বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর একযোগে ছয়টি সংসদীয় আসনে ভোট করতে যাচ্ছে। বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনুষ্ঠিত হবে ভোট। তবে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন শুরু থেকে সব ভোটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করলেও এবার তা হচ্ছে না। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে সিসি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখে ভোট বন্ধ করে ইতিহাস করলেও ‘নিরুত্তাপ প্রচারণার’ ভোট শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে নির্বাচন কমিশনের জন্য।
বিশেষ করে নানা কারণে আলোচনায় থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ভোটে উত্তাপ ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে খোদ স্থানীয়দের মাঝে। যেখানে একজন প্রার্থীর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার খবরে আতঙ্কও ছড়িয়েছে ওই আসনে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে- সিসি ক্যামেরা ছাড়া সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) উপনির্বাচনের ভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, যথারীতি সব প্রস্তুতি আছে। খালি একটাই নাই- সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করি নাই। বাকি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন করার জন্য যা যা করার দরকার সব ধরণের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটার এডুকেশন যথেষ্ট করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে বুধবার সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে ভোট হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই কমিশনার।
তবে ৬টি আসনের ভোট নিয়ে উৎসব-আমেজ নজর না কাড়লেও আলোচনার শীর্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের নির্বাচন। এই আসন থেকে পদত্যাগ করা বিএনপির সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। আর আসনটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। যদিও স্থানীয় আওয়ামী লীগ উকিল সাত্তারকে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছে। আর এই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ এখনো ‘নিখোঁজ’।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন- শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাত থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। যদিও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদকে কোনো বাহিনী তুলে নেয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। তিনি আত্মগোপনে আছেন বলেও ধারণা তাদের।
অন্যদিকে বগুড়ার দুইটি আসনেও আলোচনা হয়েছে অন্যভাবে। আলোচিত ইউটিউবার হিরো আলম এই দুই আসনে ভোটে লড়ছেন। প্রথমে প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর ইসিতে আপিল করেও যখন প্রার্থী হতে পারেননি, তখন উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি ভোটে লড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
যে ৬ আসনে ভোট
বুধবার অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ৬টি সংসদীয় আসনের ভোটের আসনগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও ৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। এসব আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে লড়বেন ৪০ জন। এরমধ্যে ১৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, বাকি ২৩ জন ১০টি রাজনৈতিক দলের। আর আসনগুলোতে মোট ভোটার ২২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে প্রার্থী আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও পাঁচবারের সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি।ৎ
এদিকে, বগুড়ার দুই আসন বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে সকাল সাড়ে ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ হবে। ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনের সামগ্রী পৌঁছানো হয়েছে। এখানকার দুই আসনে মোট ২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে বগুড়া-৬ আসনে ১১ জন এবং বগুড়া-৪ আসনে ৯ জন। এরমধ্যে বগুড়া-৬ আসনে ১৪৩ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১ হাজার ১৭ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ২ হাজার ৩৪ জন পোলিং অফিসার নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। আর বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৭৭৭ এবং ১ হাজার ৫৫৪ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
জানা গেছে, বগুড়ার দুই আসনের ২৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫৮টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ (অধিক গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারমধ্যে বগুড়া-৬ সদর আসনে মোট ১৪৩টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৯টি। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনেও মোট ১১২টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৭৯টি। এছাড়া দুই আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বগুড়া-৪ এর কাহালু উপজেলার ভোটকেন্দ্রগুলো। ওই উপজেলায় ৬৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৬টিই ঝুঁকিপূর্ণ। ওই আসনের নন্দীগ্রাম উপজেলার ৪৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর বগুড়া-৬ সদর আসনে ১৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে সাধারণ কেন্দ্র ৬৪টি। বাকি ৭৯টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।
বগুড়া-৬ (সদর) আসনে নৌকা নিয়ে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ, হিরো আলমসহ ১১ প্রার্থী আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মহাজোটের শরিক দল জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন মশাল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির ফারুক, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হিরো আলম, কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল, মোশফিকুর রহমান কাজলসহ ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই দুই আসনের উপনির্বাচনে ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটে ও ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে ১৬ প্লাটুন বিজিবি। এছাড়াও ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাড়ে ৪ হাজার নিরাপত্তা কর্মী কাজ করবেন। প্রতি ভোটকেন্দ্রে গুরুত্ব বিবেচনায় নিরাপত্তার জন্য ৩ জন পুলিশ সদস্য ছাড়াও এপিবিএন, আনসার ভিডিপিসহ ১৭ নিরাপত্তকর্মী কাজ করবেন। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ও নির্বাচনি এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের স্ট্রাকিং ফোর্স ও বিজিবি সদস্যরা টহল দেবেন।
এদিকে, ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) আসনে উপনির্বাচনে ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এই আসনে নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে রয়েছেন ১৪ দলীয় জোট থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির অধ্যাপক ইয়াসিন আলী (হাতুড়ি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) সিরাজুল ইসলাম (টেলিভিশন), জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ (লাঙল), জাকের পার্টির এমদাদ হোসেন (গোলাপ ফুল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সাফি আল আসাদ (আম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় (একতারা)। এই আসনে প্রতিটি কেন্দ্রে চারজন অস্ত্রধারী পুলিশ দুইজন মহিলা পুলিশ আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া সাত প্লাটুন বিজিবি সদস্য, ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী এলাকা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখবেন। পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলার দুটি পৌরসভাসহ ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-৩ আসন।
অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ আসনের উপনির্বাচন ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। পুলিশ সুপার (এসপি) এএইচএম আবদুর রকিব জানিয়েছেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী। মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ পাঁচ হাজার ৪৫০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ এক হাজার ১৭০ জন ও নারী ভোটার দুই লাখ চার হাজার ২৮০ জন। আর ভোটকেন্দ্র ১৮০টি। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ছয় হাজার ১৪৯জন ও নারী ভোটার দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩৪৬ জন। ভোট কেন্দ্র ১৭২টি।
বিইউ/আইএইচ
