শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বায়ু দূষণ রোধে ‘অ্যাকশন’ শুরু

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৭ এএম

শেয়ার করুন:

বায়ু দূষণ রোধে ‘অ্যাকশন’ শুরু

বায়ু দূষণ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। ঢাকায় গত মাসে (জানুয়ারি) সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বায়ুর মধ্যে কাটিয়েছেন নগরবাসী।সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার-এর তথ্য মতে, জানুয়ারিতে মোট ৯ দিন রাজধানীর বায়ুর মান দুর্যোগপূর্ণ ছিল, যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবারও (৩১ জানুয়ারি) ঢাকার বাতাসের মান ছিল ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। এদিন সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ২৯১ নিয়ে দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম স্থানে ছিল ঢাকা। রোববারও এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। এ বছরের জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই একাধিকবার এই তালিকায় সবার উপরে উঠে আসে ঢাকা।


বিজ্ঞাপন


একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত হলে ‘ভালো’। ৫১ থেকে ১০০ ‘মোটামুটি’, ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত ‘সতর্কতামূলক’, ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই মাত্রাকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। আর ৩০১-এর বেশি স্কোরকে ‘বিপজ্জনক’ বা দুর্যোগপূর্ণ বলা হয়।

বায়ু দূষণ এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টও।

এমন অবস্থায় বায়ু দূষণ রোধে বিশেষ অভিযান বা 'অ্যাকশনে' যাচ্ছে সরকার। আজ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকেই বিশেষ এই অভিযান পরিচালনা করবে সরকার। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদফতর বায়ু দূষণকারী প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের বিরুদ্ধে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে।

বায়ুদূষণ রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশ দিয়ে মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, অভিযানের সংখ্যা ও পরিধি বৃদ্ধির জন্য জরুরিভিত্তিতে আরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য পাঠানোর জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের কাছে অনুরোধ জানাতে হবে।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, দেশে বায়ু দূষণের এ পরিস্থিতি কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়। তাই বায়ু দূষণ রোধে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে কার্যকর আইনানুগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ সময় পরিবেশ মন্ত্রী জানান, বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনে তিনি অভিযানে অংশগ্রহণ করবেন। পরিবেশমন্ত্রী এসময় হাইড্রলিক হর্ন তথা শব্দ দূষণ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশ প্রদান করেন।

বায়ু দূষণের ক্ষতি ও বায়ু দূষণ রোধ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু সাত থেকে আট বছর কমে যাচ্ছে। বায়ু দূষণকে এইডসের মতো প্রাণঘাতী রোগের চেয়েও ভয়ঙ্কর মন্তব্য করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বায়ু দূষণ কমানো সম্ভব না।

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, সিটি করপোরেশন যে পানি ছিটাচ্ছে তাতে বড় রাস্তার ধুলাবালি কিছুটা কমবে। এখন যে অবস্থা তাতে ঢাকা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার অবস্থা আর নেই। মানে যে পরিমাণ দূষণ এখন হচ্ছে তা রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়। একমাত্র বৃষ্টি হলেই এই মাত্রা কমে আসতে পারে। উপায় একটা আছে, ঢাকার রাস্তায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করতে হবে, নির্মাণবিধি না মেনে যেখানে-সেখানে যেসব রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে উচ্চমাত্রার বায়ু দূষণের কারণে বছরে মারা যাচ্ছেন প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। একই সঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপির ক্ষতি হচ্ছে ৩ দশমিক ৯ থেকে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। পাশাপাশি বায়ুদূষণে উল্লেযোগ্যভাবে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণ এবং বিষণ্নতার ঝুঁকি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে দূষিত বিভাগ ঢাকা এবং সবচেয়ে কম দূষিত সিলেট। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে।

দূষণে প্রধান উৎস তিনটি উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথমেই আছে যানবাহনের ধোঁয়া। এরপরই রয়েছে শুষ্ক মৌসুমে অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামতের কারণে সৃষ্টি হওয়া ধুলা। এরপর দূষণের জন্য ইটভাটার ধোঁয়াকে দায়ী করা হয়েছে।

এদিকে, ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এ সময় বায়ু দূষণ রোধে নেয়া পদক্ষেপ আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি জানাতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, আপনারা কি আমাদের মেরে ফেলবেন নাকি? নির্দেশনা বাস্তবায়নে বারবার আপনাদের ডাকতে হয়। আমরা নিজেরাই লজ্জা পাচ্ছি।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) আদালতের নির্দেশনার কথা জানিয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেছেন, আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে আমরা একটি আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ পরিবেশ অধিদফতর, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উদ্দেশে এ কথা বলেছেন।

ডব্লিউএইচ/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর