শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আত্মগোপন থেকে মাদরাসায় শিক্ষকতা করছিলেন যুদ্ধাপরাধী মজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

আত্মগোপন থেকে মাদরাসায় শিক্ষকতা করছিলেন যুদ্ধাপরাধী মজিদ

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আব্দুল মজিদকে মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল। তিনি দীর্ঘদিন থেকে আত্মগোপনে থেকে মাদরাসায় শিক্ষকতা করছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। 


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭০ সালে গঠিত জামায়াতে ইসলামীর পূর্বধলা থানার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আসামি মজিদ রাজাকারদের প্রধান বাহিনী আল-বদর পুর্বধলা রামপুর থানা কমিটির প্রধান ছিলেন।

র‍্যাব জানায়, পুর্বধলা রামপুর মৌদাম গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকসহ তার আপন দুই ভাই এবং পাঁচজন চাচাতো ভাই মুক্তিযোদ্ধা ছিল। এজন্য আল-বদর কমিটির প্রধান আব্দুল মজিদের শত্রুতে পরিণত হয় তারা। ১৯৭১ সালে ২১ আগস্ট দুপুরে আব্দুল মজিদ তার দলবল নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেকের বাড়িতে আক্রমন করে। সে সময় বাড়িতে অবস্থানরত আব্দুল খালেকসহ মুক্তিবাহিনীর সকলকে আসামি আব্দুল মজিদ ও তার সহযোগিরা নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের লাশটি পার্শ্ববর্তী কংস নদীতে ফেলে দেয় তারা এবং অপরাপর মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ কোকখালী নদীতে বস্তাবন্দি করে ফেলে দিয়ে আসে। এই হত্যাকান্ডের পাশাপাশি তারা আব্দুল খালেকের বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় মৃত আব্দুল খালেকের ভাই আব্দুল কাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে কোন রকমে প্রাণ বাঁচায়।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আব্দুল মজিদসহ চার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে আব্দুল কাদের। ওই মামলার তদন্তে আরও তিনজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত সাতটি অভিযোগই প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। পরে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল মোট সাতজন আসামীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় প্রদান করে।

rab


বিজ্ঞাপন


র‍্যাব আরও জানায়, বিচার চলাকালে এই মামলার দুইজন আসামি (আহম্মদ আলী ও আব্দুর রহমান) মারা যায় এবং রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় মারা যায় আরও দুই আসামি (রদ্দিন মিয়া ও আব্দুস সালাম বেগ)। ওই মামলার আরও দুইজন আসামি (আব্দুল খালেক তালুকদার ও কবির খাঁ) বর্তমানে পলাতক রয়েছে। এদিকে মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালীন ২০১৫ সালে আব্দুল মজিদ তার নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে এবং ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে। এরপর তার আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাদারীপুরে গিয়ে আত্মগোপন করে একটি কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে র‍্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল মাদারীপুর থেকে আব্দুল মজিদকে গ্রেফতার করে। 

লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, আসামি মজিদ ১৯৬৮ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাজাকার বাহিনীর পূর্বধলা আল-বদর থানা কমিটির প্রধান  হওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যোগসাজসে সে তার দল নিয়ে পূর্বধলা থানার বিভিন্ন গ্রামে অসংখ্য বাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কার্যক্রম চালায়।

তিনি আরও জানান, পূর্বধলা থানার মুক্তিবাহিনী মজিদ ও তার দলের অত্যাচারে অতিষ্ট ছিল। এভাবেই সে ১৯৭১ সালে ২১ আগস্ট আব্দুল খালেকের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে নৃশংসভাবে গুলি করে আব্দুল খালেক ও তার সহযোগী নয় জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধাদের শারীরিকভাবে অত্যাচার করার জন্য পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে হাত মিলিয়ে এই মজিদ পূর্ব মৌদাম গ্রামে একটি মুক্তি কয়েদখানা গড়ে তোলে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হতো এবং তাদের নৃংশসভাবে হত্যা করা হতো।

র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে চলমান মামলার শুনানিতে হাজিরা না দেওয়ায় আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরপরই আব্দুল মজিদ তার নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন চলে যায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে সে নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করত। এসময় পরিবারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সে অন্যের রেজিস্ট্রেশনকৃত সীমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। সে এবং তার ছেলে-মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত তাকে অর্থ প্রদান করত। আত্মগোপনে থাকাকালে সে সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলত।

কেআর/এমএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর