শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বেড়িবাঁধ যেন ধুলার রাজ্য

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩১ এএম

শেয়ার করুন:

বেড়িবাঁধ যেন ধুলার রাজ্য

বর্ষায় কাঁদায় পরিপূর্ণ থাকে রাজধানীর বাবুবাজার-গাবতলি বেড়িবাঁধ সড়ক। আর শুষ্ক মৌসুমে সে জায়গা দখল করে নেয় ধুলা। সাড়ে ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটিতে চলাচল যেন ধুলার সাথে যুদ্ধ করা।

এলোমেলো গাড়ি চলাচল, তিন চাকার বাহনের দৌরাত্ম্য, অবৈধ আর চলাচল অনুপযোগী সব গাড়ি চলার পথই যেন এই বেড়িবাঁধ। অবস্থা গুরুতর আকার ধারণ করেছে গাবতলী থেকে রায়েরবাজার বধ্যভূমি পর্যন্ত। এই সাড়ে চার কিলোমিটারে ধুলার প্রকোপ অসহনীয় আকার ধারণ করেছে। ধুলাবালি ও বায়ু দূষণের ভোগান্তি মাথায় নিয়ে প্রতিদিনই এই পথ ধরে চলাচল করতে হয় হাজার হাজার মানুষকে।


বিজ্ঞাপন


বেড়িবাঁধের শ্যামলি হাউজিং এলাকার বাসিন্দা আবদুল মমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ধুলার কথা আর বলে লাভ নাই। ভয়ানক অবস্থা। এর মধ্যে মানুষ থাকতে পারে?

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মো. শান্ত বলেন, বৃষ্টি দিনে কাঁদার জন্য চলা যায় না। আর বৃষ্টি যখন থাকে না তখন শুধু ধুলা।

এমন চরম বায়ু দূষণের মধ্য দিয়েই চলাচল করতে হয় পরিবহন শ্রমিকদের। রিকশাচালক সিরাজ মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, করোনায় মাস্ক পরি নাই। কিন্তু এই ধুলার কারণে মাস্ক পরা লাগে।

বেড়িবাঁধ সড়কের ইজিবাইক চালক মো. মামুন বলেন, ধূলার কারণে অনেক যাত্রী বেড়িবাঁধে ওঠে না। আমাদের যাত্রী কমে গেছে। আমাগো আর স্বাস্থ্যর কথা কইয়া লাভ কি? গরীবের দিকে কে দেখে?


বিজ্ঞাপন


dm

কেবল পথচারী নয়, ধুলার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবসাতেও। চায়ের দোকানি কবির হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আশপাশের কিছু লোক ছাড়া দোকানে কাস্টমার আসে না। ধুলার জ্বালায় তো নিজেরাই বসতে পারি না। কাস্টমার বসব ক্যামনে?

কেবল বেড়িবাঁধ নয়। অসহনীয় মাত্রার ধুলা ছড়িয়ে পড়েছে বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশেই। স্থানীয়দের বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না ধুলার হাত থেকে। খাবারেও মিশছে এই ধুলিকণা।

অথচ রাজধানীর বায়ু দূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা রয়েছে আদালতের। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি জনস্বার্থে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদের এক রিটের রায়ে আদালত এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। শুরুতে কিছুদিন এ দিয়ে তৎপরতা দেখা গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা থেমেও গেছে।

>> আরও পড়ুন: সনাতন পদ্ধতিতে বর্জ্য অপসারণে বাড়ছে বায়ু দূষণ

আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল- ১. ঢাকা শহরের মধ্যে যেসব ট্রাক বা অন্যান্য যানবাহনে বালি বা মাটি পরিবহন করা হয়, সেগুলো ঢাকনাযুক্ত করতে হবে। ২. যেসব জায়গায় নির্মাণ কাজ চলে সেসব স্থানে ঠিকাদারদের ঢাকনা দিয়ে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করতে হবে। ৩. ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর যে নির্দেশ ছিল, সে অনুযায়ী যেসব জায়গায় এখনও পানি ছিটানো হচ্ছে না, সেসব এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ৪. সড়কে মেগা প্রজেক্ট এবং কার্পেটিংয়ের যেসব কাজ চলছে, সেগুলো যেন আইন-কানুন এবং চুক্তির শর্ত মেনে করা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ৫. কালো ধোঁয়া ছাড়ে যেসব গাড়ি সেগুলো জব্দ করতে বলা হয়েছে। ৬. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরোনো হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৭. যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে, সেগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনও বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ। ৮. পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইকিলিং বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৯. মার্কেট এবং দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে হবে এবং মার্কেট ও দোকান বন্ধের পরে সিটি করপোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আদালতের এসব নির্দেশনা মানা হচ্ছে না বলে প্রতীয়মান হয়েছে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদের কাছে। বিষয়টি নিয়ে আবারও আদালতের দারত্ব হবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, রায় বাস্তবায়ন হলে তো আর এটা হয় না। ওই সময় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। পদক্ষেপ নেই দেখেই এখন সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা।

কারই/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর