শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

যেভাবে গ্রেফতার হলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী ২ আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

যেভাবে গ্রেফতার হলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী ২ আসামি

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মোখলেসুর রহমান মুকুল আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনের সময় তাদের পরিবার থেকে অর্থ দেওয়া হতো। তবে আত্মগোপনে থাকাকালে তারা সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে গতকাল রাতে রাজধানীর দক্ষিনখান ও আশুলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেলনের র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের ইউনুছ আলী নামক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নদী পারাপারে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা জুন-জুলাইয়ের দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের আহমেদাবাদে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযুদ্ধা ইউনুছ আলীকে রাজাকারদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ইউনুস আলীর ছেলে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় উভয়ের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযুক্ত দুইজন আসামি রায়ের পূর্বে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে এবং গত ২৩ জানুয়ারি নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ, সাতজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন। পরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র‌্যাব। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার নকিব হোসেন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে। সে ১৯৭১ সালে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নকিব হোসেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সাথে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছেন বলে দাবি র‌্যাবের।

র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেফতার নকিব হোসেন ২০১৫ সালে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিল। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে সে আত্মগোপনে চলে যায়। এসময় সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে ময়মনসিংহের নিজ এলাকা ত্যাগ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে এবং একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করে। সর্বশেষ সে ঢাকার দক্ষিণখান এলাকায় বসবাস করে আসছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে সে নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করত। এসময় পরিবারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সে অন্যের রেজিস্ট্রেশনকৃত সিমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। সে এবং তার ছেলে-মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত তাকে অর্থ প্রদান করত। আত্মগোপনে থাকাকালে সে সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলত।
 
এছাড়া গ্রেফতার মোখলেছুর রহমান মুকুল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে। সে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ত্রিশাল এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মোখলেছুর রহমান ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সাথে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। 


বিজ্ঞাপন


র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার মোখলেছুর রহমান ২০১৫ সালে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিল। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে সে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে ময়মনসিংহে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ২০১৭ সাল থেকে ঢাকার আশুলিয়া ইপিজেড এলাকায় বিভিন্ন ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে সে একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করেছে। এসময় সে তার এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখত। তার ছেলে মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত তাকে অর্থ প্রদান করত। আত্মগোপনে থাকাকালে সে সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলত।

কেআর/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর