্থা তাদেরও। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িগুলি মশার আঁতুড়ঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরাও।

গত শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সরেজমিনে থানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, ৩০-৩৫টি গাড়ি সড়কে পড়ে আছে। গাড়িগুলোর মধ্যে প্রাইভেটকারই বেশি। এছাড়া ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাসও আছে। প্রধান সড়কের অর্ধেকটা দখল করে রাখা হয়েছে এসব গাড়ি। একই অবস্থা থানার উত্তর পাশের সড়কের। তবে ওই সড়কটি পুরোই দখল করে গাড়ি রাখা হয়েছে। তাই সেই সড়কে কোনো গাড়ি চলাচল করে না। কোনো রিকশাও চলাচল করতে দেয়া হয় না সেই সড়ক দিয়ে। পুরো সড়ক দখল করে গাড়ি রাখার কারণে মানুষ হেঁটে চলাচল করতেও সমস্যা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


police

স্থানীয় সূত্র জানা যায়, এভাবে গাড়ি রাখার কারণে পথচারীরা অনেক সময় ভাঙ্গা গাড়িগুলোর ফাঁকে বসে প্রস্রাব করেন। সরেজমিনে এ ঘটনার সত্যতাও পাওয়া গেছে। পরিত্যক্ত একটি মাইক্রোবাসে লাগানো একটি পোস্টারে লেখা আছে; ‘এখানে প্রসাব করা নিষেধ। প্রসাব করিলে ১০০ টাকা জরিমানা।’ ঘোষণাটি থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সাঁটানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

কথা হয় পথচারী আবুল হোসেনের সাথে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, নগরবাসীকে যানজটমুক্ত রাখার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু পুলিশই রাস্তা দখল করে পরিত্যক্ত গাড়ি রেখে দিয়ে যানজটের সৃষ্টি করেছে। এতে মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়লেও কেউ কিছু বলতে পারছে না।

police

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানার পাশে এক যুগ আগের গাড়িও রয়েছে, যেগুলো এখন রীতিমতো কঙ্কাল। তবে জব্দ করা যানবাহনের বেশিরভাগের বৈধ কাগজপত্র নেই অথবা চোরাই। মামলার আলামত হিসেবে যানবাহনগুলো বছরের পর বছর থানার পাশের এই সড়কে পড়ে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য ঢাকা মেইলকে বলেন, দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হলেও আমাদের কিছু করার নেই। গাড়িগুলো বিভিন্ন মামলার আলামত। আদালত নির্দেশনা না দিলে আমাদের কিছু করার নেই।

police

তিনি আরও বলেন, অযত্নে খোলা জায়গায় পড়ে থাকা এসব যানবাহনের বেশিরভাগ চেনারও উপায় নেই। বিভিন্ন সময় সড়ক দুর্ঘটনা, চোরাই পণ্য, মাদকদ্রব্য বহনসহ বিভিন্ন অভিযোগে এসব গাড়ি জব্দ করা হয়েছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, গাড়িগুলো রাখার জায়গা না থাকায় সড়কের পাশেই রাখা হয়েছে।

police

থানার উত্তর পাশের সড়কটি পুরোপুরি বন্ধ করে গাড়ি রাখা হয়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই থানায় নতুন এসেছি। থানায় যোগদানের পর বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। গাড়িগুলো সড়ক থেকে সরানোর জন্য র‌্যাকার মেশিন নেই। সেই র‌্যাকার মেশিনের জন্য ডিএমপি সদর দফতরে একটি চিঠি দিয়েছি। মেশিনটি আসার পর গাড়িগুলো সরোনো হবে।

তবে গাড়িগুলো রাখার আলাদা জায়গা নেই জানিয়ে ওসি বলেন, গাড়িগুলোর রাখার জন্য আলাদা ডিপো থাকার কথা। কিন্তু ডিপো না থাকার কারণেই রাস্তায় রাখা হয়। আইন থাকলেও আমাদের সামর্থ নেই।

কেআর/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর